পটুয়াখালীতে আরও একজনের মৃত্যু, বেড়িবাঁধে ভাঙন

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ঝোড়ো হাওয়ায় গাছচাপা পড়ে পটুয়াখালীতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে জেলার দুমকি উপজেলার পাঙ্গাসিয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নলদোয়ানী জলকপাট এলাকার এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তির নাম জয়নাল হাওলাদার (৭০)। এ নিয়ে ঘূর্ণিঝড় রিমালে জেলায় মোট তিনজন মারা গেছেন। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সুমন কুমার দেবনাথ তিনজনের মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।  

ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলমগীর সিকদার বলেন, সকালে ঝোড়ো হাওয়া বইছিল। এ সময় জয়নাল হাওলাদার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘরে ছিলেন। একপর্যায়ে ঝোড়ো বাতাসে একটি গাছ ভেঙে ঘরের ওপর পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।

এর আগে রোববার দুপুরে সৈকত-সংলগ্ন ফুফুর বাড়িতে যাওয়ার সময় সাগরের ঢেউয়ে তলিয়ে যায় মো. শরীফুল ইসলাম (২৪)। এক ঘণ্টা পর ঘটনাস্থলের কাছ থেকে মৃত শরীফুলকে উদ্ধার করেন স্থানীয় মানুষেরা। শরীফুল পটুয়াখালীর কলাপাড়ার ধুলাশ্বর ইউনিয়নের অনন্তপাড়া গ্রামের আবদুর রহিমের ছেলে। আর বাউফলে পরিত্যক্ত ঘরে চাপা পড়ে মো. করিম (৬৫) নামের এক ব্যক্তি মারা গেছেন। তাঁর বাড়ি উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের ধানদি গ্রামে। সে উপজেলা শহরে ভিক্ষা করে রাতে ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে শহরের রাস্তার পাশে পরিত্যক্ত পড়ে থাকা ওই ঘরে আশ্রয় নিয়েছিল। রোববার রাতে ঘরটি ভেঙে পড়ে এবং ঘরের নিচে চাপা পড়ে করিম মারা যান বলে স্থানীয় মানুষেরা জানিয়েছেন।

এদিকে দিনভর পটুয়াখালী জেলা শহর বিদ্যুৎবিহীন। মোবাইল নেটওয়ার্ক দুর্বল হয়ে পড়েছে। ঝোড়ো বাতাস ও বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। দুদিন ধরে ঝোড়ো বাতাস ও জোয়ারে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল এলাকা ৫ থেকে ৮ ফুট জলোচ্ছ্বাসের প্লাবিত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।  

গলাচিপা উপজেলার চরবিশ্বাস ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল। ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান তোফাজ্জেল হোসাইন জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ৫৫/৩ পোল্ডারের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ ভেঙে পূর্ব চরবিশ্বাসের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। চরবাংলায় কোনো বেড়িবাঁধ না থাকায় তেঁতুলিয়া নদীর জোয়ারে প্রায় দুই হাজার বাসিন্দা পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। পটুয়াখালী-গলাচিপা উপজেলা সড়কের সুহরি জলকপাটের সংযোগ সড়ক জলোচ্ছ্বাসের কারণে ভেঙে গিয়েছে। সকাল থেকে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। রাঙ্গাবালী উপজেলার চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের ৪৯ পোল্ডারের বিভিন্ন পয়েন্টে এক কিলোমিটার ও চর মোন্তাজ ইউনিয়নের ৫৫/৪ পোল্ডারের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধের বিভিন্ন পয়েন্টে দেড় কিলোমিটার ভেঙে ও বাঁধ উপচে জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে।

এদিকে সোমবার দুপুরে জোয়ারের পানি বেড়ে জেলা শহরে ঢুকে পড়েছে। বাসাবাড়িতে এখন মানুষ ঘরবন্দী হয়ে রয়েছেন। পাউবোর পটুয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফ হোসেন বলেন, জেলায় ১৪ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে বিভিন্ন অংশে অন্তত ৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাঁধ উপচে জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্লাবিত হচ্ছে। দুপুরে জোয়ারের সময় নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

জেলা আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মাহবুবা সুখী জানান, সোমবার বেলা ১টা ১৭ মিনিটে বাতাসের সর্বোচ্চ গতি ১১৪ দশমিক ৭ কিলোমিটার রেকর্ড করা হয়েছে। রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ২১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ।

এদিকে জোয়ারে জেলার মাছের ঘের ও পুকুর প্লাবিত হয়ে কোটি কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম জানান, ৭৭৫টি মাছের ঘের ও ৯ হাজার ১৫০টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। ১২০টি কাঁকড়ার খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার ক্ষতির পরিমাণ ২৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এ ছাড়া অবকাঠামো ক্ষতি হয়েছে ১৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সুমন দেবনাথ জানান, রোববার থেকে এখন পর্যন্ত দুই হাজারের বেশি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ২৩৫টি বাড়িঘর সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ হাজার ৮৪৫টি বাড়ি। গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ৫৯ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে প্রশাসন কাজ করছে।