বিষমুক্ত সবজিতে কৃষকের হাসি 

উপজেলার কৃষি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শে এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও খরচে দুই শতাধিক কৃষক বিষমুক্ত সবজির আবাদ করেন।

খেত থেকে বিষমুক্ত টমেটো তুলছেন এক কৃষক। গত বৃহস্পতিবার চাঁদপুরের মতলব উত্তরের বাগানবাড়ি এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় বিষমুক্ত ও নিরাপদ সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রত্যাশিত দামে ওই সবজি বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন স্থানীয় কৃষকেরা। এতে হাসি ফুটেছে উপজেলার দুই শতাধিক কৃষকের মুখে। তাঁদের দেখাদেখি নিরাপদ সবজি চাষে উদ্বুদ্ধও হচ্ছেন অনেকে।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি শীত মৌসুমে উপজেলার ১৩ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ফসলের আবাদ হয়। সবজির আবাদ হয় ১ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে। নিরাপদ সবজির আবাদ হয় প্রায় এক হাজার শতক জমিতে। উপজেলার দুর্গাপুর, ব্রাহ্মণচক, এখলাশপুর, গজরা, কলাকান্দা, ছেংগারচর, সাদুল্লাপুর, ইসলামাবাদ, ফতেপুর, সুজাতপুর, বাগানবাড়িসহ আরও কয়েকটি এলাকায় ওই বিষমুক্ত সবজির আবাদ হয়।

সূত্রটি আরও জানায়, উপজেলার কৃষি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শে এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও খরচে দুই শতাধিক কৃষক বিষমুক্ত সবজির আবাদ করেন। জমিতে জৈব সার ব্যবহার করে সমন্বিত রোগবালাই দমন পদ্ধতিতে (আইপিএম) লাউ, কুমড়া, লালশাক, শিম, পালংশাক, ঢ্যাঁড়স, টমেটো, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ আরও বিভিন্ন সবজির আবাদ করেন।

গত বৃহস্পতিবার সকালে দুর্গাপুর, ব্রাহ্মণচক, ইসলামাবাদ ও গজরা গ্রামে দেখা যায়, সেখানে লাউ, টমেটো, লালশাক, কুমড়া, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ আরও বিভিন্ন জাতের বিষমুক্ত সবজিখেত। রোগবালাই ও পোকামাকড় দমনে এসব খেতে বিভিন্ন ফাঁদ পেতে রেখেছেন কৃষকেরা। খেতে জৈব সার মেশানো। কীটনাশক বা ওষুধের প্রয়োগও নেই। খেতের পরিচর্যায় স্থানীয় কৃষকেরা ব্যস্ত। কেউ কেউ বিক্রির জন্য খেত থেকে সবজির ফলন তুলছেন। বাজারে দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকদের চোখেমুখে হাসির ছাপ।

ব্রাহ্মণচক গ্রামের কৃষক মো. কামাল হোসেন বলেন, এ মৌসুমে ১৮ শতক জমিতে ফুলকপি ও বাঁধাকপির আবাদ করেন তিনি। আবহাওয়া ভালো থাকায় ও পোকামাকড়ের উপদ্রব কম থাকায় সবজির ভালো ফলন হয়েছে। রোগবালাই ও পোকামাকড় দমনে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ নিয়ে আইপিএম পদ্ধতিতে সবজির আবাদ করেন। এ ছাড়া খেতে হলুদ ও ফেরোমন ফাঁদ, বিষটোপ, মালচিং ও নেটহাউজ পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে রোগবালাই ও পোকামাকড় দমন করেন।

কামাল হোসেন আরও বলেন, ওই ১৮ শতক জমিতে সবজির আবাদ করতে খরচ পড়ে ১০ হাজার টাকা। উৎপাদিত সবজির বড় অংশ বাজারে বিক্রি করেন ৩৫ হাজার টাকায়। খেতে যেসব সবজি রয়েছে, সেগুলো বিক্রি করে পাবেন আরও ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। এসব সবজি বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন তিনি। তাঁর মতো আরও অনেক কৃষক এভাবে সবজি চাষে লাভবান হয়েছেন, হচ্ছেন। তাঁদের দেখাদেখি এ কাজে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন অনেকেই। ক্রেতারাও নিরাপদ সবজি পেয়ে বেশি দামেই লুফে নিচ্ছেন সেগুলো।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফয়সাল মোহাম্মদ আলী বলেন, তাঁর উপজেলায় এবার বিষমুক্ত নিরাপদ সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। এসব সবজিখেত তদারকের জন্য এবং কৃষকদের পরামর্শ দেওয়ার জন্য মাঠপর্যায়ের নয়জন কৃষি কর্মকর্তা নিয়ে একটি দল গঠন করেন। তাঁরা বিষমুক্ত সবজিখেতগুলো সার্বক্ষণিক তদারক করছেন।

নিরাপদ সবজির দাম বেশি থাকায় সেগুলো বিক্রিতে কৃষকেরা কিছুটা সমস্যায় পড়েন। এ জন্য নিরাপদ সবজির আলাদা বাজার করার জন্য তিনি প্রশাসনের কাছে অনুরোধ রেখেছেন।