‘লাখ টাকায় বিক্রি’ হওয়া নবজাতক উদ্ধার, পরিচয় নিশ্চিতে হবে ডিএনএ পরীক্ষা

নড়াইল থেকে উদ্ধার নবজাতক বর্তমানে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান–স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) রানিমা বেগমের কাছে আছে
ছবি: সংগৃহীত

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে থেকে গত ২৪ জানুয়ারি নবজাতক চুরির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার ২৩ দিন পর গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে নড়াইলের কালিয়া উপজেলা থেকে এক নবজাতককে উদ্ধার করেছে খুলনার সোনাডাঙ্গা থানা-পুলিশ। হাসপাতালের সামনে থেকে চুরি হয়ে যাওয়া ছেলে নবজাতকের মা রানিমা বেগম দাবি করছেন, নড়াইল থেকে উদ্ধার হওয়া নবজাতকটি তাঁর সন্তান। এদিকে কালিয়ার পারকৃষ্ণপুর গ্রামের একটি পরিবার ১ লাখ ৮০ হাজার টাকায় ওই নবজাতককে কিনেছেন বলে দাবি করছেন।

পুলিশ জানিয়েছে, উদ্ধার শিশুটি বর্তমানে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান–স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) রানিমা বেগমের কাছে আছে। তবে রানিমা বেগমের কাছে নবজাতকটি হস্তান্তর করা হয়নি। শিশুটি রানিমা বেগমের সন্তান কি না, সেটি নিশ্চিতের জন্য ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে।

আরও পড়ুন

রানিমা বেগম বলেন, নড়াইল থেকে উদ্ধার নবজাতকটিই তাঁর হারিয়ে যাওয়া ছেলে। জন্মের পর তিনি নিজের ছেলেকে যেমন দেখেছিলেন, উদ্ধার হওয়া শিশুটির চেহারার সঙ্গে সেটি মিলে যাচ্ছে। হারিয়ে যাওয়া ছেলেকে অক্ষত অবস্থায় কোলে পেয়ে তিনি খুব খুশি। এক মেয়ে জন্মের প্রায় ১৩ বছর পর তিনি ছেলেসন্তান জন্ম দিয়েছেন।

এর আগে গত ২৪ জানুয়ারি বিকেলে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে থেকে নবজাতকটি চুরি করে নিয়ে যায় একটি চক্র। এ ঘটনার পর নবজাতকের নানা বাদী হয়ে সোনাডাঙ্গা থানায় মামলা করেন। ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ইতিমধ্যে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও র‍্যাব। তবে যেই নারী ওই শিশুকে চুরি করে নিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সোনাডাঙ্গা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তোফায়েল আহমেদ বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে, নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পারকৃষ্ণপুর গ্রামের একটি পরিবার ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিয়ে নবজাতক ছেলে কিনেছেন। পরে গতকাল সেখানে অভিযান চালিয়ে নবজাতকটি উদ্ধার করা হয়েছে। শিশুটিকে যাঁরা কিনেছেন বলে দাবি করছেন, তাঁদেরও থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল পেলে নবজাতকের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে খুলনা থেকে চুরি হয়ে যাওয়া ওই নবজাতকের সঙ্গে নড়াইল থেকে উদ্ধার নবজাতকের বয়সের মিল আছে।

চুরি যাওয়া নবজাতকের মামা মো. মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেছিলেন, তাঁর বোন রানিমা বেগম একজন দিনমজুর। তাঁর ভগ্নিপতিও একই কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাঁদের বাড়ি বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলায়। ঘটনার দিন সকালে প্রসববেদনা উঠলে তাঁর বোনকে ফকিরহাট থেকে অ্যাম্বুলেন্সে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। ওই দিন দুপুরে ছেলেশিশু জন্ম দেন তাঁর বোন। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁদের ছাড়পত্র দেয়।

এরপর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে গাড়ি ভাড়া নিয়ে এক চালকের সঙ্গে তাঁদের কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ওই চালক গাড়ির চাবি দিয়ে তাঁর মাথায় আঘাত করেন। এর মধ্যে আরও কয়েকজন চালক তাঁর ওপর চড়াও হন। গাড়িচালকদের সঙ্গে একজন নারীও ছিলেন। এ সময়ের নবজাতকটি তাঁর আরেক বোন সোনিয়া বেগমের কোলে ছিল। বাগ্‌বিতণ্ডার একপর্যায়ে চালকের সঙ্গে থাকা এক নারী সোনিয়া বেগমের কাছ থেকে কৌশলে নবজাতকটি নিয়ে পালিয়ে যান।