সড়কে টিনের ঘেরাও, অসহনীয় যানজটে মানুষের কষ্ট

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র‍্যাম্পের নির্মাণকাজের জন্য সড়কের এক স্থানে দেওয়া হয়েছে টিনের ঘেরাও। এতে সড়ক সংকুচিত হয়ে প্রতিদিন দেখা দিচ্ছে তীব্র যানজট। আজ দুপুরে সিডিএ অ্যাভিনিউর বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এলাকায়প্রথম আলো

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র‍্যাম্পের নির্মাণকাজের কারণে চট্টগ্রাম নগরের জিইসি মোড় থেকে ওয়াসা মোড় পর্যন্ত তীব্র যানজট সৃষ্টি প্রতিদিন। যানজটের ভোগান্তিতে পড়েছেন সড়কের দুই পাশে থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা। যানজটের পাশাপাশি ধুলার যন্ত্রণাও রয়েছে। যানজটের কারণে অনেক অভিভাবককে শিশুসন্তানদের নিয়ে হেঁটে চলাচল করতে হচ্ছে। গ্রীষ্মের সময় গরমের তীব্রতাও বেড়েছে। এমন পরিস্থিতি এই সড়কে যাতায়াতে যাত্রীদের দুর্ভোগ বেড়েছে।

নগরের লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত মূল এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী সিডিএ এক্সপ্রেসওয়ে নামে পরিচিত এই এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠা-নামার জন্য ১৫টি র‍্যাম্প থাকবে। এর একটি র‍্যাম্প নির্মাণ করা হচ্ছে জিইসি মোড় থেকে। সম্প্রতি এর নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ৪ হাজার ২৯৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয়ে এই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করছে।

র‍্যাম্পের নির্মাণকাজের জন্য সিডিএ অ্যাভিনিউতে সড়কের এক পাশে টিনের ঘেরাও দেওয়া হয়েছে। এতে সড়কের প্রশস্ততা কমেছে। নগরের জিইসি মোড় থেকে ওয়াসা মোড়মুখী সড়কের এক পাশে এই ঘেরাও দেওয়া হয়। তিন লেনের এই সড়ক এখন দেড় লেনে পরিণত হয়েছে।

সাপ্তাহিক ছুটির দিনে গাড়ির চাপ কম থাকায় যানজট না থাকলেও তিন দিন ধরে যানজট বেড়েছে। পৌনে এক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট পর্যন্ত সময় লাগছে। যানজট এড়াতে অনেক সময় উল্টো পথে গাড়ি চলাচল করছে।

জিইসি মোড়ের পেনিনসুলা হোটেলের সামনে থেকে র‍্যাম্প নির্মাণ করা হবে। এই র‍্যাম্প ওয়াসা মোড়ে গিয়ে মূল এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে মিশবে। এ জন্য সিডিএ অ্যাভিনিউয়ের পূর্ব পাশে টিনের ঘেরাও দেওয়া হয়েছে। সড়কের এই পাশে রয়েছে বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ। আছে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান কার্যালয়, হোটেলসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। সড়কের পশ্চিম পাশে রয়েছে সিএমপি স্কুল অ্যান্ড কলেজ। চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কার্যালয়।

র‍্যাম্পের জন্য টিনের ঘেরাও দেওয়ায় সিডিএ অ্যাভিনিউ সংকুচিত হয়ে পড়েছে। এতে প্রতিদিন যানজট লেগেই থাকে। আজ দুপুরে সিডিএ অ্যাভিনিউর বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এলাকায়
প্রথম আলো

গতকাল সোমবার ও আজ মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, সড়ক সংকুচিত হওয়ায় জিইসি মোড় থেকে গাড়ির জট শুরু হয়েছে। এই জট ওয়াসা মোড় পর্যন্ত আছে। গাড়ি চলাচল করছে খুবই ধীরগতিতে। অনেক সময় থেমে থাকতে হচ্ছে। গাড়ির চাপ কমানোর জন্য উল্টো পথে গাড়ি চলাচল করছে। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

যানজটের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পর্যন্ত যেতে পারছিল না শিক্ষার্থীদের বহনকারী রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, বাস ও ব্যক্তিগত গাড়ি। তাই সড়কের মাঝপথে নেমে পড়ছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। তারপর হেঁটে হেঁটে পথ পাড়ি দেন।

বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের স্কুল শাখার এক ছাত্রীর অভিভাবক উম্মে সালমা বলেন, দুপুরের পালায় মেয়ের স্কুল। যানজটের কারণে স্কুল থেকে অনেক দূরে নেমে যেতে হয়েছে। গরমের মধ্যে হেঁটে হেঁটে আসতে হয়েছে। মেয়েরও কষ্ট হচ্ছে, তাঁরও। দুর্ভোগ নিরসনের কোনো উদ্যোগও দেখা যাচ্ছে না। আবার গাড়ি চলাচলেও কোনো শৃঙ্খলা নেই। কখন কী দুর্ঘটনা ঘটে, তার আশঙ্কাও ভর করেছে।

মোটরসাইকেলে করে যাচ্ছিলেন চাকরিজীবী সাহাদাত হোসেন। জিইসি মোড় থেকে লালখান বাজারে যাওয়ার জন্য উল্টো পথ ব্যবহার করেন তিনি। তিনি বলেন, জিইসি মোড় থেকে লালখান বাজার যেতে সময় লাগে চার থেকে পাঁচ মিনিট। কিন্তু গাড়ির যে জট তাতে ৩০-৪০ মিনিটের আগে যাওয়া সম্ভব নয়। আবার অফিসের জরুরি কাজ আছে। তাই উল্টো পথে যাওয়া ছাড়া উপায়ও নেই।

নির্মাণকাজের কারণে সড়কে বিশৃঙ্খলা তৈরির প্রসঙ্গে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক ও সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, র‍্যাম্প নির্মাণের জন্য সড়ক থেকে ওয়াসার পাইপ ও বিদ্যুতের খুঁটি সরাতে হচ্ছে। এগুলোর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। র‍্যাম্পের নির্মাণকাজের জন্য ঘেরাও দেওয়া হয়েছে। নির্মাণকাজের জন্য অন্তত দুই মাস এ সমস্যা থাকবে। তবে সড়কে যানজট সহনীয় পর্যায়ে থাকে, সে জন্য পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করা হচ্ছে।