ভোলার ইলিশা ঘাট মেঘনার ব্লক বাঁধে ধস, জিও ব্যাগ ফেলে ঠেকানোর চেষ্টা

যখন বাঁধের নির্মাণকাজ শেষ হয়, তখন ভবিষ্যতের সংস্কারের জন্য লক্ষাধিক ব্লক মজুত করে রাখার কথা। কিন্তু ঠিকাদারেরা কোনো ব্লক মজুত রাখেননি।

ভোলার ইলিশা ঘাট এলাকায় তীর সংরক্ষণ ব্লক বাঁধ ধসে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে লঞ্চঘাটের পন্টুন। ফেলা হচ্ছে বালুভর্তি জিও ব্যাগ। বন্ধ আছে বড় লঞ্চ ভেড়ানো ও যাত্রী ওঠানামা। গতকাল ইলিশা লঞ্চঘাটে
ছবি: প্রথম আলো

ভোলার ইলিশা ফেরি ও লঞ্চঘাট এলাকায় মেঘনা নদীতীর সংরক্ষণ বাঁধের ধস প্রতিদিনই বাড়ছে। কয়েক দিনে শতাধিক মিটার তীর সংরক্ষণ ব্লক বাঁধে ধস নামায় এলাকাবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জিও ব্যাগ ফেলে ধস ঠেকানোর চেষ্টা করছে। ধসের কারণে ইলিশা লঞ্চঘাটের তিনটি পন্টুনের মধ্যে সবচেয়ে বড় পন্টুনের কার্যক্রম বন্ধ আছে। তবে ভোলার ইলিশা ও লক্ষ্মীপুরের মজু চৌধুরীর হাটের মধ্যে চলাচলকারী লঞ্চ ও সি-ট্রাক অন্য দুটি পন্টুনে ভিড়তে পারছে।

ইলিশা এলাকার বাসিন্দারা জানান, ইলিশা ঘাটের পূর্বে মেঘনা নদীতে বিশাল এলাকায় চর পড়েছে। ওই চরে ঢেউ আছড়ে পশ্চিমের ব্লক বাঁধে আঘাত করছে। ফলে বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ওই চর খনন করা দরকার। খনন করলে লঞ্চ ও ফেরি চলাচলে সুবিধা হবে।

এ বাঁধ তৈরির সময় ব্লক মজুতের কোনো বরাদ্দ ছিল না। ছিল বালুভর্তি জিও ব্যাগের বরাদ্দ। জরুরি ভিত্তিতে ফেলা বস্তায় মোটা বালুরও বরাদ্দ ধরা নেই।
মো. হাসানুজ্জামান, নির্বাহী প্রকৌশলী, ভোলা পাউবো

এলাকাবাসী পাউবোর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, আগে যখন ব্লক বাঁধ নির্মাণকাজ শেষ হয়, তখন ভবিষ্যতের সংস্কারের জন্য লক্ষাধিক ব্লক মজুত করে রাখার কথা। কিন্তু ঠিকাদারেরা কোনো ব্লক মজুত রাখেননি। এ কারণে এখন ধসের মুখে ব্লকের পরিবর্তে বালুভর্তি জিও ব্যাগ বস্তা ফেলা হচ্ছে। এই জিও ব্যাগ টেকসই হবে না; কারণ, এসব জিও ব্যাগের ভেতর মেঘনা নদী থেকে তোলা চিকন বালু ভরা হচ্ছে। সাধারণত এ ধরনের ধস ঠেকাতে সিলেট, চট্টগ্রাম বা পদ্মা নদী থেকে মোটা বালু এনে জিও ব্যাগে দেওয়া হয়। ঢেউয়ের ঝাঁপটায় জিও ব্যাগ থেকে বালু বের হয়ে অচিরেই নদীতে চলে যাবে।

ভোলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান বলেন, এ বাঁধ তৈরির সময় ব্লক মজুতের কোনো বরাদ্দ ছিল না। ছিল বালুভর্তি জিও ব্যাগের বরাদ্দ। আর সেই বস্তা ফেলেই ধস ঠেকানো হচ্ছে। আর জরুরি ভিত্তিতে ফেলা বস্তায় মোটা বালুরও বরাদ্দ ধরা নেই। বরাদ্দে চিকন লোকাল বালুর কথা বলা হয়েছে। নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, কী কারণে তীর সংরক্ষণ ব্লক বাঁধ ঝুঁকিতে পড়েছে, তা নিয়ে জরিপ হচ্ছে। ওই প্রতিবেদন পেলে সঠিক কারণ জানা যাবে।

