কেন্দ্র বর্জন করলেও পেকুয়ায় নির্বাচনে বিএনপি

কক্সবাজারের পেকুয়ায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির একক প্রার্থী নির্ধারণী সভায় বক্তব্য দেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি বাহাদুর শাহ।  গত সোমবার বিকেল চারটায় পেকুয়া ঋণদান কমিউনিটি সেন্টারেছবি:সংগৃহীত

চলমান উপজেলা পরিষদের নির্বাচন বর্জন করেছে বিএনপি। এর মধ্যেই কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা বিএনপি সভা ডেকে দলের একক প্রার্থী ঘোষণা করেছে। গত সোমবার এই সভা করেন দলটির নেতা-কর্মীরা।

সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চেয়ারম্যান পদে পেকুয়া উপজেলা যুবদলের সভাপতি কামরান জাদিদ মুকুট, ভাইস চেয়ারম্যান পদে পেকুয়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আহসান উল্লাহ এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আবছারের স্ত্রী রাজিয়া বেগমকে বিএনপির একক প্রার্থী ঘোষণা করা হয়।

সোমবার বিকেলে পেকুয়া বাজারের একটি কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত সভা থেকে বিএনপির একক প্রার্থী ঘোষণা করেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি বাহাদুর শাহ। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘সারা দেশে বিএনপি ভোট বর্জন করেছে, তা আমরা জানি। আমরাও এর বাইরে নই। তবে স্থানীয় কারণে আমরা দলীয় একক প্রার্থী ঘোষণা করেছি। তবে সবকিছুর জন্য প্রত্যাহারের দিন ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’

উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির একক প্রার্থী কামরান জাদিদ বলেন, ‘দল থেকে আমাকে প্রার্থী করার পর পেকুয়ার পথেপ্রান্তরে যাচ্ছি। মানুষের খুব সাড়া পাচ্ছি। বুধবার থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ের বৈঠক শুরু করেছি। দলের নেতা-কর্মীরা খুবই উচ্ছ্বসিত।’ কামরান জাদিদ বলেন, ‘দল একক প্রার্থী ঘোষণা করেছে, সে হিসেবে নির্বাচনে আছি। দল যদি নতুন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়, সেটিও আমি মেনে নিতে প্রস্তুত আছি।’

আরও পড়ুন

কক্সবাজার-১ আসন চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত। এই আসন থেকে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তাঁর গ্রামের বাড়ি পেকুয়া উপজেলায়। এখানে বিএনপির শক্ত অবস্থান বলে দাবি করেন দলটির নেতা–কর্মীরা।

বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলেন, উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি ও দুবারের উপজেলা চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। যদিও যাচাই-বাছাইয়ে গত মঙ্গলবার তথ্য গোপনের অভিযোগে তাঁর প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে। তিনি ইতিমধ্যে আপিল করেছেন। সারা দেশের ন্যায় বিএনপি নির্বাচন না করলেও দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হলেও নানা কারণে শাফায়েত আজিজ জিতে যেতে পারেন। তাঁকে ঠেকাতেই এই কৌশল নিয়েছে উপজেলা বিএনপি।

এই বিষয় স্পষ্ট হয়েছে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোছাইনের কথায়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দলের সিদ্ধান্ত না মেনে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ ভোট করছেন। তিনি যাতে ‘অফ’হয়ে যান, সে জন্য কৌশলগত কারণে বিএনপি একক প্রার্থী ঘোষণা করেছে।

বিএনপির একক প্রার্থীর বিষয়ে শাফায়েত আজিজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘উপজেলা বিএনপির একক প্রার্থী ঘোষণা একান্তই তাঁদের বিষয়। তাঁরা সিনিয়র নেতা, এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না।’

আগামী ২১ মে দ্বিতীয় ধাপে সারা দেশে ১৬০ উপজেলায় নির্বাচন হবে। এর মধ্যে পেকুয়াও রয়েছে। ৩০ এপ্রিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। এর মধ্যে বাছাইয়ে বিএনপির একক প্রার্থী চেয়ারম্যান পদের কামরান জাদিদ, ভাইস চেয়ারম্যান পদের আহসান উল্লাহ এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদের রাজিয়া বেগমের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়। এর পর থেকে তিন প্রার্থীই জোরেশোরে গণসংযোগ করছেন। ইতিমধ্যে চেয়ারম্যান প্রার্থী কামরান জাদিদ টৈটং, পেকুয়া সদর, বারবাকিয়া, শিলখালী, রাজাখালী ইউনিয়নে গণসংযোগ করেছেন। তিনি দলীয় ভোট টানার চেষ্টা করছেন।

দলীয় সূত্র জানায়, ১৫ এপ্রিল বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত হয়। এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘পেকুয়া বিএনপি আবেগের বশে এই ভুল করে ফেলেছে। এ জন্য আমরা উপজেলা বিএনপিকে ওয়ার্নিং দিয়েছি। আমরা ভোট বর্জন করেছি, সেটাতেই আছি।’

আরও পড়ুন