খুলনা বিএমএ সভাপতির সাক্ষাৎকার

সরকার যদি দাবি না মানে তাহলে চিকিৎসকদের গণপদত্যাগের ঘোষণা আসতে পারে

খুলনার শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান শেখ নিশাত আবদুল্লাহর ওপর হামলার প্রতিবাদে ও আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি পালন করছেন খুলনার চিকিৎসকেরা। হামলার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার না হওয়া এবং শেখ নিশাত আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে হওয়া যৌন হয়রানির মামলা প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত চিকিৎসকেরা এই কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আজ বেলা সাড়ে তিনটার দিকে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) খুলনা শাখার জরুরি সভা শেষে এ ঘোষণা দেন সংগঠনের জেলা সভাপতি শেখ বাহারুল আলম। চিকিৎসকদের কর্মবিরতি নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন খুলনা বিএমএর সভাপতি শেখ বাহারুল আলম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন উত্তম মণ্ডল

খুলনা বিএমএর সভাপতি শেখ বাহারুল আলম
ছবি: প্রথম আলো

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: খুলনায় চিকিৎসকদের কর্মবিরতি বাড়ল, এতে যদি কোনো রোগী চিকিৎসা না পেয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা ঘটে, সেটার দায়ভার কি চিকিৎসকদের ওপর বর্তাবে না?

বাহারুল আলম: না। এই দায়ভার চিকিৎসকের ওপর পড়ে না। এটা বুঝতে হবে, সরকারি হাসপাতালের মালিক হলো রাষ্ট্র। এই হাসপাতাল পরিচালনা করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী; স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বহুবার জানানো হয়েছে, হাসপাতাল বা চিকিৎসকদের কর্মস্থলটা ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, এখানে অবকাঠামো নেই, এখানে জনবল নেই, এখানে চিকিৎসার উপকরণ নেই, রোগ নির্ণয়ের জন্য পর্যাপ্ত প্রযুক্তি নেই। এগুলো চিকিৎসাকে ঝুঁকিপূর্ণ করে। তখন রোগীর স্বজনেরা ক্ষুব্ধ হন, তখন তাঁরা চিকিৎসক পেটান। এই পিটুনি চিকিৎসকেরা কত বছর ধরে খাবেন? এ কারণে চিকিৎসকেরা মনে করছেন, এর একটা সুরাহা হওয়া দরকার। এ জন্য তাঁরা কর্মস্থল থেকে চলে এসেছেন।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: খুলনায় এর আগেও চিকিৎসকদের ওপর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ক্ষেত্রে সব দায় কি রোগী বা তাঁর স্বজনদের?

বাহারুল আলম: আমি রোগী বা তাঁর স্বজনদের মোটেই দায়ী করি না। আমার মা মরে গেলে আমিও সংক্ষুব্ধ হব এবং চিকিৎসকদের বলব যে তোমার জন্যই আমার মা মারা গেছে। তাঁদের (রোগীর স্বজন) তো কোনো দোষ নেই। দোষ হলো রাষ্ট্রের; রাষ্ট্র যারা চালায় তাদের। হাসপাতাল চালানোর জন্য ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, প্রয়োজনীয় উপকরণ তো আর দেওয়া হয়নি।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলেই রোগীদের জিম্মি করে চিকিৎসকেরা কর্মসূচি পালন করেন। রোগীদের জিম্মি না করে বিকল্প কোনো কর্মসূচি দেওয়া যায় না?

প্রথম আলো: কর্মবিরতি হলে রোগীরা জিম্মি হয়, এটা সত্য। কিন্তু আমার তো আর কিছু দিয়ে সরকারকে ব্যতিব্যস্ত করার অস্ত্র নেই। আমরা সংক্ষুব্ধ হয়েই কর্মবিরতিতে যাই। কর্মবিরতি বাদে স্মারকলিপি দেওয়া, মানববন্ধন করা, মিটিং করা, সভা-সমিতিতে বলা এর বাইরে আর কি! এসব করতে করতে, বলতে বলতে আমরা ক্লান্ত হয়ে গেছি। আর বলতে হবে কেন? ২৫০ বেডের জনবল আর ৫০০ বেডের জায়গায় ভর্তি থাকবেন ১ হাজার ৪০০ রোগী। এসব কে ম্যানেজ করবে! এই অসন্তুষ্টির রেষ তো পড়ে চিকিৎসকের ওপর।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: সরকারের কর্মচারী হিসেবে সরকারি চিকিৎসকদেরও একটা দায় থাকে কি না?

বাহারুল আলম: আমার দায় থাকে আমি যখন প্রাইভেট চেম্বারে রোগীর চিকিৎসা করি তখন। হাসপাতালটা তো আমার প্রাইভেট চেম্বার না। হাসপাতালটা রাষ্ট্র ও সরকারের। আপনারা কেন বলছেন না যে সরকারের কারণেই এতগুলো রোগী জিম্মি হয়ে আছেন, চিকিৎসকদের জন্য তাঁরা জিম্মি না। চিকিৎসকেরা তো কাজ করতেই চান। কাজ করার জন্য যে ব্যবস্থা দরকার, রাষ্ট্র সেটা দিচ্ছে না।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: তাহলে যন্ত্রপাতি, জনবল—এসব যদি ঠিকঠাক থাকে তাহলে আর এমন কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটবে না?

বাহারুল আলম: কোনো দিনই ঘটবে না। রোগীর তো কোনো দোষ না। দোষ তো হাসপাতালের মালিক-রাষ্ট্র আর সরকারের।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: চিকিৎসক শেখ নিশাত আবদুল্লাহর ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে আপনারা কর্মবিরতি পালন করছেন। কিন্তু দাবি পূরণে বিলম্ব হলে আপনারা কী পদক্ষেপ নেবেন?

বাহারুল আলম: আমরা খুবই সংক্ষুব্ধ। আপনি সংক্ষুব্ধ হলে কাজ করেন? একই ব্যাপার। সরকার যদি দাবি না মানে, তাহলে চিকিৎসকদের গণপদত্যাগের ঘোষণা আসতে পারে।