দুই প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়ে কষ্ট আমির-রাশিদা দম্পতির

প্রতিবন্ধিতার কারণে রাকিব হোসাইন ও তার বোন সামিয়া আক্তার জন্মের পর থেকেই হাঁটাচলা করতে পারে না। সম্প্রতি এই শিশুদের এক আত্মীয়ের বাড়িতে তোলা ছবিছবি: প্রথম আলো

১৪ বছর বয়সী রাকিব হোসাইন ও ১১ বছর বয়সী সামিয়া আক্তার জন্মের পর থেকেই হাঁটাচলা করতে পারে না। অন্যের সাহায্য ছাড়া খাওয়াদাওয়া ও নিত্যনৈমিত্তিক কাজও করতে পারে না। প্রতিবন্ধী এই দুই সন্তানকে নিয়ে জীবন কাটছে আমির হোসেন ও রাশিদা বেগম দম্পতির। দারিদ্র্যের কারণে এই দুই সন্তানের চিকিৎসা করাতে পারছেন না তাঁরা। রাকিব ও সামিয়াদের বাড়ি শরীয়তপুর সদর উপজেলার চিতলিয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিমপাড় গ্রামে।

স্থানীয় লোকজন ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আমির হোসেন ও রাশিদা বেগমের দুই মেয়ে ও এক ছেলে। ২০০৯ সালে জন্ম হয় ছেলে রাকিব হোসাইনের। জন্মের সময়ই তার দুটি পা বাঁকা ও চিকন ছিল। তখন তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য পরবর্তীকালে যোগাযোগ করতে বলা হয়। কিন্তু তাঁরা আর চিকিৎসকের কাছে যাননি।

২০১২ সালে ওই দম্পতির ঘরে সামিয়া আক্তারের জন্ম হয়। রাকিবের মতো সামিয়ারও একই ধরনের শারীরিক সমস্যা। তারা যত বড় হতে থাকে, তাদের শারীরিক সমস্যা আরও প্রকট হতে থাকে। দরিদ্র পরিবার হওয়ায় টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসার জন্য আর কখনো চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাননি মা–বাবা। রাকিব ও সামিয়ার পা চিকন ও বাঁকা। তাদের হাতেও কোনো শক্তি নেই। মা–বাবা তাদের কোলে নিয়ে চলাফেরা করতে সাহায্য করেন। খাবার খাওয়া ও নিত্যনৈমিত্তিক কাজে সাহায্য করেন পরিবারের সদস্যরা।

আমির হোসেন বলেন, পৈতৃকসূত্রে পাওয়া তাঁর ৪ শতাংশ জমি থাকলেও এতে কোনো থাকার ঘর নেই। এলাকায় কৃষিশ্রমিকের কাজ করে সে আয় দিয়ে পরিবার নিয়ে চলতে পারছিলেন না তিনি। এ জন্য ঢাকায় গিয়ে মহল্লায় ঘুরে ঘুরে মাছ বিক্রি শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে স্ত্রী ও অসুস্থ দুই শিশুকে ঢাকায় নিয়ে যান। মাছ বিক্রির আয় দিয়েও এখন আর চলতে পারেন না। প্রতিবন্ধী দুই ছেলে-মেয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে প্রতিবন্ধী ভাতা পায়। তাঁদের আরেক মেয়েকে আত্মীয়স্বজনের সহায়তায় কিশোরী বয়সে বিয়ে দিয়ে দেন।

আমির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি অসহায় পিতার মতো সন্তানদের নিয়ে কষ্টের জীবন পার করছি। টাকার অভাবে সন্তানদের চিকিৎসা করাতে পারছি না।’
রাশিদা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিবন্ধী দুই সন্তান নিয়ে স্বামীর সঙ্গে ঢাকায় থাকি। ঘরভাড়া, সংসার খরচ চালাতে পারছি না। ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। গ্রামে এসে থাকব, তার ব্যবস্থাও নেই। বাড়িতে সামান্য জমি থাকলেও ঘর নেই। টাকার অভাবে সন্তানদের পড়ালেখা ও চিকিৎসা করাতে পারছি না।’

আমির হোসেন তাঁর প্রতিবন্ধী দুই শিশুসন্তান নিয়ে কষ্টে আছেন বলে জানিয়েছেন চিতলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, তাঁদের দুটি প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাঁদের একটি ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে পারেননি।

শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোনো মা–বাবা তার প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়ে কষ্টে আছেন, এমন তথ্য আমাদের জানা নেই। তাঁরা যদি আবেদন করেন, তাহলে সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিতে পারব। প্রয়োজনে ওই শিশুদের চিকিৎসা করানোর উদ্যোগ নিতে পারব।’