সন্ত্রাসী নিয়ে আসামি ধরে বদলি দুই এসআই, ফেরানোর দাবিতে মানববন্ধন

নাটোর সদর থানার সামনে মঙ্গলবার দুপুরে দুই এসআইয়ের বদলি আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন হয়
ছবি: সংগৃহীত

সন্ত্রাসীদের সঙ্গে নিয়ে আসামি ধরতে যাওয়ার ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর নাটোর সদর থানা থেকে বদলি করা দুই উপপরিদর্শককে (এসআই) ফিরিয়ে আনার দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে। ওই সন্ত্রাসীরাই লোকজন জড়ো করে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে থানার সামনে মানববন্ধন করেছেন বলে অভিযোগ।

দুই এসআই হলেন এ জে মিন্টু ও মো. আরিফুল ইসলাম। মিন্টুকে বাগাতিপাড়া থানায় এবং আরিফুলকে নলডাঙ্গা থানায় বদলি করা হয়েছে। তাঁরা নতুন কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন।

দুই এসআই নাটোর পৌর যুবলীগের নেতা বাপ্পীকে কুপিয়ে আহত করার মামলার আসামি মো. ময়েনকে গ্রেপ্তার করতে বাগাতিপাড়ায় গিয়েছিলেন। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া অভিযানের কিছু ছবিতে দেখা যায়, হাতকড়া পরা ময়েনের ডান পাশে কালো পলো শার্ট পরা পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী গোলাম কিবরিয়া ওরফে সেলিম ও তাঁর কয়েকজন অনুসারী। পাশে এসআই এ জে মিন্টু ও আরিফুল ইসলাম। পরে পুলিশ সুপার (এসপি) দুই এসআইকে বদলি করেন।

গতকাল দুপুরে ১৫ থেকে ২০ জন হাতে ফেস্টুন নিয়ে নাটোর সদর থানা ভবনের ফটকের সামনে মানববন্ধন করেন। তাঁরা এসআই এ জে মিন্টু ও আরিফুল ইসলামকে ফিরিয়ে আনার দাবি জানান। মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী আসাদুল ইসলাম ওরফে আসাদ। তাঁর বিরুদ্ধে সদর থানায় অন্তত তিনটি মামলা আছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

মানববন্ধন শুরুর আগে আসাদুল ইসলাম ও গোলাম কিবরিয়া সাংবাদিকদের কল করে তাঁদের আয়োজনের কথা জানান। কল পেয়ে সেখানে যাওয়া যমুনা টেলিভিশনের সাংবাদিক নাজমুল হাসান বলেন, গোলাম কিবরিয়া তাঁকে কল করে মানববন্ধনের বিষয়ে জানান। তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে কয়েকজনের কাছে জানতে চান, কী কারণে এই মানববন্ধন। অন্তত তিনজন বলেন, তাঁরা কী জন্য মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছেন, তা জানেন না। আসাদুল বলায় তাঁরা এসেছেন।

গোলাম কিবরিয়া পুলিশের অভিযানে সঙ্গে থাকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘দেশের একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে আমি পুলিশকে সহায়তা করেছি। এতে তো দোষের কিছু দেখছি না।’

আসাদুল বলেন, ‘বদলি হওয়া দারোগাদের আমি ভালোবাসি। তাঁরা আমার অনেক উপকার করেছেন। হারানো মোবাইল বের করে দিছেন। মামলায় সহযোগিতা করেছেন।’

এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য কল করা হলে এসআই এ জে মিন্টু ও আরিফুল ইসলাম ফোন ধরেননি। তবে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাছিম আহমেদ বলেন, মানববন্ধনের ঘটনাটি তিনি জানতেন না। পরে দুই কর্মকর্তার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তাঁরা বলেন, মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা হয়তো তাঁদের মাধ্যমে উপকৃত হয়েছেন। এ কারণে নিজে থেকে মানববন্ধন করেছেন।

নাটোরের পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলাম আজ বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। বিস্তারিত তথ্য-প্রমাণ পেলে তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আসামি ধরার সময় পুলিশের সঙ্গে ছিলেন গোলাম কিবরিয়া (বাঁ থেকে তৃতীয়)
ছবি: সংগৃহীত

এ ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে নাটোরের মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবী আবদুল ওহাব বলেন, পুলিশের অভিযানে চিহ্নিত অপরাধীদের অংশগ্রহণ এবং বদলি হওয়া পুলিশ কর্মকর্তাকে পুনর্বহালের দাবিতে মানববন্ধন—দুটি ঘটনা আইনের শাসনের পরিপন্থী।