কুমারখালী পৌরসভায় কিলঘুষিতে গাড়িচালকের মৃত্যুর অভিযোগ, অভিযুক্ত কর্মচারীর বাড়ি ভাঙচুর
কুষ্টিয়ার কুমারখালী পৌরসভায় বকেয়া বেতন নিয়ে তর্কাতর্কির একপর্যায়ে কর্মচারীর কিলঘুষিতে এক গাড়িচালকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। আজ বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পৌর ভবনের একটি কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। পরে অভিযুক্ত ব্যক্তির বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা। একপর্যায়ে পৌর ভবনের প্রধান ফটক আটকে বিক্ষোভ করেন তাঁরা।
মারা যাওয়া ব্যক্তির নাম শহিদুল আলম (৫৭)। তিনি পৌর এলাকার শেরকান্দি এলাকার বাসিন্দা। অন্যদিকে অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম ফিরোজুল ইসলাম। তিনিও পৌর এলাকার শেরকান্দির বাসিন্দা এবং পৌরসভার সার্ভেয়ার হিসেবে কর্মরত।
শহিদুলের মেয়ে সুবর্ণা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, ‘পৌরসভায় বড় কর্মচারীদের নিয়মিত বেতন হয়। আমার বাবা ছোট কর্মচারী। তাঁর বেতন হচ্ছিল না। আজ সকালে বেতন চাইতে গেলে পৌরসভার সার্ভেয়ার মো. ফিরোজুল ইসলাম বাবাকে ব্যাপক কিলঘুষি ও লাথি মেরে হত্যা করে। পরে লাশটি পৌরসভার ১০১ নম্বর কক্ষে আটকে রেখেছিল। আমি থানায় মামলা করব। আসামিদের ফাঁসি চাই।’
পুলিশ, পৌরসভা ও স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সূত্রে জানা গেছে, প্রথম শ্রেণির কুমারখালী পৌরসভায় প্রায় ৫৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন। তাঁরা ৪২ মাসের বকেয়া বেতন বাবদ ১০ কোটি টাকা বেতন পাবেন। আজ সকালে বেতনের দাবিতে পৌরসভার বিভিন্ন কক্ষের দরজা বন্ধ করে দেন গাড়িচালক শহিদুল ইসলাম। ওই সময় সার্ভেয়ার ফিরোজুলের কক্ষটি (১১৫ নম্বর) বন্ধ করতে যান। তখন ফিরোজুলের সঙ্গে শহিদুলের তর্কাতর্কি হয়। একপর্যায়ে কিলঘুষি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে পৌরসভায় অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মিলে ফিরোজুলকে ১১৫ নম্বর এবং শহিদুলকে ১০১ নম্বর কক্ষে আটকে রাখেন। কিছুক্ষণ পর ১০১ নম্বর কক্ষে গিয়ে তাঁরা শহিদুলকে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেন। সেখান থেকে তাঁকে উদ্ধার করে সকাল ১০টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে শহিদুলকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী পৌরসভার বাজার পরিদর্শক নুর ইসলাম বলেন, ফিরোজ তাঁর কার্যালয়ে কাজ করছিলেন। তখন শহিদুল বেতন না পেয়ে দরজা বন্ধ করতে যান। এ সময় ফিরোজের সঙ্গে শহিদুলের তর্কাতর্কি ও ধস্তাধস্তি হয়। শহিদুল হার্টের রোগী। তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে যান। তবে কোনো মারামারির ঘটনা ঘটেনি।
শহিদুলের ভাগনি রূপালী খাতুন বলেন, ‘পৌর ভবনের পেছনে আমার বাড়ি। মারামারির খবর শুনে ছুটে গিয়ে দেখি, ১০১ নম্বর কক্ষে মামাকে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। খুলে দেখি, মুখ ও দাঁতে আঘাতের চিহ্ন, রক্ত।’ রূপালীর দাবি, শহিদুলকে পৌরসভার লোকজন বেতনের জন্য হত্যা করেছেন।
ঘটনার পর থেকেই পলাতক সার্ভেয়ার ফিরোজুল ইসলাম। তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোনটিও বন্ধ থাকায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি। আজ বেলা ১১টার দিকে শেরকান্দি এলাকায় ফিরোজুলের বহুতল বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, কাচের জানালা, বৈদ্যুতিক মিটারে ভাঙচুরের ক্ষত। সেখানে উৎসুক জনতার ভিড়। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছে পুলিশ। এ ছাড়া পৌরসভায় বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করে জনতা।
প্রকৃত ঘটনা আজ দুপুর পর্যন্ত জানা যায়নি বলে মন্তব্য করেছেন কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার জিয়াউর রহমান। তিনি বলেন, মরদেহটির ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। তবে বকেয়া বেতন নিয়েই ঘটনার সূত্রপাত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ওসি আরও বলেন, উত্তেজিত জনতা অভিযুক্ত সার্ভেয়ারের বাড়ি ভাঙতে গেলে পুলিশ তা ঠেকিয়েছে।
সরকারি প্রশিক্ষণের কাজে জেলার বাইরে থাকায় কুমারখালী পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম এম মিকাইল ইসলামের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিজয় কুমার জোয়ারদার বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, বকেয়া বেতন নিয়ে বাগ্বিতণ্ডায় এই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।