প্রধান শিক্ষকের কক্ষে তালা, চেয়ার ঝুলছে আমগাছে
রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটা পৌরসভার একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে ৪৮ ঘণ্টা ধরে তালা ঝুলছে। অফিসকক্ষে তাঁর বসার চেয়ার ঝুলছে বিদ্যালয়ের পাশে থাকা একটি আমগাছে। প্রধান শিক্ষক নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত বলে জানিয়েছেন।
বিদ্যালয়ের কমিটি নিয়ে বিরোধ চলছে। এর জেরে বিএনপির দুই পক্ষের দ্বন্দ্বে এ ঘটনা ঘটেছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। এ ঘটনায় প্রধান শিক্ষক থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
প্রধান শিক্ষক মোসা. মঞ্জু মনোয়ারার দাবি, গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নওহাটা পৌরসভার বাগধানী উচ্চবিদ্যালয়ে তাঁকে টেনেহিঁচড়ে বের করে তালা দেওয়া হয়। বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা তাঁকে মারধরও করেছেন। এ ঘটনায় তাঁর চেয়ার পাশেই একটি পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়। তবে আজ সেই চেয়ার বিদ্যালয়ের পাশে একটি আমগাছে ঝুলিয়ে রেখেছে কে বা কারা। প্লাস্টিকের দড়ি দিয়ে চেয়ারটি বেঁধে রাখা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘আজ সকালে বিদ্যালয়ে এসে দেখি, তালা দেওয়াই আছে। চেয়ারটি ভাঙচুর করে পুকুরে ফেলা হয়েছিল। আজকে চেয়ারটি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে নৈশপ্রহরীকে জিজ্ঞাসা করলে জানান, তিনি সকাল থেকে চেয়ারটি আমগাছে ঝুলতে দেখছেন। রাতে কারা এটা করেছে, তিনি এটা জানেন না।’ ওই প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, এই চেয়ার আমগাছে যারা ঝুলিয়েছে, তারা হয়তো একটি বার্তা দিতে চাইছে। তিনি ভয়ে ও শঙ্কায় আছেন। এখন পর্যন্ত কেউ তাঁর বিদ্যালয়ে আসেননি।
বিদ্যালয়, স্থানীয় লোকজন ও স্থানীয় বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, বাগধানী উচ্চবিদ্যালয়ে ৫ আগস্টের আগে নওহাটা পৌরসভার মেয়র ও পবা উপজেলার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান সভাপতি ছিলেন। পরে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে। গত ফেব্রুয়ারিতে এক অধ্যাদেশে আবার বিদ্যালয়গুলোতে কমিটি গঠনের নির্দেশনা আসে। পরে গত ৩ মার্চ এই বিদ্যালয়ে কমিটির সভাপতি হন বিএনপি–সমর্থিত মামুন-অর-রশিদ নামের একজন। তিনি নওহাটা পৌরসভা বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলামের শ্যালক।
রফিকুল ইসলামের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর নাজিম উদ্দিন মোল্লা ওরফে নজির। তিনিও পৌরসভা বিএনপির সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। নজির পৌরসভা বিএনপির সাবেক সভাপতি শেখ মো. মকবুল হোসেনের ঘনিষ্ঠ। এই পক্ষ বিদ্যালয়ের এই কমিটিকে মেনে নেয়নি। মঙ্গলবার কমিটির লোকজনকে নিয়ে সভা করার কথা ছিল প্রধান শিক্ষকের। সেখানে পৌরসভা বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলামের যাওয়ার কথা ছিল। তবে তিনি যাওয়ার আগে সেখানে একপর্যায়ে উত্তেজনা ছড়ায়। পরে দুই পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। একপর্যায়ে প্রধান শিক্ষককে বাইরে বের করে তাঁর কক্ষে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়।
পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর নাজিম উদ্দিন মোল্লা বলেন, তিনি সেখানে পৌর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলামকে সংবর্ধনা দেবে বলে দেখতে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে তিনি বলেছেন, কেন বাগধানীর বাইরে থেকে স্কুলের সভাপতি করা হয়েছে। এ ছাড়া আর কিছু হয়নি সেখানে। তিনি বা তাঁরা সেখানে প্রধান শিক্ষককে মারধর, বের করে দেওয়া কিংবা ভাঙচুর করেননি।
পৌর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেছেন, তাঁর সেখানে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি তাঁর ওপরের নেতাদের নির্দেশে সেখানে যাননি। ওই বিদ্যালয়ের কমিটির সবাই মিলে বসে নাম ঠিক করেছিলেন। সেটার কারণে প্রধান শিক্ষককে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে মতানৈক্য থাকতেই পারে। সেটার প্রভাব বিদ্যালয়ে পড়া ঠিক নয়। এ ব্যাপারে দোষীদের শাস্তি হওয়া উচিত।