জামিনে বের হয়েই স্বতন্ত্র প্রার্থীর দুই সমর্থকের হাত-পা ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ

নাটোরের গুরুদাসপুরে হামলায় গুরুতর আহত স্বতন্ত্র প্রার্থীর এক সমর্থককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে গুরুদাসপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেছবি: প্রথম আলো

নাটোরের গুরুদাসপুরে নৌকার ৮ সমর্থকের বিরুদ্ধে জামিনে ছাড়া পেয়েই নাটোর-৪ (গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আসিফ বিন আবদুল্লাহ ওরফে শোভনের দুই সমর্থকের হাত-পা ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপজেলার নাজিরপুর বাজারের গোডাউন মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

গুরুতর আহত ওই দুই সমর্থক হলেন নাজিরপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক শরীফুল ইসলাম (৩৭) ও স্থানীয় বাসিন্দা সেরাজুল ইসলাম (৩৫)। তাঁদের গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, শরিফুলের বাঁ পা এবং সেরাজুলের ডান পা ও বাঁ হাত ভেঙে গেছে। মুমূর্ষু অবস্থায় সেরাজুলকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। শরিফুলকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

পুলিশ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোমবার সন্ধ্যায় নাজিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সামনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর আরেক সমর্থক জালাল উদ্দিন শাহকে (৫৮) পিটিয়ে জখম করেন নৌকার ৮ সমর্থক। এ ঘটনায় গতকাল রাতেই জালাল উদ্দিন বাদী হয়ে স্থানীয় আলামিন হোসেন (২৬), জাহাঙ্গীর হোসেন (৪০), ইউপির সদস্য আলম হোসেন (৩৮), রাসেল (২৫), জেকের আলী (৫০), নিজাম হোসেন (৪২), রুবেল হোসেন (৩৬) ও আরিফুল ইসলামকে (৩৫) আসামি করে গুরুদাসপুর থানায় একটি মামলা করেন। পুলিশ জেকের আলীকে গ্রেপ্তার করে মঙ্গলবার দুপুরে কারাগারে পাঠায়। মঙ্গলবার সব আসামি জামিন পান।

ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের অভিযোগ, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা নাজিরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান আইয়ুব আলীর অনুসারী এবং নৌকার প্রার্থী সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারীর সমর্থক। আজ নাজিরপুর বাজারে স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয়ে যাওয়ার পথে তাঁদের পথ রোধ করে তাঁরা বেধড়ক মারপিট করে হাত-পা ভেঙে দেন। এ ঘটনায় তাঁরা মামলা করবেন।

স্বতন্ত্র প্রার্থীর অনুসারী নাজিরপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান শওকত রানা বলেন, অভিযুক্তরা বর্তমান চেয়ারম্যান আয়ুব আলী ও তাঁর ভাই নজরুল ইসলামের ছত্রচ্ছায়ায় থেকে এলাকায় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করেন। তাঁদের বিরুদ্ধে অনেক মামলাও আছে। নির্বাচন ঘিরে আবার তাঁরা সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। তাঁদের লাগাম দেওয়া না গেলে স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রচারণায় বিঘ্ন ঘটার শঙ্কা আছে।

অভিযোগের বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী মুঠোফোনে বলেন, অভিযুক্তরা তাঁর অনুসারী হলেও ঘটনার সময় তিনি পরিষদে ছিলেন না। যত দূর জেনেছেন, ভুক্তভোগীরা ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কোন্দলে জড়িয়েছেন। এখন স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থক হয়ে নিজেকে রক্ষার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

তবে ইউপি চেয়ারম্যানের দাবি নাকচ করে ভুক্তভোগী শরীফুল ইসলাম ও সেরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আইয়ুব আলী মুঠোফোনে নৌকার পক্ষে কাজ করার কথা বলেছিলেন। তাঁর কথায় সায় না দেওয়ায় আজ লোকজন দিয়ে আমাদের হাত-পা ভেঙে দিয়েছেন।’

জানতে চাইলে স্বতন্ত্র প্রার্থী আসিফ আবদুল্লাহ বিন কুদ্দুস বলেন, তাঁর বাবা আবদুল কুদ্দুস এ আসনে পাঁচবারের সংসদ সদস্য এবং তিন মেয়াদে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ৩০ আগস্ট তাঁর বাবার মৃত্যুর পর নির্বাচনী এলাকার নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের সমর্থনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এ জন্য তাঁর বাবার বিরোধীরা তাঁকে মেনে নিতে পারছেন না। এখন তাঁর কর্মী-সমর্থকদের ভয়ভীতি দেখানোসহ মারধর করা হচ্ছে, যাতে নির্বাচন থেকে তিনি সরে যান।

গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজ্জল হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে কাজ করছে পুলিশ।