অপমানের প্রতিশোধ নিতেই শ্বশুরকে হত্যা করেন জামাতা: পুলিশ
অপমান ও অপদস্থ করার প্রতিশোধ নিতেই বাবাকে সঙ্গে নিয়ে পল্লিচিকিৎসক শ্বশুর তহিদুল ইসলামকে (৪০) পরিকল্পিতভাবে হত্যা করার কথা স্বীকার করেছেন জামাতা জীবন হোসেন (২২)। গতকাল রোববার বিকেলে চুয়াডাঙ্গার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ কথা বলেন তিনি। রোববার রাত ১০টার দিকে জেলা পুলিশ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানায়।
আদালত পুলিশের পরিদর্শক মারুফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, পল্লিচিকিৎসক তহিদুল ইসলাম হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার এজাহারভুক্ত দুই আসামি আলমডাঙ্গা উপজেলার মাধবপুর গ্রামের জীবন হোসেন ও তাঁর বাবা সানোয়ার হোসেনকে (৫০) গতকাল রোববার বিকেলে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। প্রধান আসামি জীবন হোসেন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে আদালতের নির্দেশে জীবন হোসেন ও তাঁর বাবা সানোয়ার হোসেনকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার কালিদাসপুর ইউনিয়নের ডম্বলপুর-মাধবপুর সেতুর রেলিং থেকে অর্ধডোবা অবস্থায় গত শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় পল্লিচিকিৎসক তহিদুল ইসলামের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় পাশে পড়ে ছিল তাঁর মোটরসাইকেল, মাথার টুপি ও পায়ের স্যান্ডেল। নিহত তহিদুল ডম্বলপুর গ্রামের মকবুল হোসেন মণ্ডলের ছেলে। লাশ উদ্ধারের সময় সাদা গেঞ্জি দিয়ে তহিদুলের মুখ বাঁধা, গলায় লাল রঙের গামছা প্যাঁচানো ও গলায় রশি দিয়ে বাঁধা ছিল।
পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার দুই আসামি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। দুই মাস আগে তহিদুল ইসলামের মেয়ে তামান্না খাতুনকে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করেন জীবন হোসেন। এ ঘটনায় জীবন হোসেন ও তাঁর বাবা সানোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে একটি অপহরণ মামলা করেন তহিদুল ইসলাম। এর পর থেকে শ্বশুরবাড়িতে তামান্নার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়।
পুলিশ জানায়, নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তামান্না শ্বশুরবাড়িতে বিষপান করেন। পরে অবশ্য প্রাণে বেঁচে যান। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের মধ্যে বিবাদ আরও চরম আকার ধারণ করে। একপর্যায়ে তামান্না বাবার বাড়িতে চলে আসেন। তহিদুল ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা জীবন হোসেন ও তাঁর বাবা সানোয়ারকে অপমান-অপদস্থ করেন। অপমানের প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন তাঁরা। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী, বাবা-ছেলে গত ২৮ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে তহিদুলকে কৌশলে মাধবপুর এলাকায় ডেকে নেন। তহিদুল ডম্বলপুর-মাধবপুর সেতুর কাছে পৌঁছালে সানোয়ার তাঁর গতিরোধ করেন। এ সময় জীবন হোসেন পেছন থেকে গলায় গামছা ও মুখের ভেতরে সাদা গেঞ্জি ঢুকিয়ে শ্বাস রোধ করে হত্যা করেন। পরে তাঁরা তহিদুলের গলায় রঁশি দিয়ে সেতুর রেলিংয়ের সঙ্গে লাশ ঝুলিয়ে দেন।
এ ঘটনায় নিহত তহিদুলের স্ত্রী বিউটি খাতুন বাদী হয়ে গতকাল রোববার সকালে জামাতা জীবন হোসেন ও তাঁর বাবা সানোয়ার হোসেনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ৬-৭ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন।
পুলিশের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, হত্যা মামলাটির রহস্য উদ্ঘাটনে পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ্ আল-মামুনের নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম ও অপস) নাজিম উদ্দিন আল আজাদের তত্ত্বাবধানে ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামানের নেতৃত্বে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) এবং আলমডাঙ্গা থানা-পুলিশের একাধিক দল মাঠে নামে। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় আলমডাঙ্গা থানার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে এজাহারভুক্ত দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়।