রাত জেগে পেঁয়াজখেত পাহারা

মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজ পুরোপুরি পুষ্ট হতে এখনো ৭ থেকে ১০ দিন সময় লাগবে। এসব জমির পেঁয়াজই চুরি হয়ে যাচ্ছে।

পাবনার সাঁথিয়ায় পেঁয়াজের খেতের পাশে বসানো হয়েছে অস্থায়ী ছাউনি। রাতের বেলা এসব ছাউনিতে বসে কৃষকেরা পাহারা দেনছবি: প্রথম আলো

পেঁয়াজের ভান্ডার বলে পরিচিত পাবনার সাঁথিয়া উপজেলায় এখন প্রতি কেজি পেঁয়াজ পাইকারি ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজের ভরা মৌসুমে এমন দাম অনেকটাই অস্বাভাবিক। আর এই অস্বাভাবিক দামের কারণে প্রতি রাতেই খেত থেকে চুরি হচ্ছে পেঁয়াজ। চুরি ঠেকাতে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন উপজেলার পেঁয়াজচাষিরা। কোনো কোনো পেঁয়াজচাষি আবার চোরের ভয়ে পুষ্ট হওয়ার আগেই খেত থেকে পেঁয়াজ তুলে ফেলছেন।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সাঁথিয়া উপজেলায় এবার ১৭ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছে আগাম বা মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজ। বাকি সাড়ে ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে হালি জাতের পেঁয়াজ আবাদ করা হয়েছে। দেড় মাসের বেশি সময় ধরে কৃষকেরা মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজ খেত থেকে তুলে বাজারে বিক্রি করছেন। এখনো ২০০ হেক্টর জমির মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজ তোলা বাকি রয়েছে। দেরিতে লাগানো হয়েছিল বলে এসব জমির পেঁয়াজ পুরোপুরি পুষ্ট হতে এখনো ৭ থেকে ১০ দিন সময় লাগবে। এসব জমির পেঁয়াজই চুরি হয়ে যাচ্ছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার পুণ্ডরিয়া গ্রামে গিয়ে জানা যায়, গত এক সপ্তাহে গ্রামের ইমদাদুল হক, বাবুল হোসেন, মানিক হোসেন, মন্টু প্রামাণিকসহ অন্তত ১০ জন কৃষকের খেত থেকে পেঁয়াজ চুরি হয়ে গেছে। পাহারার মধ্যেও মন্টু প্রামাণিকের প্রায় তিন মণ পেঁয়াজ চুরি হয়েছে গত বুধবার রাতে।

স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে করে গতকাল দুপুরে পেঁয়াজ তুলছিলেন পুণ্ডরিয়া গ্রামের হাবুল সরদার। তিনি জানান, চুরি ঠেকাতে গ্রামের আরও ছয় থেকে সাতজনের সঙ্গে তিনি কয়েক দিন ধরে রাত জেগে গ্রামের পেঁয়াজখেত পাহারা দিচ্ছেন। তাই চোরের ভয়ে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে তিনি তাঁর জমির পেঁয়াজ তুলছেন। অথচ তাঁর পেঁয়াজ পুরোপুরি পুষ্ট হতে আরও অন্তত ১০ দিন সময় লাগত।

 একই গ্রামের আরেক পেঁয়াজচাষি আবদুল কাদেরকে দেখা যায়, জমি থেকে পেঁয়াজ তুলে ভ্যানে তুলছেন। তিনি বলেন, ‘এবার পেঁয়াজের ফলন ভালো হইছে। তা ছাড়া দামও খুব ভালো পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু ভালো দামের কারণে পেঁয়াজের খেতে চোরের উৎপাত খুব বাড়িছে। তাই পুরা পুষ্ট হওয়ার আগেই জমির সব পেঁয়াজ তুইল্যা নিত্যাছি।’

কৃষকেরা জানান, মুড়িকাটা পেঁয়াজখেতের সব পেঁয়াজই বেশ বড় হয়েছে। দুই হাতে একসঙ্গে হালকা করে গাছ ধরে টান দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ১০ থেকে ১২টা পেঁয়াজ উঠে আসে। তাই সুযোগমতো দুই-তিনজন চোর এসে ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যেই দুই-তিন মণ পেঁয়াজ তুলে বস্তায় ভরে নিয়ে যাচ্ছে।

পুণ্ডরিয়া গ্রাম ছাড়াও উপজেলার আফরা, বায়া, শহীদনগরসহ বেশ কিছু গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, চোরের ভয়ে পেঁয়াজের খেতের পাশে বসানো হয়েছে অস্থায়ী ছাউনি। রাতের বেলা কৃষকেরা কয়েকজন মিলে সেখানে বসে পেঁয়াজখেত পাহারা দেন। এ ছাড়া যেখানে পাহারা দেওয়া সম্ভব নয়, সেখানে পুষ্ট হওয়ার আগেই কৃষকেরা জমি থেকে পেঁয়াজ তুলে নিচ্ছেন।

সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার গোস্বামী বলেন, পেঁয়াজের এই ভরা মৌসুমে কৃষকেরা এবার ভালো দাম পাচ্ছেন। আর ভালো দামের কারণেই কোনো কোনো জায়গায় খেত থেকে পেঁয়াজ চুরি হচ্ছে। এ বিষয়ে আসলে তাঁদের তেমন কিছু করার নেই। তবে বিষয়টি সম্পর্কে শিগগিরই সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও থানায় জানানো হবে। থানা-পুলিশ ও গ্রাম পুলিশের প্রচেষ্টায় এ ক্ষেত্রে ফল পাওয়া যেতে পারে।