‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণার ছয় দিন পর এলাকায় সমশের মবিন চৌধুরী

সিলেটের গোলাপগঞ্জে রোববার রাতে পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন সমশের মবিন চৌধুরী
ছবি: প্রথম আলো

বিএনপির সাবেক নেতা ও তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন সমশের মবিন চৌধুরীকে তাঁর নিজ এলাকায় ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করেছিল স্থানীয় বিএনপি। এমন ঘোষণার ছয় দিন পর গতকাল রোববার রাতে তিনি নিজের এলাকায় এসে বিভিন্ন পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন।

আরও পড়ুন

একটি টিভি চ্যানেলে দেওয়া সমশের মবিন চৌধুরীর একটি বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে সেটিকে ‘মিথ্যাচার’ আখ্যা দিয়ে ১৬ অক্টোবর বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা বিএনপি পৃথকভাবে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। এ সময় সমশের মবিনকে দলটির নেতারা দুই উপজেলাতেই অবাঞ্ছিত ঘোষণার পাশাপাশি কুশপুতুল দাহ করেন। এ সময় সমশের মবিনকে তাঁর বক্তব্য প্রত্যাহারেরও আহ্বান জানানো হয়।

সর্বশেষ গত শনিবার এ ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন করেন সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ) আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ফয়সল আহমদ চৌধুরী। তাঁর অভিযোগ, সম্প্রতি একটি টেলিভিশন চ্যানেলের আলোচনায় অংশ নিয়ে সমশের মবিন চৌধুরী বিএনপি ও তাঁর (ফয়সল) সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করেছেন। সমশেরের সঙ্গে তাঁর (ফয়সল) ফোনালাপের বিষয়টি অসত্য।

সংবাদ সম্মেলনে সেদিন ফয়সল আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘সমশের মবিন আমার ও স্থানীয় বিএনপি সম্পর্কে নানা বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করেছেন। তিনি (সমশের) বিএনপির রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার পর তাঁর সঙ্গে এখন পর্যন্ত ফোনে কিংবা সরাসরি কোনো কথা হয়নি। কিন্তু টিভি চ্যানেলে তিনি মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়ে আমার সঙ্গে ফোনালাপের বিষয়টি অবতারণা করেছেন। তাঁকে অবিলম্বে এ বক্তব্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানাচ্ছি।’

সমশের মবিন চৌধুরী সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। তিনি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০১৫ সালে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন। ২০১৮ সালের ৮ ডিসেম্বর বিকল্পধারা বাংলাদেশে যোগ দিয়ে পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হন। পরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৬ আসনে বিকল্পধারার মনোনয়নে তিনি প্রার্থী হন। যদিও নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে সমর্থন জানিয়ে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।

এলাকায় এসে রোববার রাতে সমশের মবিন চৌধুরী গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকাদক্ষিণে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর মন্দিরে দুর্গামণ্ডপ পরিদর্শন করেন। তাঁকে স্বাগত জানান শ্রীচৈতন্য মন্দির পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সদস্যরা। এ সময় তাঁর সঙ্গে তৃণমূল বিএনপির সিলেট জেলা শাখার আহ্বায়ক এম এ হান্নান, গোলাপগঞ্জ উপজেলা শাখার আহ্বায়ক সানাউল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পরে সমশের মবিন গোলাপগঞ্জের ভাদেশ্বর খমিয়াপাতন সর্বজনীন পূজামণ্ডপ এবং বিয়ানীবাজার উপজেলার কয়েকটি মণ্ডপ পরিদর্শন করেন।

পূজামণ্ডপ পরিদর্শনকালে সমশের মবিন চৌধুরী বলেন, এ দেশের মানুষ সব সময় অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী। এ দেশে কোনো ভেদাভেদ নেই। জাতি–ধর্ম–বর্ণ কোনো বিভাজন নেই। এ দেশ হলো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। সবার রয়েছে সমান অধিকার। এ দেশ হলো সব মানুষের।

১৬ অক্টোবর সমশের মবিনকে গোলাপগঞ্জে অবাঞ্ছিত ঘোষণার বিক্ষোভ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি নোমান উদ্দিন। সমশের মবিনের এলাকায় আসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা তাঁকে (সমশের) রাজনৈতিকভাবে উপজেলায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছি। বক্তব্য প্রত্যাহার না করলে তাঁকে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি করতে দেওয়া হবে না। বাড়িতে তিনি আসতেই পারেন।’