মাদারীপুরে শতবর্ষী বটগাছ কেটে ফেলার ঘটনায় তদন্ত কমিটি
মাদারীপুরে শতবর্ষী বটগাছ কেটে ফেলার ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে উপজেলা প্রশাসন। এতে সামাজিক বনায়ন ও নার্সারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলমকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আজ বুধবার দুপুরে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াদিয়া শাবাব স্বাক্ষরিত চিঠিতে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর আগে গত সোমবার সদর উপজেলার শিরখাড়া ইউনিয়নের আলমমীরের কান্দি এলাকায় কুমার নদের পাড়ে থাকা বটগাছটির ডালপালাসহ বেশির ভাগ অংশ কাটা হয়।
ইউএনওর চিঠিতে বলা হয়, শিরখাড়া ইউনিয়নের আলমমীরের কান্দি এলাকায় প্রাচীন একটি বটগাছে স্থানীয় কিছু লোক মোমবাতি প্রজ্বালনসহ মানত করে থাকেন। স্থানীয় আলেমদের মতে, ওই বটগাছে মোমবাতি প্রজ্বালন ও মানত করা শিরকের অন্তর্ভুক্ত কাজ বিধায় স্থানীয় আলেমরা বটগাছের আংশিক কর্তন করেছেন। বটগাছ কর্তনের অভিযোগের বিষয়ে সরেজমিনে তদন্ত করার জন্য তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো। কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার পর দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও ইউএনওর চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোর অনলাইনে ‘মাদারীপুরে শিরক আখ্যা দিয়ে কাটা হলো শতবর্ষী বটগাছ’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। শতবর্ষী বটগাছটি কাটায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা–সমালোচনা হচ্ছে। বেশির ভাগ মানুষ গাছ কাটার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এ ঘটনার জন্য সামাজিক অবক্ষয়কে দায়ী করেছেন অনেকে।
ফেসবুকে কাজী নাজমুল আলম নামের এক ব্যবসায়ী লিখেছেন, ‘শতবর্ষী পুরোনো বটগাছটি কেটে ফেললেন? কী অপরাধ ছিল এই গাছটির? মানুষ শিরক করে, সেই অপরাধ কি গাছের? মানুষকে বোঝাতে পারলেন না শিরকের অপরাধ সম্পর্কে, তাই কি বলি হতে হবে এই পুরোনো বটগাছটিকে?’ আবু সালেহ নামের একজন লিখেছেন, ‘যে গাছটা হয়তো অনেক পথিকের ছায়া ছিল, গ্রামের ইতিহাসের অংশ ছিল, সেই গাছটি কেটে ফেলা হয়েছে শিরক আখ্যা দিয়ে। ধর্মের নামে এক ভয়ংকর ভ্রান্ত ব্যাখ্যা। একটা জীবন্ত বৃক্ষ এখন নিরাপদ নয়!’
প্রশাসন ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আলমমীরের কান্দি এলাকার কুমার নদের পাড়ে সত্তার হাওলাদারের মালিকানাধীন জমিতে প্রাকৃতিকভাবে শতবর্ষী বটগাছটি বেড়ে ওঠে। দুই দশকের বেশি সময় ধরে গাছটি ঘিরে এলাকাবাসীসহ আশপাশের লোকজনের মধ্যে নানা বিশ্বাস ও কৌতূহল তৈরি হয়। রোগবালাই থেকে আরোগ্য কামনা করে কেউ কেউ গাছটির নিচে মোমবাতি ও আগরবাতি জ্বালান। কেউ কেউ বিপদ থেকে বাঁচতে মানত করেন। বিশেষ করে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবে বটগাছের নিচে ফুল দিয়ে পূজা করেন। এ কারণে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি শিরক আখ্যা দিয়ে গাছটি কাটার উদ্যোগ নেন।
মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াদিয়া শাবাব বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসন বটগাছটি কাটা বন্ধ করেছে। গাছটিতে আর হাত দেওয়া হবে না। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমরা এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটি এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করবে। তারপর দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির প্রধান ও মাদারীপুর সামাজিক বনায়ন ও নার্সারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, স্থানীয় কিছু লোক এ গাছটিকে শিরক আখ্যা দিয়ে কাটতে উদ্যত হয়েছেন। তবে গাছের মালিক দাবি করেছেন, তিনি ওই ব্যক্তিদের কাছে গাছটি ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি করেছেন। গাছটি নদীর জমিতে নাকি ব্যক্তিমালিকানার জমিতে, এসব বিষয় তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া যাঁরা গাছটিকে শিরক আখ্যা দিয়ে বলি দিয়েছেন, তাঁদেরও চিহ্নিত করার কাজ চলছে।