পাগলা মসজিদের সিন্দুক খুলে পাওয়া গেল ৩৫ বস্তা টাকা, স্বর্ণালংকার ও বৈদেশিক মুদ্রা

আজ সকাল ৭টা থেকে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্যদের উপস্থিতিতে পাগলা মসজিদের দান সিন্দুক খোলা শুরু হয়। পরে মেঝেতে ঢেলে চলছে গণনার কাজছবি: প্রথম আলো

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের ১৩টি দান সিন্দুক আজ শনিবার খুলে পাওয়া গেছে অন্তত ৩৫ বস্তা টাকাসহ স্বর্ণালংকার ও বৈদেশিক মুদ্রা। গতবারের তুলনায় এবার কম সময়ে—তিন মাস ২৭ দিন পর সিন্দুক খোলা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, দানের পরিমাণ অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে। সকাল ৭টার দিকে সিন্দুক খোলার পর এখন চলছে গণনার কাজ।

এর আগে চলতি বছরের ৩০ আগস্ট ৪ মাস ১৮ দিন পর মসজিদের দানবাক্সগুলো খোলা হয়েছিল। ওই সময় মোট ১২ কোটি ৯ লাখ ৩৭ হাজার ২২০ টাকা পাওয়া যায়। এ ছাড়া মিলেছিল বৈদেশিক মুদ্রা, সোনার গয়না ও হিরা।

আজ সকাল ৭টা থেকে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্যদের উপস্থিতিতে পাগলা মসজিদের দানের সিন্দুক খোলা শুরু হয়। প্রথমে লোহার সিন্দুকগুলো থেকে টাকা বের করে বস্তায় ভরা হয়, পরে মেঝেতে ঢেলে চলছে গণনার কাজ। জেলা প্রশাসক ও মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আসলাম মোল্লা ও পুলিশ সুপার এস এম ফরহাদ হোসেনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এ কার্যক্রম চলছে।

এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজাবে রহমত, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খানসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট ও প্রশাসনের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। গণনা কার্যক্রমে রূপালী ব্যাংকের প্রায় এক শ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী, আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়া ও পাগলা মসজিদের এতিমখানাসহ দুটি মাদ্রাসার প্রায় সাড়ে তিন শ শিক্ষার্থী এবং মসজিদ কমিটি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ প্রায় পাঁচ শ জন অংশ নিচ্ছেন।

গণনা কার্যক্রমে ব্যাংক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ প্রায় পাঁচ শ জন অংশ নিচ্ছেন
ছবি: প্রথম আলো

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আসলাম মোল্লা বলেন, পাগলা মসজিদ ও ইসলামি কমপ্লেক্সের দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহের পর অবশিষ্ট দানের টাকা ব্যাংকে জমা রাখা হয়। বর্তমানে ব্যাংকে নগদ হিসেবে ১০৪ কোটি টাকার বেশি জমা আছে। পাশাপাশি অনলাইনে দান করা আরও ১২ লাখ টাকার বেশি অর্থ আছে। আজ গণনা শেষে এসব টাকাও ব্যাংকে জমা দেওয়া হবে। দান করা বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালংকার জেলা প্রশাসনের ট্রেজারিতে সংরক্ষিত আছে। সময় ও সুযোগ বুঝে এগুলো নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থও মূল তহবিলে যুক্ত করা হবে।

জেলা প্রশাসক জানান, পাগলা মসজিদের জমাকৃত অর্থ থেকে জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানায় অনুদান দেওয়া হয়। পাশাপাশি অসহায় ও জটিল রোগে আক্রান্ত মানুষের চিকিৎসাসহায়তাসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডেও এই অর্থ ব্যয় করা হয়।

দান সিন্দুক খোলা থেকে শুরু করে টাকা গণনা এবং ব্যাংকে জমা দেওয়া পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়ায় কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানান পুলিশ সুপার এস এম ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেন, পুলিশের পাশাপাশি অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন। গণনার দিন ছাড়াও সারা বছর দান সিন্দুকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।

কিশোরগঞ্জ শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত পাগলা মসজিদ জেলার অন্যতম ঐতিহাসিক স্থাপনা। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষ নিয়মিত এখানে দান করতে আসেন। টাকাপয়সার পাশাপাশি স্বর্ণালংকার, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগিসহ নানা ধরনের জিনিসও দান করা হয়।

বৈদেশিক মুদ্রা, সোনার গয়না ও অন্য সামগ্রীর গুছিয়ে রাখার কাজ চলছে
ছবি: প্রথম আলো

মসজিদ কর্তৃপক্ষ জানায়, আধুনিক তুরস্কের বসফরাস প্রণালির পাশের মাল্টিপারপাস মসজিদগুলোর আদলে পাগলা মসজিদকে কেন্দ্র করে একটি বৃহৎ ইসলামি কমপ্লেক্স গড়ে তোলার পরিকল্পনা আছে। প্রায় ১০ তলা বিশিষ্ট এ ভবনে একসঙ্গে ৪০ থেকে ৫০ হাজার মুসল্লির নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা থাকবে। পাশাপাশি নারী মুসল্লিদের জন্য আলাদা জায়গা, এতিমদের শিক্ষাব্যবস্থা, মাদ্রাসা, লাইব্রেরি, ক্যাফেটেরিয়া ও আইটি সেকশনসহ বিভিন্ন সুবিধা থাকবে। জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।