পুনর্ভবায় কুমির দেখে এলাকাবাসীর কাণ্ড

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার মকরমপুর গ্রামে পুনর্ভবা নদীতে ভেসে বেড়ানো কুমিরটি
ছবি: নাইমুল হাসান

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার উত্তর দিকে রামদাস এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করা শান্ত পানির ছোট নদী পুনর্ভবা। নিকট অতীতে এ নদীতে কুমির দেখা গেছে বলে শোনা যায়নি। অথচ সেই পুনর্ভবায় ১৫ নভেম্বর দুপুরে হঠাৎ একটি কুমির ভেসে ওঠে। শুধু তা–ই নয়, তীরে উঠে ‘রৌদ্রস্নান’ও করে প্রাণীটি। এ ঘটনায় নদীর দুই তীরের গ্রাম মকরমপুর ও বেগুনবাড়ীতে হইচই পড়ে যায়। আশপাশের এলাকার মানুষ নদীতীরে ভিড় করেন।

গোমস্তাপুরের স্কুলশিক্ষক রুহুল আমিন বলেন, এই নদীতে অতীতে কেউ কুমির দেখেননি। এই প্রথম কুমির দেখা গেল। এ জন্য মানুষের ভিড় হয়েছে। মানুষের অত্যাচারের কুমিরটি আরাম করে রোদ পোহাতে পারেনি। তীরে উঠতেই ছবি তোলার জন্য মানুষ ভিড় করতে থাকে। একজন বইঠা দিয়ে গুঁতা দিয়েছেন বলেও শুনেছেন।

সর্বশেষ গত সোমবার বিকেলে কুমিরটি রামদাস সেতুর পাশে রোদ পোহাতে উঠেছিল জানিয়ে রুহুল আমিন বলেন, মঙ্গলবার সারা দিন কুমিরটিকে কেউ দেখেননি। রামদাস এলাকাটি একেবারে ভারতীয় সীমান্তের কাছে। রামদাস বিল ও সোনাতলা বিল অপেক্ষাকৃত নিরিবিলি। এই বিলের পরেই ভারতের মালদহ জেলার সীমানা। বিরক্ত হয়ে কুমিরটি ওই দিকে চলে গিয়ে থাকতে পারে।

স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দূরদূরান্ত থেকেও অনেকে কুমিরটি দেখতে পুনর্ভবার তীরে ছুটে আসেন। খবর পেয়ে ওই দিনই রাজশাহী বন বিভাগের বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বন্য প্রাণী পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবির এলাকায় গিয়ে হ্যান্ডমাইকে মানুষকে সতর্ক করেন।

এ সময় লিফলেটও বিলি করা হয়। এতে লেখা রয়েছে, কুমিরের দেখা পেলে অতি উৎসাহী হয়ে কেউ বিরক্ত করবেন না। বাচ্চাদের নদীর কিনারে যেতে দেবেন না। দিনে ও রাতে মাছ আহরণের সময় সতর্কতা অবলম্বন করুন। ছোট নৌকা ও ভেলা চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখুন। কুমির রোদ পোহানোর সময় ঢিল ছুড়বেন না বা তাড়ানোর চেষ্টা করবেন না। নদীতে গোসল করা থেকে বিরত থাকুন। রাতের নদী ও পাড়ের সব কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখুন। নদীতীরবর্তী এলাকায় সাময়িকভাবে পশু চরানো বন্ধ রাখুন।

রাজশাহীর পাখি ও বন্য প্রাণী–বিষয়ক আলোকচিত্রী নাইমুল হাসানও কুমিরটি দেখতে পুনর্ভবায় গিয়েছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আট থেকে নয় ফুট লম্বা এটি মিঠাপানির কুমির। এরা মাংসাশী প্রাণী। প্রধানত, মাছ ও জলাশয়ে বসবাসকারী পাখি ও অন্যান্য মেরুদণ্ডী প্রাণী খেয়ে বেঁচে থাকে।

ওই নদীতীরে দেখা দৃশ্যের বর্ণনা দিয়ে নাইমুল হাসান বলেন, নদীর পানিতে কুমিরটি মাথা তুলতেই পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা এক ব্যক্তি দৌড়ে গিয়ে একটি ইটের টুকরা ছুড়ে মারেন। এরপর কুমিরটি আবারও পানিতে ডুব দেয়। এভাবে ইট ও পাথর ছুড়ে মারায় কুমিরটি হিংস্র হয়ে উঠতে পারে বলে তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করেন তিনি। এ সময় এলাকাবাসী জানান, দুই দিনে কুমিরটি তাঁদের তিনটি পাতিহাঁস ও একটি রাজহাঁস খেয়েছে।

কাজীগ্রাম হয়ে রামদাসের দিকে এগোতে থাকা কুমিরটি এ কয় দিন নদীর পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে আছে উল্লেখ করে এই আলোকচিত্রী বলেন, পরিবেশ সংরক্ষণসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সংস্থা আইইউসিএন (ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার) কুমিরের এ প্রজাতিকে ২০০০ সালে বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে। এরপরও ২০১৫ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় বেশ কয়েকবার মিঠাপানির কুমিরের দেখা পাওয়া গেছে।