বান্দরবান অনেকটাই পর্যটকশূন্য, ‘ভুল প্রচারণাকে’ দুষছেন ব্যবসায়ীরা

বান্দরবানে পর্যটকের অপেক্ষায় নীলাচল পর্যটনকেন্দ্র। গতকাল বুধবার বিকেলেছবি: মংহাইসিং মারমা

ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশের পর্যটন স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলা বান্দরবান। এবার সেখানেই ঈদের ছুটিতে পর্যটকেরা তেমন একটা যাচ্ছেন না। সাজিয়ে রাখা হোটেল-মোটেলগুলো অনেকটাই পর্যটকশূন্য হয়ে আছে।

পর্যটক ব্যবসায়ীদের দাবি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুল প্রচারণায় সৃষ্ট নিরাপত্তাহীনতার ধারণার প্রভাবে পর্যটকেরা বান্দরবানে আসছেন না। বাস্তবে দেশের অন্যান্য ভ্রমণ স্থানের মতো এটিও নিরাপদ। বান্দরবান সদর উপজেলা, লামা, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় নিরাপদেই ভ্রমণ করা যাচ্ছে।

বান্দরবান হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, পর্যটনের আকালে জেলা ও উপজেলায় ১৫০টির বেশি হোটেল, মোটেল, অবকাশ যাপনকেন্দ্র, ভাড়ায়চালিত চার শতাধিক গাড়ি ও ট্যুর গাইডসহ বিভিন্নভাবে সরাসরি কর্মরত প্রায় চার হাজার মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।

গতকাল বুধবার বিকেলে ঈদের ছুটির প্রথম দিনে জেলা শহরের মেঘলা ও নীলাচল পর্যটনকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, আশপাশের কিছু তরুণ-তরুণী ঘুরতে এলেও বাইরের পর্যটকের আসেননি। নীলাচলের তত্ত্বাবধায়ক আদিব বড়ুয়া জানান, গত ঈদের চেয়েও এবারে পর্যটকের সংখ্যা অনেকটাই কমে গেছে। গত ঈদের ছুটির প্রথম দিনে হাজারের ওপরে টিকিট বিক্রি হয়েছিল। এবারের ছুটিতে প্রথম দিনে ১৫০টি টিকিটও বিক্রি হয়নি। ঈদের দিন আজ বৃহস্পতিবারও একই চিত্র দেখা গেছে।

হোটেল-মোটেলের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও চাঁন্দের গাড়ি চালকেরা প্রায় সবাই কর্মহীন অলস সময় কাটাচ্ছেন। হিলভিউ হোটেলের ব্যবস্থাপক অভিজিৎ দাশ বলেন, গত ঈদে হোটেলের ২০ শতাংশ আগাম বুকিং হয়েছিল। এবারে পাঁচ শতাংশও হয়নি। হোটেল প্যালেসের ব্যবস্থাপক শাহজাহান জানান, তাঁদের হোটেলে ঈদের ছুটিতে কোনো আগাম বুকিং হয়নি।

আরণ্য হোটেলের মালিক জসীম উদ্দিন বলেন, হোটেলগুলো এখন মালিকদের কাছে সাদা হাতিতে পরিণত হয়েছে। করোনাভাইরাসের মহামারি থেকে তাঁরা লোকসান দিয়ে আসছেন। বাধ্য হয়ে ১১ জন কর্মচারী থেকে ছয়জনকে ছাঁটাই করেছেন। ঈদের ছুটিতে কর্মচারীদের বেতনের টাকা হলেও পাবেন আশা করেছিলেন। কিন্তু হোটেল এখনো সম্পূর্ণ খালি।

ঈদের ছুটিতে পর্যটকের উপচেপড়া ভিড় থাকলেও এবার অনেকটাই ফাঁকা জেলা শহরের প্রবেশদ্বারে অবস্থিত মেঘলা পর্যটনকেন্দ্র
ছবি: মংহাইসিং মারমা

হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলামের হিসাব অনুযায়ী, বান্দরবানে হোটেল-মোটেলগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারী কমপক্ষে দুই হাজার, ভাড়ায়চালিত চার শতাধিক চাঁন্দের গাড়ি, জিপসহ বিভিন্ন যানবাহন এক হাজার (মালিক-শ্রমিক), নৌকাচালক, ট্যুর গাইড ও খাবারের দোকান কর্মচারী মিলিয়ে প্রায় চার হাজার মানুষ সরাসরি কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।

পর্যটকদের বান্দরবানমুখী না হওয়ার পেছনে ভুল প্রচারণাকে দায়ী করেছেন সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলায় নিরাপত্তাজনিত কারণে পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে প্রতিনিয়ত ভুলভাবে তুলে ধরা হচ্ছে। বাস্তবে এই তিন উপজেলায় ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বাকি চারটি উপজেলা নিরাপদ। অথচ ভুল প্রচারণার কারণে ভ্রমণকারীদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার ধারণা সৃষ্টি হয়েছে।

জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, সম্পূর্ণ নিরাপদে যে কেউ বান্দরবানের চারটি উপজেলায় ভ্রমণ করতে পারেন। ঈদের পরদিন থেকে পর্যটকেরা এসে থাকেন। হোটেল-মোটেলে আগাম ভাড়া কম হলেও এবারেও ঈদের পরের দিন কিছু পর্যটক আসার সম্ভাবনা আছে।