শতবর্ষী তমালতলায় তিন প্রজন্মের চায়ের ব্যবসা

মাগুরা সদর উপজেলার শত্রুজিৎপুর বাজারে নদীর পাড়ে তমাল গাছের নিচে তিন প্রজন্মের চায়ের দোকান
ছবি: প্রথম আলো

একপাশে নদী, অন্যদিকে বাজার। নদীর পাড়ে শত বছরের এক তমালগাছ। নদীপাড়ের শীতল হাওয়া আর তমালের ছায়ায় প্রাণ জুড়ায় হাজারো মানুষের। এই তমালগাছের নিচেই আছে একটি চায়ের দোকান। যেখানে এক পরিবারের তিন প্রজন্ম চায়ের ব্যবসা করে আসছে।

তমালগাছ ও চায়ের দোকানটির অবস্থান মাগুরা সদর উপজেলার শত্রুজিৎপুর বাজারে। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বাজারটি ওই এলাকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও বড় বাজার। সেখানে সপ্তাহে দুই দিন হাট বসে। বাজার ঘেঁষে বয়ে গেছে নবগঙ্গা নদী। বাজারের মাঝামাঝি এলাকায় নদীর তীরে মাথা তুলে আছে তমালগাছটি।

গাছটির বয়স কত, সেটা নিয়ে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে বিতর্ক আছে। কেউ বলেন দেড় শ বছর, কেউ বলেন দুই শ বছর। শত্রুজিৎপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা সরজিৎ কুমার দের ভাষ্য অনুযায়ী, তমালগাছটির বয়স দেড় শ বছরের বেশি। পূর্ণ চন্দ্র ভৌমিক নামের এক ব্যক্তি গাছটি রোপণ করেছিলেন। গাছটির পাশেই তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ছিল।  

সম্প্রতি শত্রুজিৎপুর বাজারে তমালতলায় গিয়ে দেখা যায়, চায়ের দোকানটিতে ভিড় লেগে আছে। দোকানটি পরিচালনা করেন শত্রুজিৎপুর গ্রামের প্রণব অধিকারী (৩৬)। তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছোটবেলায় স্কুলে পড়ার সময় থেকে বাবার সঙ্গে এই চায়ের দোকানে আসা শুরু করেন। পরে চা বিক্রিকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন। ২০ বছরের বেশি সময় তিনি এই চায়ের দোকান সামলাচ্ছেন। এখানে তাঁদের তিন প্রজন্মের চায়ের ব্যবসা। প্রণব অধিকারীর ঠাকুরদাদা তারাপদ অধিকারী প্রথমে এখানে চায়ের দোকান চালু করেন। পরে সেই দোকানে বসেন তাঁর ছেলে নির্মল অধিকারী। এখন তৃতীয় প্রজন্মের হিসেবে প্রণব দোকানটি চালাচ্ছেন।

শারীরিক অসুস্থতার কারণে প্রণবের বাবা ৬৩ বছর বয়সী নির্মল অধিকারী গত কয়েক বছর দোকানে বসেন না। তবে ছেলের খাবার দেওয়া, দুধ নিয়ে আসা বা চা পান করতে কয়েকবার দোকানে আসেন তিনি। নির্মল অধিকারী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই বাজারে আমাদের চায়ের দোকানই প্রথম। এই একই জায়গায়। আগে থেকেই আমাদের চায়ের একটা সুনাম আছে।’

তমাল গাছের ছায়ায় বসে অনেকে এখানে চা পান করেন
ছবি: প্রথম আলো

বীর মুক্তিযোদ্ধা সরজিৎ কুমার দে বলেন, ‘যত দূর জেনেছি, ১৯৫৫ সালের দিকে তারাপদ অধিকারী এখানে প্রথম চায়ের দোকান বসান। তখন থেকে এখন পর্যন্ত দোকানটি স্থানীয় লোকজনের মাঝে সমানভাবে জনপ্রিয়।’

স্থানীয় রামদেরগাতি গ্রামের নূর ইসলাম খাঁ (৭৩) বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই এই বাজারে আমার নিয়মিত আসতে হয়। আর বাজারে এলে এই দোকানে একটা চা খাই। এখানের দুধ চা-টা ভালো লাগে।’

চা–দোকানি প্রণব অধিকারী বললেন, সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত তাঁদের দোকান খোলা থাকে। এর মধ্যে দুপুরে কয়েক ঘণ্টা বাদে প্রায় সব সময়ই ভিড় লেগে থাকে। হাটের দিনে ভিড় বেশি থাকে। তাঁর দোকানে লাল চা ৫ টাকা, দুধ চা ১০ ও ১৫ টাকায় বিক্রি হয়। প্রতিদিন কত কাপ চা বিক্রি হয়, সে হিসাব বলতে না পারলেও জানালেন, গড়ে দৈনিক ১০ লিটারের বেশি দুধের চা বিক্রি হয় তাঁর দোকানে।