সাফজয়ী ফুটবলার আঁখির বাবাকে থানায় নিয়ে যাওয়ার হুমকির অভিযোগ

মা ও বাবার সঙ্গে সাফজয়ী ফুটবলার আঁখি খাতুন
ছবি: সংগৃহীত

সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপাজয়ী দলের সদস্য আঁখি খাতুনের বাবাকে এক পুলিশ সদস্য থানায় উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আঁখির পরিবারের অভিযোগ, গতকাল বুধবার বিকেলে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. মামুন হোসেন শাহজাদপুরে আঁখির বাড়িতে এসে এ হুমকি দিয়েছেন। তবে পুলিশ বলছে, ‘ভুল–বোঝাবুঝি’ থেকে ওই ঘটনা ঘটেছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আঁখির বাড়ি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর পৌর শহরের পারকোলা এলাকায়। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে পাওয়া আট শতক জমিতে বাস করছে আঁখির পরিবার। তবে মোকরম প্রামাণিক নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি আঁখির ওই জমি তাঁর দখলে আছে দাবি করে সম্প্রতি মামলা করেন।

আঁখির বড় ভাই নজরুল ইসলাম বলেন, গতকাল বিকেলে এএসআই মামুনসহ থানা–পুলিশের একটি দল তাঁদের বাড়িতে আসে। এ সময় এএসআই মামুন তাঁর বাবাকে একটি কাগজে স্বাক্ষর করতে বলেন। তখন স্বাক্ষর না করায় এএসআই মামুন তাঁর বাবাকে বলেন, ‘আঁখিকে সরকার যে জমি দিয়েছে, সেই জমির ওপর আদালত থেকে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। যে কারণে আপনাদের এখান থেকে চলে যেতে হবে। অন্যথায় আপনাদের থানায় ধরে নিয়ে যাব।’

মুঠোফোনে ফুটবলার আঁখি খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘থানা থেকে এসে আমার বাবাকে হুমকি–ধমকি দেওয়া হয়েছে। পুলিশ একটি কাগজে আমার বাবাকে স্বাক্ষর দিতে বলেছে। বাবা না বুঝে স্বাক্ষর করেননি। তাই আমার বাবাকে থানায় নিয়ে যাবে বলেছে। আমাকে ফোনে জানানো হয়েছে, আমি যাওয়ার পর আমাকেও থানায় যেতে হবে।’

আঁখির বাবা আক্তার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি পুলিশকে বলেছি, আপনারা ইউএনও বা ডিসি স্যারের সঙ্গে কথা বলেন। তখন আমাকে কটূক্তি করেছেন। আর এক পুলিশ সদস্য আমাকে ধরে নিয়ে যাবে বলেছে। আমি বাদী বা আসামি—কিছুই না। তাহলে আমাকে কেন এমন বলবে!’

আঁখি খাতুন
ফাইল ছবি

অভিযোগের বিষয়ে এএসআই মামুন বলেন, জমিসংক্রান্ত বিষয়ে আদালত থেকে পাওয়া ১৪৪ ধারা জারির নোটিশ নিয়ে গতকাল আঁখির বাড়িতে গিয়েছিলেন তিনি। নোটিশটি আঁখির বাবা বুঝে পেয়েছেন—এই মর্মে স্বাক্ষর চাওয়া হয়েছিল। এ সময় বিষয়টি নিয়ে ভুল–বোঝাবুঝি হওয়ায় একটু কথা–কাটাকাটি হয়। পরে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ঘটনাস্থলে আসেন। ওসির সামনেই তিনি আঁখির বাবার কাছে বিষয়টি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন বলে দাবি করেন তিনি।

জানতে চাইলে শাহজাদপুর থানার ওসি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ভুল–বোঝাবুঝি থেকে ওই ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি শোনার পর আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে এএসআই মামুনকে দিয়ে ক্ষমা চাইয়েছি। এরপরও বিষয়টি নিয়ে বিভাগীয় তদন্ত চলছে।’

ইউএনও তরিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ১ নম্বর খতিয়ানভুক্ত নিষ্কণ্টক জমি আঁখির পরিবারকে দেওয়া হয়েছে। তবে সম্প্রতি মোকরম প্রামাণিক নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি ওই জমির বিষয়ে মামলা করেন। মোকরম ওই জমি তাঁর দখলে আছে এবং দখল বহাল রাখতে শান্তি–শৃঙ্খলার যেন অবনতি না হয়, সে জন্য সহায়তা চেয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করেছেন। আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য শাহজাদপুর উপজেলা অতিরিক্ত কমিশনারকে (ভূমি) নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে শান্তি-শৃঙ্খলার যেন অবনতি না ঘটে, সে জন্য স্থানীয় থানাকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। এ বিষয়ে উভয় পক্ষকে শান্ত থাকতে পুলিশের পক্ষ থেকে একটি নোটিশ দিতে গেলে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

তরিকুল ইসলাম বলেন, মামলার বাদী এজাহারে জমির মালিকানার বিষয়ে সঠিকভাবে তথ্য উপস্থাপন করেননি। আবার ওই জমির মালিকানাও দাবি করেননি। মামলার তফসিলে খতিয়ানও উল্লেখ করেননি। আঁখির পরিবার যেন ওই জমি না পায়, সে জন্য একটি চক্র এ মামলা করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সিরাজগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) লুৎফন নাহার বলেন, ‘মামলাটি যখন রেকর্ড হয়, তখন বোঝা যায় না জমিটি কার। পরে আমরা বুঝতে পেরেছি, ওটা ১ নম্বর খাস খতিয়ানের জমি। যেটা ফুটবলার আঁখিকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে যেকোনো জমি নিয়ে মামলা হতেই পারে। মামলার পর নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় উভয় পক্ষকে নোটিশ দিতে সংশ্লিষ্ট থানাকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এখানেও তেমনটাই ঘটেছে।’

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এর আগে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী জাতীয় দলের খেলোয়াড় আঁখির পরিবারের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে তিন শতক জমি দেওয়া হয়ে। তবে ওই জমি নিয়ে বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় আঁখি বিষয়টি বাফুফের সভাপতি ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে জানান। পরে বিরোধপূর্ণ ওই জমির বরাদ্দ বাতিল করে ১ নম্বর খাস খতিয়ানের ৮ শতক নিষ্কণ্টক জমি বরাদ্দ দেয় স্থানীয় প্রশাসন।