আবু সাঈদ হত্যা
রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টরকে ‘ইন্ধনদাতা’ বলার প্রতিবাদে মানববন্ধন–বিক্ষোভ
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শরিফুল ইসলামকে ‘হামলাকারী’ ও ‘ইন্ধনদাতা’ বলার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। আজ মঙ্গলবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। কর্মসূচিতে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন।
কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ আবু সাঈদ হত্যার মূল আসামিদের অনেককে এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি। যাঁরা হেলমেট মাথায় দিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছিলেন, ঘটনার সময় উসকানি দিয়েছিলেন, তাঁরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। তখন প্রক্টরের দায়িত্ব পালন করা শরিফুল ইসলামকে ‘হামলাকারী’ বানানোর অপতৎপরতা চালাচ্ছে একটি পক্ষ।
মানববন্ধনে পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী খোকন ইসলাম বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম ২ মার্চ জানিয়েছেন, আবু সাঈদ হত্যায় শরিফুল ইসলামসহ অনেকে ইন্ধন জুগিয়েছেন। তাঁরা তাঁর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করছেন। শরিফুল ইসলাম প্রক্টর থাকাকালে তাঁর দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হতে পারেন; কিন্তু হত্যাকারী নন। শরিফুল ইসলামকে ‘হামলাকারী’ বানিয়ে মামলাটি অন্য খাতে নেওয়া হচ্ছে কি না, তা নিয়ে তাঁরা শঙ্কা প্রকাশ করছেন।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী উম্মে জেবিন বলেন, শহীদ আবু সাঈদ হত্যার আট মাস হতে চলেছে। কিন্তু মামলার অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। পুলিশের নির্দেশদাতা কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। একইভাবে হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকসহ ছাত্রলীগ, যুবলীগের শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। এখন প্রক্টরকে প্রধান আসামি হিসেবে দেখানোর চেষ্টা চলছে। নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে আসামিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি করেন তিনি।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে চলাকালে গত বছরের ১৬ জুলাই রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে মারা যান। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় একাধিক ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ১৬ জুলাই আন্দোলনকারীদের কর্মসূচির সময় ঘটনাস্থলে আবু সাঈদকে খুব কাছ থেকে গুলি করে পুলিশ। এ সময় এক হাতে লাঠি নিয়ে দুই হাত প্রসারিত করে বুক পেতে দেন সাঈদ। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি লুটিয়ে পড়েন।
গত ১৮ নভেম্বর আবু সাঈদ হত্যা মামলায় তৎকালীন প্রক্টর ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শরিফুল ইসলামকে আটক করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ১৯ নভেম্বর তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। এর পর থেকে তিনি কারাগারে আছেন। গত ২ মার্চ আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডে শরিফুল ইসলামসহ চারজনকে আগামী ৯ এপ্রিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দেন আদালত।