সাংবাদিক হাসিবুর হত্যার ঘটনায় প্রশাসনের ভূমিকা রহস্যজনক

সাংবাদিক হাসিবুর হত্যার প্রতিবাদে আজ সোমবার বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন কুষ্টিয়ার সাংবাদিকেরা
ছবি: প্রথম আলো

কুষ্টিয়ায় সাংবাদিক হাসিবুর রহমান ওরফে রুবেল হত্যার ঘটনায় প্রশাসনের ভূমিকাকে রহস্যজনক বলে মন্তব্য করেছেন কুষ্টিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকেরা। হাসিবুর হত্যার ১৫ দিন পেরিয়ে গেলেও এই হত্যাকাণ্ডের কারণ উদ্‌ঘাটিত না হওয়া এবং প্রকৃত খুনিদের ধরতে না পারায় সাংবাদিকেরা এমন মনে করছেন।

সাংবাদিক হাসিবুর হত্যার প্রতিবাদে এবং হত্যাকারী ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় কুষ্টিয়া শহরের পাঁচরাস্তার মোড়ে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে সাংবাদিকেরা এসব কথা বলেন।

কুষ্টিয়া জেলা এডিটরস ফোরামের সভাপতি মজিবুল শেখের সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে কুষ্টিয়া প্রেসক্লাব, কুষ্টিয়া সাংবাদিক ইউনিয়ন, সাংবাদিক ইউনিয়ন কুষ্টিয়া, কুষ্টিয়া টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যসহ অর্ধশতাধিক সাংবাদিক এই সমাবেশে অংশ নেন।

সমাবেশে সাংবাদিক শরীফ বিশ্বাস বলেন, ‘প্রশাসনের উদাসীনতা ও স্বদিচ্ছার অভাবে হাসিবুর হত্যার রহস্য উদ্‌ঘাটিত হচ্ছে না। তাদের ভূমিকা রহস্যজনক মনে হচ্ছে। আমরা কোনো জজ মিয়া নাটক দেখতে চাই না। ’

কুষ্টিয়া এডিটরস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক নূর আলম বলেন, ‘২৪ ঘণ্টার মধ্যে মামলার পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য ও অগ্রগতি জানাতে হবে। না হলে আপনাদের শান্তিতে অফিস করতে না দিতে বাধ্য করবেন না। খুনিদের ধরার দাবিতে সাংবাদিকেরা রাস্তায়, এটা লজ্জাজনক ও দুঃখজনক। তাহলে সাধারণ জনগণ কী আশা করবে!’

প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে সাংবাদিক ইউনিয়ন কুষ্টিয়ার সভাপতি রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘এই প্রশাসন ব্রিটিশ ফর্মুলায় চলছে। প্রশাসন মনে করছে আন্দোলন করতে করতে একসময় সাংবাদিকেরা দমে যাবে। তখন সব নীরব হয়ে যাবে। এটা ভাবা ঠিক নয়। প্রশাসনের নীরবতার রহস্য কী জানতে চাই। এভাবে নীরব থাকলে সাংবাদিকেরা ভাবতে বাধ্য হবে, এই হত্যার দায় প্রশাসনের ওপরই বর্তাবে। সেটা আমরা চাই না।’

থানা-পুলিশ সূত্র জানায়, ৩ জুলাই রাত ৯টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের সিঙ্গার মোড়ে পত্রিকা অফিসে ছিলেন হাসিবুর। তখন মুঠোফোনে একটি কল পেয়ে অফিস থেকে বের হয়ে যান। এর পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। তাঁর মুঠোফোনটিও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। এ ঘটনায় কুষ্টিয়া মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে তাঁর পরিবার।

এর চার দিন পর ৭ জুলাই দুপুরে কুমারখালী পৌরসভার তেবাড়িয়া এলাকায় গড়াই নদের নির্মাণাধীন গোলাম কিবরিয়া সেতুর নিচ থেকে হাসিবুরের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ৮ জুলাই (শুক্রবার) রাতে হাসিবুর রহমানের চাচা মিজানুর রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে কুমারখালী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

নিহত হাসিবুর কুষ্টিয়া জেলা রিপোর্টার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক, স্থানীয় দৈনিক কুষ্টিয়ার খবর পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও দৈনিক আমাদের নতুন সময় পত্রিকার কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পাশাপাশি তিনি ঠিকাদার ছিলেন। তিনি কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং এ ব্লক এলাকার মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে।

হাসিবুর রহমানের হত্যাকারী ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন কুষ্টিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকেরা। এদিকে শনিবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে র‍্যাব জানায়, হাসিবুর রহমান হত্যায় জড়িত সন্দেহে কাজী সোহান শরীফ ও খন্দকার আশিকুর রহমান ওরফে জুয়েল নামের দুজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে নৌ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।