জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ষষ্ঠ সমাবর্তন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বানানো হয়েছে প্যান্ডেল। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা
ছবি: প্রথম আলো

ষষ্ঠ সমাবর্তন উপলক্ষে বর্ণিল সাজে রাঙানো হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)। সর্বত্র উৎসবের আমেজ। সমাবর্তন অংশ নিতে যাওয়া সাবেক শিক্ষার্থীদের পদচারণে মুখর হয়ে উঠেছে পুরো ক্যাম্পাস। আজ শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বসবে সমাবর্তন আসর। তবে এ খুশির মধ্যেও কিছু বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে।

সমাবর্তন প্যান্ডেলের বাজেট, সমাবর্তনের ফি, খাবার ও সমাবর্তনের লোগোর মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বেশি। এ ছাড়া নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উইকেন্ড কোর্সের শিক্ষার্থীদের সমাবর্তনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না অনেকে। এসব নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কয়েক দিন ধরেই চলছে আলোচনা–সমালোচনা।

এবারের সমাবর্তনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সমাবর্তন বক্তা হিসেবে থাকবেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। সমাবর্তনে অংশ নিতে নিবন্ধন করা ১৫ হাজার ২১৯ জনের মধ্যে নিয়মিত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্নকারী ১১ হাজার ৪৪৪ জন, উইকেন্ড প্রোগ্রামের ৩ হাজার ৪৬১ জন, এমফিল ডিগ্রির ৩৪ জন ও পিএইচডি সম্পন্নকারী ২৮০ জন। সমাবর্তনে ১৬ জনকে স্বর্ণপদক দেওয়া হবে।

গত বুধবার সমাবর্তনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেন উপাচার্য অধ্যাপক নুরুল আলম। সুষ্ঠুভাবে সমাবর্তন সম্পন্ন করার জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। উপাচার্য দাবি করেন, অল্প সময়ের মধ্যে সবার সহযোগিতার কারণেই সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সমাবর্তনের আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে।

উৎসবের আমেজ
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি), সপ্তম ছায়া মঞ্চ, সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চ, অমর একুশ, সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ভবন, শহীদ মিনার, নতুন কলাভবন, বটতলা, পরিবহন চত্বর, হলসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, স্নাতকেরা কালো গাউন-টুপি-কস্টিউম পরে সেলফি, গ্রুপ ফটোসেশনে ব্যস্ত সময় পার করছেন শিক্ষার্থীরা। এই আনন্দ ভাগাভাগি করতে অনেকেই এসেছেন পরিবার নিয়েও।

বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু সাইদ তাঁর এক বছরের ছেলে আবু আবদুল্লাকে পরিয়ে দিয়েছেন সমাবর্তনের পোশাকের আদলে বানানো পোশাক। আবু সাইদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সন্তানের প্রথম ক্যাম্পাস দেখা এটি। পরিবার নিয়ে সমাবর্তনের স্মৃতি ধরে রাখতে এক দিন আগেই ক্যাম্পাসে এসেছি। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষাসনদ নিতে ক্যাম্পাসে আসার অনুভূতিটা ভীষণ আনন্দের।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ষষ্ঠ সমাবর্তন উপলক্ষে ক্যাম্পাসে কয়েকদিন ধরে চলছে উৎসবের আমেজ। শনিবার বিকেলে
ছবি: প্রথম আলো

দেড় কোটি টাকার প্যান্ডেল
সমাবর্তনের প্যান্ডেলের জন্য খরচ করা হচ্ছে ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। সমাবর্তনের প্যান্ডেল নির্মাণের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পছন্দের একটি প্রতিষ্ঠানকে সুযোগ দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে প্যান্ডেল কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক বশির আহমেদ বলেন, নিয়ম মেনে ডিপিএমের (ডাইরেক্ট পারচেজ মেথড) মাধ্যমে প্যান্ডেল তৈরির কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে শুধু প্যান্ডেল বানানো হচ্ছে বিষয়টি এমন নয়। শব্দযন্ত্র, আমন্ত্রিত অতিথিদের অস্থায়ী বিশ্রাম কক্ষ, প্যান্ডেলে প্রবেশ ও বের হওয়ায় রাস্তা সংস্কার, স্টেজ নির্মাণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম এ বাজেটের মধ্যে করা হচ্ছে।

