‘কতক্ষণ অজ্ঞান ছিলাম জানি না, কল্পনাও করিনি আমি বাঁচব’

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গুলিবিদ্ধ কামরুল ইসলাম। আজ রোববার দুপুরেছবি: প্রথম আলো

বালিশের ওপর রাখা ডান পা; লোহার রড বাঁধা। ঊরু থেকে প্লাস্টার করা। হাসপাতালের শয্যায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে কামরুল ইসলাম (১৬)। আজ রোববার দুপুরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যাজুয়ালিটি বিভাগে গিয়ে এ দৃশ্য দেখা যায়।

কামরুল কুমিল্লা দেবীদ্বার পৌরসভায় মা কুলসুম আক্তারের সঙ্গে থাকে। বাবা জাহাঙ্গীর হোসেন পরিবারের খোঁজ নেন না। কামরুল স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেবীদ্বারে বিজয় মিছিল বের করা হয়। ওই মিছিলে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয় কামরুল।

আজ দুপুরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যাজুয়ালিটি বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, কামরুলের পাশে তার মা কুলসুম আক্তার বসে আছেন। এ সময় একজন নার্স এসে তাকে ইনজেকশন দেন। যন্ত্রণায় কুঁকড়ে ওঠে কামরুল। ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে কষ্ট লাঘবের চেষ্টা করেন কুলসুম আক্তার।

কুলসুম আক্তার জানান, তিনি গৃহকর্মীর কাজ করেন। স্বামী সংসারের খবর নেন না। ওই দিন (৫ আগস্ট) তিনি লোকমুখে শোনেন কামরুল গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় পড়ে আছে। পরে দেবীদ্বার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে ছেলেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দেখতে পান। তখন কামরুলের পা থেকে রক্ত ঝরছিল।

আরও পড়ুন
কামরুল স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেবীদ্বারে বিজয় মিছিল বের করা হয়। ওই মিছিলে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয় কামরুল।

ওই দিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে কামরুল বলে, ‘বিজয় মিছিলে যোগ দিতে দেবীদ্বার থানার সামনে আসি। এ সময় হঠাৎ গন্ডগোল শুরু হয়। একটি গুলি ডান পায়ে এসে লাগে; মাটিতে পড়ে যাই। মাথার ওপর দিয়ে অনেক গুলি চলে যায়। কতক্ষণ অজ্ঞান ছিলাম জানি না। জ্ঞান ফিরলে দেখি কয়েকজন আমাকে ধরে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে। আমি যে বাঁচব এটা কল্পনাও করিনি।’

গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর কামরুলকে প্রথমে দেবীদ্বার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। ওই রাতেই তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে গত বুধবার কামরুলের পায়ে অস্ত্রোপচার করা হয়।

আরও পড়ুন

স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধি মাহমুদা আক্তার জানান, কামরুলের রক্তের গ্রুপ বি পজিটিভ। তার পায়ে গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা শুনে তিনি হাসপাতালে এসেছেন এবং তিনি রক্ত দিয়েছেন।

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক সার্জন আবু জাফর সালেহ জানান, গুলিতে কামরুলের পায়ের হাড় ভেঙে গেছে। আগের থেকে পায়ের অবস্থা ভালো। তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।