ওভারপাস এখন ‘গলার কাঁটা’

বছরের পর বছর ধরে নির্মাণকাজ চলায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে শহরবাসীকে। দুর্ভোগ চরমে ওঠে বর্ষা মৌসুমে।

জামালপুর রেলওয়ে ওভারপাসের নিচে দুই পাশ দিয়ে যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু বৃষ্টি ও পৌরসভার পানির পাইপলাইন ফেটে পশ্চিম পাশের ব্যবহৃত সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে ডোবায় রূপ নিয়েছে। এতে কেবল পূর্ব পাশ দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজটের। সম্প্রতি জামালপুর শহরের গেটপাড় এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

জামালপুর শহরে যানজট কমাতে ছয় বছর আগে রেলগেট এলাকায় একটি ওভারপাস নির্মাণের কাজ শুরু হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারায় প্রকল্পের মেয়াদ বেড়েছে চার দফায়। ব্যয়ও বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। তবু কাজ শেষ হয়নি। এখন নতুন করে মেয়াদ বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে।

যানজট কমানোর এই প্রকল্প এখন জামালপুর শহরের বাসিন্দাদের ‘গলার কাঁটা’। বছরের পর বছর ধরে নির্মাণকাজ চলায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে শহরবাসীকে। দুর্ভোগ চরমে ওঠে বর্ষা মৌসুমে। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ওই এলাকার ব্যবসায়ীরা।

গেটপাড় এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বলেন, ওভারপাস নির্মাণে দীর্ঘ সময় ও ভোগান্তির কারণে প্রায় সবার ব্যবসায় ধস নেমেছে।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের জামালপুর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতি ঘণ্টায় ট্রেন চলাচলের কারণে জামালপুর শহরের প্রধান সড়কের গেটপাড় এলাকায় প্রতিদিন যানজট লাগে। জনদুর্ভোগ দূর করতে ২০১৭ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারিতে এই রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ প্রকল্প শুরু করে সওজ। প্রকল্পে ৭৮০ মিটার ওভারপাসসহ দুই পাশে পাকা সড়ক নির্মাণ করা হবে। জমি অধিগ্রহণসহ প্রকল্পের ব্যয় ছিল ২১১ কোটি টাকা। তবে বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ৪২৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩৫৯ কোটি টাকা জমি অধিগ্রহণে এবং ৬৪ কোটি টাকা ওভারপাস ও সড়ক নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে। ইতিমধ্যে কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৮৮ শতাংশ। চতুর্থবারের মতো প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে আগামী জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। তবে জুনে কাজ শেষ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। সে জন্য ফের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করবে সওজ।

মাত্র দেড় বছর সময়ের কাজ, ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে এখনো শেষ করতি পারিনি। ফলে আমরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় তত্ত্বাবধায়ক শরিফুল ইসলাম

জামালপুর সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী পঙ্কজ ভৌমিক কাজের ধীরগতির কারণে জনদুর্ভোগের বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই কাজে আমাদের কোনো তদারকির অভাব নেই। ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতার কারণে কাজে ধীরগতি। জায়গা না পাওয়া গেলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করবে কীভাবে? তবে ভূমি জটিলতার বিষয়টি সমাধান হয়েছে।’ তিনি বলেন, জুনের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর সুপারিশ করা হবে।

জামালপুর জেলা নাগরিক কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, রেলওয়ে ওভারপাস কল্যাণের বদলে পৌরবাসীর দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বছরের পর বছর ধরে নির্মাণকাজই চলছে। কাজের সময় যত বাড়ে, প্রকল্পের ব্যয়ও-তো বাড়ে। এতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের লাভ হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ওই এলাকার ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ। এ সময়ের মধ্যে পদ্মাসহ বহু বড় বড় সেতু নির্মিত হয়েছে। কিন্তু ৭৮০ মিটার ওভারপাস নির্মাণের কাজ শেষ করতে পারছে না সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে পৌরবাসীর দুঃখের নাম ওভারপাস।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, ওভারপাস নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ। শুধু রেললাইনের ওপরের অংশের ছাদের ঢালাই বাকি আছে। রাস্তা ও অ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ শুরুই হয়নি। দুই পাশের সড়ক খানাখন্দে ভরা। নির্মাণকাজের সরঞ্জাম রাখায় রাস্তা অনেকটাই সংকীর্ণ। বড় বড় গর্ত আর ভাঙাচোরার কারণে ধীরগতিতে যানবাহন চলাচল করছে। বিভিন্ন স্থানে কাদাপানি জমে আছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় তত্ত্বাবধায়ক শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘মাত্র দেড় বছর সময়ের কাজ, ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে এখনো শেষ করতি পারিনি। ফলে আমরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এখানে আমাদের কোনো গাফিলতি নেই। দীর্ঘ সময় ধরে সওজ কাজের জায়গা বুঝিয়ে দিতে পারছিল না। ফলে কাজের ধীরগতি ছিল। প্রকল্পের বেশির ভাগ ব্যয় বেড়েছে ভূমি অধিগ্রহণে। আমাদের কাজে তো সামান্য বেড়েছে।’

গেটপাড় এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বলেন, ওভারপাস নির্মাণে দীর্ঘ সময় ও ভোগান্তির কারণে প্রায় সবার ব্যবসায় ধস নেমেছে। দীর্ঘ সময় ধরে এই এলাকায় বর্ষায় কাদাপানি, হাঁটুপানি, শুকনা মৌসুমে ধুলাবালি আর নিত্য যানজটের কারণে মানুষ এই এলাকা এড়িয়ে চলেন। ফলে ক্রেতারা কম আসেন।