গাবতলীতে গৃহবধূকে বেঁধে মধ্যরাত পর্যন্ত নির্যাতন, লজ্জায় স্বামীর ‘আত্মহত্যা’

বগুড়ার গাবতলী উপজেলার এক দাদন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে সুদে ৩৬ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলেন এক গৃহবধূ। মাস চারেকের ব্যবধানে সুদে-আসলে লাখ টাকা দাবি করেন দাদন ব্যবসায়ী। সেই টাকা জোগাড় করতে বাবার বাড়ি যাচ্ছিলেন গৃহবধূ। পথে গৃহবধূকে একা পেয়ে তাঁকে একটি বাঁশবাগানে বেঁধে রেখে মধ্যরাত পর্যন্ত নির্যাতন করেন দাদন ব্যবসায়ী ও তাঁর সহযোগীরা। পাশাপাশি তাঁর স্বামীকে খবর দেন, টাকা দিয়ে স্ত্রীকে ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে। অন্যথায় অনৈতিক কাজ করিয়ে টাকা আদায় করার হুমকি দেওয়া হয়। বাধ্য হয়ে গৃহবধূর স্বজনেরা দাদনের টাকা দিয়ে ওই গৃহবধূকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান।

এ ঘটনায় লোকলজ্জায় ও ক্ষোভে ওই গৃহবধূর স্বামী ‘আত্মহত্যা’ করেছেন। ঘটনাটি জানাজানি পর এলাকাবাসী বিক্ষোভ শুরু করলে পুলিশ ওই দাদন ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে এবং মারা যাওয়া ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় আজ রোববার ওই গৃহবধূ বাদী হয়ে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে দাদন ব্যবসায়ী ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছেন।

এলাকাবাসী ও মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে গ্রামের দাদন ব্যবসায়ী গোলজার রহমানের কাছ থেকে ৩৬ হাজার টাকা ধার নেন ওই গৃহবধূ। টাকা নেওয়ার সময় বন্ধক হিসেবে দেড় ভরি স্বর্ণালংকার, দুটি ফাঁকা চেকের পাতা ও জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি জমা রাখেন। চার মাসের ব্যবধানে ধার নেওয়া ৩৬ হাজার টাকা সুদ-আসলে লক্ষাধিক হয়েছে দাবি করে তা পরিশোধের জন্য চাপ দিচ্ছিলেন গোলজার।

এলাকাবাসী জানান, গোলজারের চাপের কারণে টাকার ব্যবস্থা করতে গৃহবধূ শনিবার তাঁর বাবার বাড়ি যাচ্ছিলেন। পথে দাদন ব্যবসায়ী গোলজার ও তাঁর সহযোগীরা রাস্তায় তাঁকে একা পেয়ে ধাওয়া দেন। এ সময় ভয়ে তিনি দৌড়ে একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন। ওই বাড়িতে ঢুকে গোলজার ও তাঁর সহযোগীরা গৃহবধূকে ধরে একটি বাঁশবাগানে নিয়ে বেঁধে রাখেন। এরপর গোলজার ওই গৃহবধূর স্বামীকে খবর দিয়ে স্ত্রীকে ছাড়িয়ে নিতে বলেন। অন্যথায়, তাঁর স্ত্রীকে দিয়ে অনৈতিক কাজ করিয়ে টাকা আদায় করবেন বলে হুমকি দেন। গৃহবধূকে বেঁধে রাখার বিষয়টি তাঁর বাবার বাড়ির লোকজন জানতে পেরে শনিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে মেয়েকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান তাঁরা।

এদিকে দাদন ব্যবসায়ী স্ত্রীকে বেঁধে রেখে অপমান করায় লোকলজ্জা ও ক্ষোভে ভোররাতেই গলায় ফাঁস দিয়ে ‘আত্মহত্যা’ করেন তাঁর স্বামী। সকালে পুলিশ তাঁর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে দাদন ব্যবসায়ী গোলজারসহ তাঁর সহযোগীদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন এলাকাবাসী। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে দাদন ব্যবসায়ী গোলজারকে গ্রেপ্তার করে।

গাবতলী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সনাতন চন্দ্র সরকার বলেন, ওই ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় ওই গৃহবধূ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। ওই মামলায় গোলজারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।