সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের কমিটি, প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
ফাইল ছবি

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (সিকৃবি) ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় কমিটি ঘোষণার বিষয়টি প্রচার হওয়ার প্রতিবাদে মধ্যরাতে বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন।

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা গতকাল রাত পৌনে ১২টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ‘ক্যাম্পাসে রাজনীতি, চলবে না চলবে না’ এবং ‘প্রশাসন জবাব চাই, জবাব চাই জবাব চাই’–সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন। তাঁরা ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও কেন ছাত্রদলের কমিটি হয়েছে, এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

গতকাল রাতের মিছিলে থাকা এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, মিছিলে ৬০ থেকে ৭০ জন শিক্ষার্থী ছিলেন। তাঁরা কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের কর্মী নন, একেবারেই সাধারণ শিক্ষার্থী। মিছিলে থাকা শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আর ছাত্ররাজনীতি দেখতে চান না। অথচ কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে ছাত্রদল পুরোনো সংস্কৃতিকেই ফেরত নিয়ে আসার চেষ্টা করছে। যেখানে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ, সেখানে কমিটি গঠনসহ রাজনৈতিক কোনো কার্যক্রমই সাধারণ শিক্ষার্থীরা দেখতে চান না।

এদিকে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম (রাকিব) ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন (নাছির) স্বাক্ষরিত সিকৃবি ছাত্রদলের ৪৫ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গত বৃহস্পতিবার অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে এ কমিটি গঠনের বিষয়টি গতকাল সন্ধ্যায় প্রচারিত হয়। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা মধ্যরাতে বিক্ষোভ করেন।

ছাত্রদলের সিকৃবি শাখার আহ্বায়ক হয়েছেন সানাউল হোসেন। এ ছাড়া সদস্যসচিব হন সোহান তালুকদার। এ কমিটিতে ২৫ জনকে যুগ্ম–আহ্বায়ক এবং ১৮ জনকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। কমিটিতে একজন ছাত্রী ঠাঁই পেয়েছেন। মুরশিদা আক্তার নামের ওই ছাত্রীকে যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে রাখা হয়েছে। নবঘোষিত কমিটিকে ৩০ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানিয়েছে, শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ডিন কাউন্সিলের জরুরি সভার পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১৪ আগস্ট সিকৃবিতে সব ধরনের সভা, সমাবেশ, মিছিল, রাজনীতি, র‍্যাগিং, বুলিং নিষিদ্ধ করা হয়। কোনো শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী রাজনৈতিক সংগঠন ও কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও তখন জানানো হয়েছিল। গত বৃহস্পতিবারও এ বিষয়টি ফের বিজ্ঞপ্তি আকারে জানানো হয়।

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের বিষয়ে নবঘোষিত সিকৃবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক সানাউল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটি গুপ্ত সংগঠনের কর্মীদের উদ্যোগে এ মিছিল হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ, তাই ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রমও পরিচালিত হয় না। এখন কেন্দ্রীয় ছাত্রদল কোথায় কমিটি করবে, সেটা অন্য কারও দ্বারা নির্ধারিত হবে কি?’

আহ্বায়ক কমিটি গঠনের আগে-পরে ক্যাম্পাসে ছাত্রদল কোনো কর্মসূচি করেনি জানিয়ে সানাউল আরও বলেন, ‘আমাদের কমিটি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু যেহেতু ক্যাম্পাসে রাজনীতি, সভা, সমাবেশ, মিছিল নিষিদ্ধ, তাই ক্যাম্পাসে ছাত্রদল কোনো কর্মসূচি করবে না। যদি কখনো ক্যাম্পাসে রাজনীতি চালুর সুযোগ দেওয়া হয়, তখন ক্যাম্পাসে কর্মসূচি করব। আর ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণার প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে মিছিল যাঁরা করেছেন, তাঁরাই তো উল্টো মিছিল-সমাবেশ করে নিয়ম লঙ্ঘন করেছেন।’
এ বিষয়ে জানার জন্য সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আলিমুল ইসলাম এবং প্রক্টর জসিম উদ্দিন আহমেদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তাঁরা সাড়া দেননি। তাই তাঁদের বক্তব্য জানা যায়নি।