অগ্নিদগ্ধ শিশুর চলছিল ‘কবিরাজি চিকিৎসা’, অবশেষে হাসপাতালে

স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় মারিয়াকে ঢাকায় নিয়ে যা্নেওয়া হয়েছে। তবে চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংকুলান নিয়ে মারিয়ার পরিবার এখনো চিন্তিত
ছবি: প্রথম আলো

১২ দিন আগে আগুনে পুড়ে দগ্ধ হয়েছিল ময়মনসিংহের নান্দাইলের পাঁচ বছর বয়সী মারিয়া আক্তার। এরপর চিকিৎসার জন্য মারিয়াকে কিশোরগঞ্জ ও নান্দাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তবে এসব হাসপাতালে আগুনে পোড়া রোগীর জন্য চিকিৎসার তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই শিশুটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ অথবা ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। তবে অর্থের অভাবে মারিয়ার জন্য উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারেনি তার পরিবার। তাই ১২ দিন ধরে বাড়িতে রেখে মারিয়ার কবিরাজি চিকিৎসা চলছিল।

গত মঙ্গলবার মারিয়ার অবস্থার অবনতি হয়। এ অবস্থায় স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আনিছা চৌধুরী বিষয়টি স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান। পরে ওই শিক্ষক ও স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় দগ্ধ মারিয়াকে মঙ্গলবার নান্দাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান পরিবারের লোকজন। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাহমুদুর রশিদ মারিয়াকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। এরপর গতকাল বুধবার রাতে মারিয়াকে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।

মারিয়া আক্তার নান্দাইল উপজেলার আচারগাঁও ইউনিয়নের সিংদই গ্রামের বিপুল মিয়ার মেয়ে। বিপুল মিয়া ছোলা ও ঝালমুড়ির ব্যবসা করেন। সেই ব্যবসার আয় দিয়ে কোনোমতে তাঁর সংসার চলে। মেয়ের এ অবস্থায় ভেঙে পড়েছেন মা আলপিনা আক্তার। তিনি বলেন, স্বামীর দোকানের জন্য তিনি ছোলা সেদ্ধ করছিলেন। চুলার আগুনে ছোলা বসিয়ে তিনি পাশের বাড়িতে যান। মারিয়া ছোলা খাওয়ার জন্য চুলার কাছে যায়। এ সময় চুলার আগুন মারিয়ার পরনের জামায় ধরে যায়। প্রাণে বাঁচতে মারিয়া শরীরে আগুন নিয়েই দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে উঠানে চলে আসে। বাড়ির লোকজন মারিয়ার শরীরে পানি ঢেলে আগুন নেভায়। তবে ততক্ষণে মারিয়ার শরীরের বেশির ভাগ অংশ ঝলসে যায়।

আলপিনা বলেন, এত দিন মেয়েকে ময়মনসিংহ বা ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করানোর মতো তাঁদের সামর্থ্য ছিল না। ফলে বাধ্য হয়ে গ্রামের এক কবিরাজের কাছে মেয়ের চিকিৎসা করিয়েছেন। এ চিকিৎসায় মেয়ের কোনো উন্নতিও হচ্ছিল না। পরে স্থানীয় লোকজন ও আনিছা চৌধুরীর সহযোগিতায় মেয়েকে অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় এনেছেন। তবে মেয়ের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংকুলান নিয়ে তিনি এখনো চিন্তিত। কীভাবে মেয়ের চিকিৎসার খরচ জোগাড় করবেন, সেটা বুঝে উঠতে পারছেন না।

আনিছা চৌধুরী বলেন, মঙ্গলবার সকালে তিনি দেখতে পান উঠানে শুইয়ে রেখে অগ্নিদগ্ধ মারিয়াকে কবিরাজি চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ দৃশ্য দেখে তিনি চমকে ওঠেন। পরে তিনি স্থানীয় সাংবাদিকদের সহযোগিতায় শিশুটির উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। তবে শিশুটির চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার জন্য সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার অনুরোধ করেন তিনি।