‘দেশে সংস্কৃতিচর্চা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে’

বিবৃতিপ্রতীকী ছবি

চট্টগ্রামে ‘গানে গানে সংহতি সমাবেশ’ অনুষ্ঠান আয়োজনে পুলিশের অনুমতি না দেওয়ার সমালোচনা করে বিবৃতি দিয়েছেন নগরের শিল্পী, সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ ও নাট্যকর্মীরা। বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়,  সংস্কৃতিচর্চা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

এই বিবৃতিতে সই করেছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন, অধ্যক্ষ রীতা দত্ত, নাট্যজন শিশির দত্ত, কবি ও সাংবাদিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী, ওমর কায়সার, কামরুল হাসান বাদল, অধ্যাপক জাহেদ আলী চৌধুরী, অধ্যাপক আদনান মান্নান, অধ্যাপক ও নাট্যজন অসীম দাশ, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের অধ্যাপক তৌফিক সাঈদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মৌরি দে, রবীন্দ্র ও নজরুলসংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তিশিল্পী এবং নাট্যকর্মীরা।

আজ শনিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, পুলিশ ও প্রশাসন তথা সরকার সাংস্কৃতিক পরিসর রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা নেবে। দেশে সংস্কৃতিচর্চা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বারবার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, যা গভীর উদ্বেগজনক।

এর আগে আজ বেলা সাড়ে তিনটায় চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ‘গানে গানে সংহতি-সমাবেশ’ আয়োজনের কথা ছিল। কিন্তু অনুমতি না পাওয়ায় কর্মসূচি থেকে সরে আসতে বাধ্য হন আয়োজকেরা।

সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাউলশিল্পী, ছায়ানট, উদীচীসহ সাংস্কৃতিক সংগঠন, সংবাদপত্র অফিস, সাংবাদিক ও শিল্পীদের ওপর একের পর এক হামলার প্রতিবাদে এই কর্মসূচির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। ঢাকায় অনুরূপ কর্মসূচির পর এর ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রামে শুধু গান গেয়ে সংহতি জানানোর পরিকল্পনা ছিল সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর।

বিবৃতিতে বলা হয়, আজ শুধু গান গেয়ে সংহতি জানানোর কর্মসূচি ছিল। কিন্তু পুলিশ প্রশাসন পূর্বানুমতির অজুহাত দিয়ে এবং গতকাল ফরিদপুর জেলা স্কুলে সংগীত আয়োজন ঘিরে ঘটে যাওয়া ঘটনার সূত্র ধরে নিরাপত্তার কথা বলে আয়োজনকে নিরুৎসাহিত করে। রাস্তার পরিবর্তে শিল্পকলার মাঠে সংহতি সমাবেশের আয়োজন করতে চাইলেও ‘নিরাপত্তার’ কথা বলে অনুষ্ঠান না করার জন্য বলেন পুলিশ কর্মকর্তারা। ফলে সামগ্রিক প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও ‘গানে গানে সংহতি-সমাবেশ’ করা সম্ভব হয়নি। যাতে প্রতীয়মান হয়, প্রতিবাদ জানানোর পরিবেশও অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও আশঙ্কার। এর আগেও ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ‘বিজয় শোভাযাত্রা’ আয়োজনের উদ্যোগ নেয় সচেতন নাগরিক সমাজ চট্টগ্রাম। সেবারও পুলিশের অনুমতি না মেলায় কর্মসূচিটি বাতিল হয়ে যায়।

বিবৃতিতে বিশিষ্ট নাগরিকেরা বলেন, প্রত্যেক নাগরিকের মতপ্রকাশের অধিকার আছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব হলো সেই অধিকার সুরক্ষিত করা। অথচ আগে থেকে তথ্য থাকা সত্ত্বেও রাজধানীতে সাংস্কৃতিক সংগঠন ও গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে হামলা ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে প্রশাসন, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও গণমাধ্যমে হামলার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। সংস্কৃতিচর্চা ও মতপ্রকাশের পথে কোনো ধরনের বাধা বা নিরাপত্তাঝুঁকি থাকলে, তা দূর করাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব। অন্যথায় স্বাধীন মতপ্রকাশ ও সুস্থ সংস্কৃতিচর্চা বাধাগ্রস্ত হয়ে উগ্রবাদী অশুভ শক্তির উত্থানকেই উৎসাহিত করবে।

জানতে চাইলে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাবুল আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ফরিদপুরসহ নানা ঘটনা মাথায় রেখে নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করা হয়েছে। আয়োজকেরা আগে থেকে অনুমতি নেননি। অনুমতি নিলে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হতো।