পাউবো সূত্র জানায়, ৩৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভোলা সদর উপজেলার উত্তর মেঘনার তীর রক্ষায় ইলিশা-রাজাপুর রক্ষা প্রকল্পের আওতায় চার কিলোমিটার ব্লক বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। উজানের পানি নামাসহ মেঘনা উত্তাল হয়ে ওঠার কারণে ৬ সেপ্টেম্বর রাত থেকে ইলিশা ফেরি ও লঞ্চঘাট এলাকার বাঁধে ধস শুরু হয়। ধস ঠেকাতে পাউবো জরুরি ভিত্তিতে ইতিমধ্যে ১২ হাজার বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলেছে। তবে এখনো অর্ধেক ধস ঠেকানোর কাজ শেষ হয়নি।

গতকাল সোমবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, ইলিশা লঞ্চঘাট এলাকার শতাধিক মিটার ব্লক বাঁধ ধসে গেছে। বাঁধের ওপর দিয়ে হাঁটা এখন বিপজ্জনক। এখানে ফেরিঘাটের দুটি পন্টুন। সেগুলো চালু আছে। লঞ্চঘাটের তিনটি পন্টুন; এর মধ্যে একটি বড়, যেখানে ঢাকার বড় লঞ্চগুলো ভেড়ে। এ পন্টুনটি তীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এ পন্টুনের গা ঘেঁষে ব্লকে বেশি ধস হয়েছে। এ ধস ঠেকানোর জন্য পাউবোর নিযুক্ত শ্রমিক বালুভর্তি বস্তা ফেলছেন। কিন্তু সেই বস্তাও ডুবে যাচ্ছে। ব্লক সরে যাওয়ার কারণে ওই পন্টুনের গ্যাংওয়ে তুলে ফেলা হয়েছে। যাত্রী ওঠানামাও বন্ধ আছে। দুটি বালুভর্তি জাহাজ ধসের মুখে দাঁড়িয়ে। সেখান থেকে শতাধিক শ্রমিক বালু নিয়ে বস্তায় ভরার কাজ করছেন। লঞ্চঘাটের অপর দুটি পন্টুনে ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটের লঞ্চ ভেড়ে। ওই দুটি কোনো রকমে চালু রাখা হয়েছে।

ভোলা নদীবন্দরের উপপরিচালক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ব্লক বাঁধে ধস নামায় তাঁদের ইলিশা লঞ্চঘাটের একটি পন্টুনে লঞ্চ ভেড়ানোসহ যাত্রী ওঠানামা বন্ধ আছে। ওই পন্টুনটি সব থেকে বড়। কয়েকটি ঢাকার লঞ্চ সেখানে ভেড়ে। কিন্তু এখন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় যাত্রীদের ভোগান্তি সহ্য করতে হচ্ছে।

ইলিশা এলাকার বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম বলেন, তাঁদের অনেক জমি বিলীন হয়ে গেছে। হঠাৎ উজানের ঢল নেমে বাঁধের ব্লক ধসে নদী এলাকার দিকে আসছে। এ রকম চলতে থাকলে ভোলা সদর উপজেলা ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়বে। ভোলা শহরে পানি প্রবেশ করবে। স্থানীয় বাসিন্দা মো. কামাল হোসেন বলেন, ধসের মুখে পুনরায় ব্লক তৈরি করা উচিত।

পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, উত্তর থেকে নেমে আসা বন্যার পানি যখন সাগরে নামে, তখন ভোলার মেঘনা নদীতে তীব্র স্রোতের সৃষ্টি হয়। মেঘনা নদীর মাঝে যে দীর্ঘ চর রয়েছে, তার কারণে এবং ইলিশা ফেরিঘাটের সামনে ইলিশা ও মেঘনার পাঁচটি চ্যানেলের মোহনা হওয়ায় এখানের নদী ১২ মাস ফুঁসে থাকে। এ বছরও নদীর ভয়ংকর রূপের কারণে বাঁধ ধসে যাচ্ছে।