জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর বগুড়ায় বাস উধাও

বেলা ১১টার দিকে ঠনঠনিয়া টার্মিনালে ঢাকাগামী মাত্র পাঁচটি বাস দাঁড়িয়ে ছিল। অন্যান্য দিন একই সময় এই টার্মিনালে অন্তত ৩০টি বাস থাকে
ছবি: প্রথম আলো

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর উত্তরের জেলা বগুড়ার বেশির ভাগ বাসমালিকেরা পূর্বঘোষণা ছাড়াই বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে বগুড়া থেকে আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার বাস চলাচল সীমিত হয়ে পড়েছে। অল্প কিছু বাস চালু থাকলেও তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। তবে এসব বাসে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি টাকা নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।

আজ শনিবার সকাল থেকে চারমাথা আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল, শহরের হাড্ডিপট্টি বাস টার্মিনাল, ঠনঠনিয়া কোচ টার্মিনাল ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে। স্বাভাবিক সময়ে এসব টার্মিনালে বাস ও যাত্রীদের ভিড় থাকলেও আজ সকাল থেকে টার্মিনালগুলো অনেকটাই ফাঁকা।

বাসমালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া থেকে দূরপাল্লা এবং অভ্যন্তরীণ রুটে ৮০০ বাস চলাচল করে। তবে আজ সকাল থেকে প্রায় সব রুটেই বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন মালিকেরা।

বেলা ১১টার দিকে ঠনঠনিয়া টার্মিনালে শত শত ঢাকাগামী যাত্রীদের বাসের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। ওই সময় এই টার্মিনালে ঢাকাগামী মাত্র পাঁচটি বাস দাঁড়িয়ে ছিল। অন্যান্য দিন একই সময় এই টার্মিনালে অন্তত ৩০টি বাস থাকে। টার্মিনালে বাসের জন্য অপেক্ষমাণ কয়েকজন যাত্রী জানান, তাঁরা অগ্রিম টিকিট কেটে রেখেছিলেন। তবে আজ সকালে বাস কাউন্টারে আসার পর তাঁদের টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে।

রাজধানীর নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাজিদ হোসেন বলেন, তিনি গতকাল শুক্রবার ৪৫০ টাকা দিয়ে শাহ ফতেহ আলী পরিবাহনের নন–এসি বাসের টিকিট কেটে রেখেছিলেন। কিন্তু আজ সকালে বাস কাউন্টারে আসার পর জানতে পারেন, বাস চলবে না। এখন তিনি ১০০ টাকা বেশি ভাড়া দিয়ে শ্যামলী পরিবহনের টিকিট কেটেছেন।

এ ছাড়া হানিফ পরিবহন, এস আই ট্র্যাভেলস, মানিক পরিবহনসহ কয়েকটি পরিবহনের অল্প কিছু বাস ঢাকার উদ্দেশে চলাচল করছে। তবে এসব বাসে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকা বেশি নেওয়ার অভিযোগ করছেন যাত্রীরা। বাস পরিচালনা–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, জ্বালানি তেলের খরচ মেটাতে বাধ্য হয়ে তাঁরা ভাড়া বাড়িয়েছেন।

লোকসান দিয়ে গাড়ি চালানো সম্ভব নয়। এ কারণে বাধ্য হয়ে বাসমালিকেরা আজ সকাল থেকে নিজেরাই গাড়ি চলাচল বন্ধ রেখেছেন। ভাড়া পুনর্নির্ধারণ না হওয়া পর্যন্ত কেউ গাড়ি চালাবেন না।
আমিনুল ইসলাম, বগুড়া মোটরমালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক

হানিফ পরিবহনের ঠনঠনিয়া কাউন্টারের ব্যবস্থাপক সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘তেলের দাম বাড়ায় প্রতি ট্রিপে (বগুড়া থেকে ঢাকা) প্রায় সাত হাজার টাকা বেশি খরচ হবে। তাই কোম্পানির নির্দেশে ১০০ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে। এখানে আমাদের কিছু করার নাই। বাসের ভাড়া বাড়ানোর ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়া হলে কালকে থেকে হয়তো আর বাস চালানো যাবে না।’

বাসমালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া থেকে দূরপাল্লা এবং অভ্যন্তরীণ রুটে ৮০০ বাস চলাচল করে। তবে আজ সকাল থেকে প্রায় সব রুটেই বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন মালিকেরা। আজ দুপুরের পর সেটাও চলবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে সকাল থেকে বগুড়ার অভ্যন্তরীণ রুটে ও আশপাশের জেলাগুলোতেও বাস চলাচল কমে গেছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। বেশি ভাড়া দিয়ে বিকল্প উপায়ে অনেকে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন।

সকাল নয়টায় চারমাথা টার্মিনালে কথা হয় নওগাঁগামী যাত্রী সাদিকুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এক ঘণ্টা ধরে বাসের জন্য অপেক্ষা করছি। বাস খুবই সীমিত। কীভাবে যাব বুঝতে পারছি না।’

জানতে চাইলে বগুড়া মোটরমালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বলেন, জ্বালানি তেলের দাম প্রতি লিটারে প্রায় দেড়গুণ বেড়েছে। কিন্তু বাস ভাড়া এখনো বাড়ানোর কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ অবস্থায় সড়কে গাড়ি বের করলে মালিকদের প্রতি দিন হাজার হাজার টাকা লোকসান গুনতে হবে। লোকসান দিয়ে গাড়ি চালানো সম্ভব নয়। এ কারণে বাধ্য হয়ে বাসমালিকেরা আজ সকাল থেকে নিজেরাই গাড়ি চলাচল বন্ধ রেখেছেন। ভাড়া পুনর্নির্ধারণ না হওয়া পর্যন্ত কেউ গাড়ি চালাবেন না।