‘হাঁকডাক, যত্নআত্তি বাড়িয়ে দিয়েছি, তবু লোক তো হচ্ছে না’

বিএনপি ও বিরোধীদের ডাকা ৪৮ ঘণ্টার হরতালের দ্বিতীয় দিনে খুলনার খুলনায় দূরপাল্লা ও অভ্যন্তরীণ রুটের গাড়িতে যাত্রীখরা আগের মতোই আছে। আজ বেলা ১১টার দিকে খুলনার সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

‘একদমই যাত্রীর চাপ নাই। অবরোধের প্রথম দিক থেকেই যাত্রী কমেছে। পরিস্থিতির কোনো উন্নতি নাই। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে। যাত্রী হলে আমাদের ছাড়তে সমস্যা নেই। একটা গাড়ি গেলেও যা ১০টা গেলেও তো তা–ই। অনেক পরিবহনে তো যাত্রীই নাই। সবাই ট্রিপ কমাতে বাধ্য হচ্ছে। ট্রিপ বাতিল করতে হচ্ছে।’

কথাগুলো টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেসের খুলনার সোনাডাঙ্গা কাউন্টারের কাউন্টার মাস্টার মো. রায়হানের। রায়হানের সুরে সুর মিলিয়ে এনা পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার মো. ইউসুফ আলী বলেন, সকালে কয়েকটি গাড়ি ছেড়ে গেছে। এখন আর লোকজন নেই। গাড়ি যাওয়ার সম্ভাবনাও নেই।

ইমাদ পরিবহনের খুলনার সহকারী ব্যবস্থাপক মো. হ‌ুমায়ূন কবীর জানান, প্রতিদিন ভোর চারটা থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত খুলনা থেকে ঢাকার উদ্দেশে ১৫ মিনিট পরপর গাড়ি ছাড়ে। এরপর আধঘণ্টা পরপর ছাড়ে। এখন তাঁদের ট্রিপ এক ঘণ্টা পর ছাড়ছে। তাতেও লোকজন তেমন পাওয়া যাচ্ছে না। একেক গাড়িতে ২০-২৫ জন করে হচ্ছে।
বিএনপি ও বিরোধীদের ডাকা ৪৮ ঘণ্টার হরতালের দ্বিতীয় দিনে খুলনায় দূরপাল্লার ও অভ্যন্তরীণ রুটের গাড়িতে যাত্রীখরা আগের মতোই আছে। তবে খুলনা থেকে দূরপাল্লার বাস, ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল করছে।

খুলনার সোনাডাঙ্গা এলাকার ঢাকাগামী পরিবহনের কাউন্টারগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকার উদ্দেশে গাড়ি ছেড়ে যাচ্ছে, তবে নির্ধারিত সময়ে ছাড়তে পারছে না। সকালে খুলনা থেকে সব ট্রেনই সূচি অনুযায়ী ছেড়ে গেছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) খুলনার রকেট ঘাট থেকে নির্ধারিত একটি রুটে চলা দুটি লঞ্চও ঠিক সময়ে ছেড়ে গেছে।

খুলনা বিভাগের সবচেয়ে বড় বাস টার্মিনাল সোনাডাঙ্গা আন্তজেলা বাসটার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, অভ্যন্তরীণ রুটে গাড়ি চলছে। যাত্রী না পেলেও নির্ধারিত সময়ে সেগুলো ছাড়ছে।

একদফা দাবিতে সারা দেশে বিএনপির ডাকা হরতালের সমর্থনে খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপি মিছিল করে। আজ সকাল ১০টার দিকে শহরের নতুন বাজার এলাকায়
ছবি: সাদ্দাম হোসেন

খুলনা-পাইকগাছা রুটের একজন চালকের সহকারী মোসলেম সরদার টার্মিনাল এলাকায় কোনো ইজিবাইক থেকে যাত্রী নামার সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে সেখানে চলে চাচ্ছিলেন। জানতে চাচ্ছিলেন পাইকগাছার যাত্রী কি না। হ্যাঁ সূচক উত্তর মিললে যাত্রীর সঙ্গে থাকা মালামাল নিয়ে দ্রুতগাড়িতে উঠিয়ে দিচ্ছিলেন। মোসলেম সরদার বলেন, ‘আমরা হাঁকডাক, যত্নআত্তি বাড়িয়ে দিয়েছি, তবু লোক তো হচ্ছে না। এভাবে তো পারা যাচ্ছে না।’

খুলনা থেকে কুষ্টিয়াগামী বাসের কাউন্টারের সামনে থাকা রূপসা পরিবহনের সুপারভাইজার মো. মিলন বলেন, খুলনা থেকে সরাসরি কুষ্টিয়ায় কোনো গাড়ি যাচ্ছে না। একটানা পাঁচ জেলার ওপর দিয়ে গাড়ি চালাতে কেউ সাহস করছে না। এতে ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই খুলনা থেকে যশোর পর্যন্ত বাস যাচ্ছে যশোরে পৌঁছার পর যাত্রীদের তাঁরা অন্য বাসে তুলে দিচ্ছেন।

গতকালের মতো আজ সোমবারও হরতালের সমর্থনে খুলনা নগরে মিছিল করেছে খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপি। তবে কোনো ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি। সকাল ১০টার দিকে নতুন বাজার এলাকা থেকে শুরু করে গগন বাবু রোড এলাকায় কয়লাঘাট কালীবাড়ি মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। এর আগে গতকাল রোববার সন্ধ্যার পর নগরের বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ব্যানারে খণ্ড খণ্ড মশালমিছিল হয়েছিল।

খুলনা নগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও বিএনপির মিডিয়া সেলের মুখপাত্র মিজানুর রহমান বলেন, অতীতের মতোই সারা বাংলাদেশের জনগণকে বন্দী করে, গৃহছাড়া করে সরকার ভোট ডাকাতির উৎসব সফল করতে চায়। গায়েবি মামলা ও গ্রেপ্তার আতঙ্কে বিএনপি নেতা-কর্মীরা এখন দুঃসহ জীবন অতিবাহিত করছেন। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে দেওয়া হচ্ছে না। তারপরও এই দফায় হরতালের সমর্থনে বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা মাঠে আছেন।