২৮ বছর ধরে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে চারটি ভবন

সরকারি কোয়ার্টারে ২৮ বছর ধরে কেউ থাকেন না। খালি পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে ভবন। গতকাল গাইবান্ধা শহরের বাংলাবাজার এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

গাইবান্ধা শহরের বাংলাবাজার এলাকায় সরকারি কোয়ার্টারের অবস্থান। শহরের প্রাণকেন্দ্রে মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ। রয়েছে খেলার মাঠ। এখানে রয়েছে চারটি ভবন, যার তিনটি দোতলা ও একটি তিনতলা। এমন পরিবেশেও এখানে কোনো সরকারি কর্মকর্তা থাকেন না। ২৮ বছর ধরে ভবনগুলো পরিত্যক্ত হয়ে আছে।

এই সুযোগে রাতে ভবনগুলো ভেতরে মাদকের বেচাকেনা ও সেবন, জুয়ার আসর এবং অসামাজিক কার্যকলাপ চলছে। গণপূর্ত বিভাগ বলছে, সরকারি কোয়ার্টারে থাকলে কর্মকর্তাদের মূল বেতনের ৪০ শতাংশ কেটে নেওয়া হয়। এর চেয়ে কম টাকায় বাইরে বাসা ভাড়া পাওয়া যায়। তাই তাঁরা কোয়ার্টারে থাকতে আগ্রহী হচ্ছেন না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেন, সরকারি কোয়ার্টারে থাকলে মূল বেতনের ৪০ শতাংশ টাকা কেটে নেওয়া হয়। এ হিসাবে একজন কর্মকর্তার মূল বেতন ৪০ হাজার হলে বাসাভাড়া দিতে হয় ১৬ হাজার টাকা। অন্যদিকে গাইবান্ধা শহরে চার থেকে ছয় হাজার টাকায় উন্নত মানের বাসা ভাড়া পাওয়া যায়।

গতকাল বুধবার গিয়ে দেখা যায়, কোয়ার্টারের তিন দিকে সীমানাপ্রাচীর। একদিকে প্রাচীর ভাঙা। ভবনগুলোতে কেউ নেই। পরিত্যক্ত থাকায় জানালা-দরজা, আসবাব, লোহার জানালার গ্রিল চুরি গেছে। কক্ষের ভেতরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ময়লা-আবর্জনা। কোনো কোনো কক্ষে ফেনসিডিলের বোতল পড়ে আছে।

গাইবান্ধা গণপূর্ত বিভাগ সূত্র জানায়, ১৯৮৬ সালে চার একর জমিতে সরকারি কর্মকর্তাদের বসবাসের জন্য শহরের বাংলাবাজার এলাকায় এসব ভবন নির্মাণ করা হয়। এখানে ললিতা, নন্দিতা, উত্তরা নামে তিনটি দোতলা ও সবিতা নামে একটি তিনতলা ভবন রয়েছে। এতে ব্যয় হয় প্রায় তিন কোটি টাকা। প্রথম দিকে এসব ভবনে বিভিন্ন বিভাগে চাকরিরত ১৮টি পরিবার বসবাস করছিল। ১৯৯৫ সাল থেকে এখানে কর্মকর্তারা বসবাস করছেন না। ২৮ বছর ধরে কোয়ার্টারগুলো ফাঁকা পড়ে আছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, কোয়ার্টারগুলো এখন অপরাধীদের আস্তানা। রাতে ভবনের ভেতরে মাদক বেচাকেনা ও সেবন হয়, জুয়ার আসর বসে এবং অসামাজিক কার্যকলাপ চলে। বাংলাবাজার এলাকার শিক্ষক আবদুস সাত্তার বলেন, একসময় কোয়ার্টারে কর্মকর্তারা থাকতেন। এলাকার পরিবেশ ভালো ছিল। আশপাশের লোকজনও নিরাপদে ছিলেন। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কোয়ার্টারের ভবনগুলোর দরজা, জানালা, গ্রিল, লোহার পাইপসহ মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি গেছে। পরিত্যক্ত থাকায় ভবনের ভেতর মাদকের ব্যবসা চলছে। অপরাধীদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যাওয়ায় কোয়ার্টার এখন এলাকাবাসীর কাছে ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ প্রসঙ্গে গাইবান্ধা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমি যোগদানের আগে থেকেই এখানকার মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি গেছে। বর্তমানে কোয়ার্টারে নৈশপ্রহরী রাখা হয়েছে।’

বাংলাবাজার এলাকার অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী মোহাম্মদ আলী বলেন, কোয়ার্টারের পূর্ব প্রান্তে সদর উপজেলা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও উপজেলা পরিষদ কার্যালয়, উত্তরে গণপূর্ত কার্যালয়, দক্ষিণে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় এবং পশ্চিমে গাইবান্ধা আদর্শ কলেজ। এসব প্রতিষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে রয়েছে আবাসিক এলাকা। এ রকম গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অবস্থিত কোয়ার্টারে কর্মকর্তারা থাকেন না। সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অথচ দায়িত্বপ্রাপ্তরা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।

এ বিষয়ে মো. আসাদুজ্জামান বলেন, সরকারি কোয়ার্টারে থাকার জন্য জেলা সমন্বয় কমিটির সভায় একাধিকবার কর্মকর্তাদের তাগাদা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কাজ হচ্ছে না।

শহরের উপজেলা রোডের ব্যবসায়ী তামজিদুর মিয়া বলেন, প্রশাসনের গাফিলতির কারণে ফাঁকা ভবনে নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। সন্ধ্যার পর সেখানে মাদকদ্রব্য বেচাকেনা চলে। বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এসে এখানে মাদকদ্রব্য সেবন করছেন। উঠতি বয়সের তরুণ-যুবকেরা বিপথগামী হচ্ছেন। ছিনতাইয়ের ঘটনাও বেড়েছে।

গাইবান্ধা নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম বলেন, জেলায় সরকারি বাসা বরাদ্দ কমিটি রয়েছে। পদাধিকারবলে কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক এবং সদস্যসচিব গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী। কমিটি কোয়ার্টারগুলো রক্ষণাবেক্ষণে কোনো কাজ করছে না।

এ বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান বলেন, কোয়ার্টারে কেউ থাকেন না। এ কারণে ভবনগুলো রক্ষণাবেক্ষণও করা হচ্ছে না। কোয়ার্টারের উত্তর পাশে মসজিদ-সংলগ্ন এলাকায় বিনোদন পার্ক করার প্রস্তাব অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এটি অনুমোদন হলে ওই অংশে পার্ক নির্মাণ করা হবে। বাকি অংশ আবাসিকের জন্য থাকবে।