শিশু জুনায়েদ এখনো জানে না, তার মা-বাবা বেঁচে নেই

ফুফুর কোলে বসে আছে ছোট্ট জুনায়েদ। আজ বৃহস্পতিবার জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার নারিকেলী উত্তরপাড়া গ্রামেছবি: প্রথম আলো

মা–বাবার সঙ্গে শিশু জুনায়েদ (৫) সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিল। হাসপাতাল থেকে গত বুধবার সন্ধ্যায় দাদা–দাদির সঙ্গে সে বাড়িতে ফেরে। বাড়িতে এসেই সে মাকে খুঁজতে থাকে। ওই সময় তার মা–বাবা উঠানে পাশাপাশি দুটি খাটিয়ায় শুয়ে ছিলেন চিরনিদ্রায়। তখন দাদা–দাবি তাকে জানায়, তাঁরা (মা–বাবা) চিকিৎসকের কাছে গেছেন। আজ বৃহস্পতিবারও সে তার মা–বাবার খোঁজ করেছে। ছোট্ট জুনায়েদ এখনো জানে না যে তার মা–বাবা আর বেঁচে নেই।

এনামুল হক ও বৃষ্টি খাতুন দম্পতির ছেলে জুনায়েদ হোসেন। তাঁদের বাড়ি জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার রায়কালী ইউনিয়নের নারিকেলী উত্তরপাড়া গ্রামে। গতকাল বুধবার সকালে নওগাঁ-সান্তাহার বাইপাস সড়কের সাহাপুর ইয়াদ আলী মোড়ে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ওই দম্পতি নিহত হয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে থাকা জুনায়েদ আহত হয়। এ দম্পতির আনিকা খাতুন (১৩) নামে একটি মেয়েও রয়েছে।

আজ বেলা সাড়ে ১১টায় নারিকেলী উত্তরপাড়া গ্রামের নিহত দম্পতির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় শোকের আবহ। বাড়ির উঠানে জুনায়েদকে কোলে নিয়ে বসে আছেন ফুফু মিতু খাতুন। দাদি রেনুকা বিবি হাতপাখা দিয়ে জুনায়েদকে বাতাস করছিলেন। প্রতিবেশীরা তাঁদের ঘিরে দাঁড়িয়ে আছেন।

জুনায়েদের দাদা আকরাম হোসেন বলেন, তাঁর তিন সন্তানের মধ্যে এনামুল হক দ্বিতীয়। এনামুল আনসার সদস্য হিসেবে অগ্রণী ব্যাংকের বগুড়ার মাঝিড়া ক্যান্টনমেন্ট শাখায় কর্মরত ছিলেন। রোজার মাসে তিনি মোটরসাইকেল কিনেছিলেন। সম্প্রতি জুনায়েদের শরীর খারাপ ছিল। গতকাল সকালে মোটরসাইকেলে করে তাঁরা তিনজন বাড়ি থেকে নওগাঁর নওহাটায় এক কবিরাজের কাছে যান। সেখান থেকে ফেরার পথে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে নওগাঁ-সান্তাহার বাইপাস সড়কের শাহপুর ইয়াদ আলীর মোড় এলাকায় তাঁদের মোটরসাইকেলের সঙ্গে আরেকটি মোটরসাইকেলের সংঘর্ষ হয়। এতে আকরাম হোসেনের ছেলে এনামুল, পুত্রবধূ বৃষ্টি ও নাতি জুনায়েদ সড়কের ওপর ছিটকে পড়ে। ঘটনাস্থলেই ছেলে ও পুত্রবধূ মারা যায়।

এনামুল হকের ছোট ভাই একরামুল হক বলেন, ‘জুনায়েদ হাসপাতালে ভর্তি ছিল। আমরা বুধবার সন্ধ্যায় তাকে বাড়িতে এনেছি। ওই দিন রাত ১০টায় বড় ভাই ও ভাবিকে দাফন করা হয়। জুনায়েদ এখন অসুস্থ। সে বারবার মায়ের কোলে যেতে যাচ্ছে। সে যখন জানবে যে তার মা-বাবা কেউ বেঁচে নেই, তখন কীভাবে তাকে সান্ত্বনা দেব?’

এ ঘটনায় এনামুল হকের বাবা আকরাম হোসেন বাদী হয়ে নওগাঁ সদর থানায় সড়ক পরিবহন আইনে অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন। নওগাঁ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল হক জানান, দুটি মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে আরোহীরা সড়কের ওপর ছিটকে পড়েছিলেন। তখন একটি ট্রাক তাঁদের চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।