ময়মনসিংহের নেতাই নদের বালু লুট থামছে না, পুলিশ ও রাজনীতিকদের দুষলেন ইউএনও

ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় অবৈধভাবে নেতাই নদ থেকে বালু উত্তোলনে করে পাচারের সময় ১৮টি ট্রাক্টর ও ৫টি ট্রাক জব্দ করে উপজেলা প্রশাসন। আজ শুক্রবার ভোরে উপজেলার চাড়িয়াকান্দা এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

দফায় দফায় অভিযান চালানো হলেও ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার নেতাই নদ থেকে ‘লাল বালু’ লুট থামছে না। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে আজ শুক্রবার ভোর পর্যন্ত উপজেলা প্রশাসনের অভিযানে বালুভর্তি ১৮টি ট্রাক্টর ও ৫টি ট্রাক জব্দ করা হয়েছে। তবে আটক করা যায়নি বালু উত্তোলন ও পাচার চক্রের কাউকে।

নেতাই নদ ভারতের মেঘালয় থেকে উৎপন্ন হয়ে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার ঘোষগাঁও ইউনিয়ন দিয়ে প্রবেশ করে দক্ষিণ মাইজপাড়া, গামারীতলা ও পোড়াকান্দুলিয়া ইউনিয়ন হয়ে নেত্রকোনার কংস নদে মিশেছে। উচ্চ আদালতের আদেশে নেত্রকোনার দুর্গাপুরের সোমেশ্বরী নদী থেকে লাল বালু উত্তোলন বন্ধ হওয়ার পর থেকে নেতাই নদের বালুর চাহিদা বেড়ে যায় এ অঞ্চলে।

উপজেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, রাতে দুই পালায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি)। গতকাল দিবাগত রাত ১২টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত সহকারী কমিশনার (ভূমি) নুসরাত জাহান ৪টি ট্রাক্টর জব্দ করেন। ভোর ৪টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত ইউএনও উজ্জ্বল হোসেন ১৪টি ট্রাক্টর ও ৫টি ট্রাক জব্দ করেন। উপজেলার বাঘবেড় ইউনিয়নের চাড়িয়াকান্দা এলাকা থেকে এসব যানবাহন আটক করা হয়। ঘোষগাঁও ইউনিয়নের কালিকাবাড়ি, রায়পুর ও কামাক্ষ্যা মন্দির এলাকা থেকে বালুভর্তি যানবাহনগুলো আসছিল। তবে বালু উত্তোলনকারীদের কাউকে পাওয়া যায়নি। গাড়িগুলোর মালিকদের হাজির করার জন্য দুই দিনের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

ধোবাউড়া উপজেলার ঘোষগাঁও ইউনিয়নের কালিকাবাড়ি, রায়পুর ও কামাক্ষ্যা মন্দির এলাকা থেকে বালুভর্তি হয়ে আসা যানবাহন জব্দ করে প্রশাসন
ছবি: প্রথম আলো

ধোবাউড়ার ইউএনও উজ্জ্বল হোসেন বলেন, ‘নিজেদের প্রশাসনিক কাজের বাইরে প্রতিদিন রাত জেগে আমরা বালু উত্তোলন ও পাচার রোধে কাজ করছি। গত এক মাসে ১০০–এর ওপর গাড়ি জব্দ করা হয়। গাড়িগুলো ৫০ হাজার টাকা বা বিভিন্ন পরিমাণে জরিমানা করা হয়। জব্দ বালু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দেওয়া হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘যারা বালু উত্তোলন চক্রে জড়িত, তাদের শনাক্ত করে সবার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া আছে। কিন্তু ওরা জেলখানায় নেই, বাইরে ঘুরছে। আমার কাজ তো মামলা দেওয়া, আসামি ধরা তো আমার কাজ নয়। বালু উত্তোলনে যারা জড়িত, ভ্রাম্যমাণ আদালতের সময় তাদের পাওয়া যায় না। মূল মালিক যারা আছে, তাদের প্রত্যেকের নামে ১০ থেকে ১২টি করে মামলা দেওয়া আছে। বালু উত্তোলনে স্থানীয় আমজনতা ও কিছু রাজনৈতিকও জড়িত।’

স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, নেতাই নদ–তীরবর্তী বল্লভপুর, রায়পুর, ভালুকাপাড়া, কালিকাবাড়ি ঘাট ও কামাক্ষ্যা মন্দিরসহ অন্তত ৫০টি পয়েন্টে বালু উত্তোলন হয়। শ্রমিকেরা নৌকায় বালু তুলে বিভিন্ন স্থানে জড়ো করেন, সেখান থেকে ট্রাক ও ট্রাক্টরে করে বালু পাচার হয়। গত এক মাসে জব্দ করা প্রায় ১০০টি যানবাহনের বালু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গর্ত ভরাটে ব্যবহার করা হয়েছে। অবৈধ উত্তোলনের কারণে উপজেলা প্রশাসন বাদী হয়ে ধোবাউড়া থানায় তিনটি মামলা করেছে।

ধোবাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আল মামুন সরকার বলেন, ‘প্রশাসনের করা মামলার তদন্ত শেষে আমরা চার্জশিট দিয়েছি। বালু নিয়ে পুলিশ একা ভূমিকা নিতে পারে না। উপজেলা প্রশাসনকে সহায়তা করা হচ্ছে। ৯৫ শতাংশ বালু উত্তোলন বন্ধ রয়েছে, তবে কিছু লোক গোপনে এখনো করছে।’