সমাবর্তনের ফি নিয়ে ক্ষোভ
সমাবর্তনে প্রশাসন স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের জন্য একসঙ্গে ৪ হাজার টাকা ফি নির্ধারণ করেছে। এ ছাড়া স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে জন্য পৃথকভাবে ২ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে নিবন্ধনের সুযোগ রাখা হয়েছে। এমফিল ডিগ্রির শিক্ষার্থীদের জন্য ছয় হাজার টাকা, পিএইচডি সাত হাজার টাকা ও উইকেন্ড কোর্সের সনদধারীদের জন্য আট হাজার টাকা নিবন্ধন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। এই ফি মাত্রাতিরিক্ত বলে মনে করছেন সমাবর্তনে অংশ নিতে যাওয়া নিয়মিত শিক্ষার্থীরা। তাঁরা সান্ধ্যকালীন কোর্সের শিক্ষার্থীদের সমাবর্তনে অংশ নেওয়ার সুযোগ নিয়েও সমালোচনা করেছেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক রাশেদা আখতার বলেন, ‘সারা দেশে পণ্যের দাম বেড়েছে। বর্তমান বাজারমূল্য এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনের ফির তুলনামূলক চিত্র বিশ্লেষণ করেই এই ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। আর উইকেন্ড কোর্সের শিক্ষার্থীরাও আমাদের শিক্ষার্থী। তাই সমাবর্তনে অংশ নিতে তাদের কোনো বাধা নেই।’

সমাবর্তনের খাবার নিয়ে ক্ষোভ
সমাবর্তনে দুপুরে খাবারের ব্যবস্থা রাখা হয়নি। বিকেলে নাশতা হিসেবে দেওয়া হবে বান পিৎজা, স্লাইস কেক, সন্দেশ, চিকেন ফ্রাই, আপেল ও পানির বোতল। এ জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৩১১ টাকা। এমন ব্যবস্থাপনায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। সমাবর্তন নিতে যাওয়া শিক্ষার্থী আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুপুরে খাবারের ব্যবস্থা করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। খাবার হিসেবে নাশতা দেওয়া হবে বিকেল পাঁচটায়। দুপুরে খাবারের ব্যবস্থা না করায় এবং বিকেলে সারা দিনের অনুষ্ঠান শেষে খাবার সংগ্রহে ভোগান্তিতে পড়তে হবে।’

সমাবর্তনের খাবারের বিষয়ে আপ্যায়ন কমিটির সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলমগীর কবির বলেন, সমাবর্তন প্যান্ডেলে সবাইকে প্রবেশ করতে হবে সাড়ে ১১টা থেকে আড়াইটার মধ্যে আর অনুষ্ঠান শেষে বের হতে হতে পাঁচটার বেশিও বাজতে পারে। সময় বিবেচনা করে দুপুরে খাবার দেওয়া সম্ভব নয়। তাই সবদিক বিবেচনা করে মধ্যাহ্নভোজের দিকে না গিয়ে প্যাকেটজাত নাশতা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

লোগোর মান নিয়ে বিতর্ক

এবারের সমাবর্তনের লোগোটি করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. মহসিন। এই লোগোর মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেক শিক্ষার্থী। তাঁরা বলছেন, গুগলে সার্স দিলে এই লোগোসদৃশ লোগো দেখতে পাওয়া যায়।

তবে কাজী মো. মহসিন বলেন, এটি কোনো কপি লোগো নয়। যাঁরা বলছেন, তাঁরা না বুঝেই এমনটি বলছেন। প্রশাসনকে লোগোর একাধিক অপশন দেওয়া হলে তারা যাচাই–বাছাই করে জেনেবুঝে বর্তমান লোগোটি নির্বাচন করেছে।