ছাত্রদল নেতার চোখ, হাত–পা বাঁধা লাশ, সাত বছর পর মামলা
চট্টগ্রাম নগরের বাসা থেকে ২০১৭ সালের ২৯ মার্চ রাতে পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয়েছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহসাধারণ সম্পাদক নুরুল আলমকে। এরপরের দিন চোখ, হাত–পা বাঁধা অবস্থায় তাঁর লাশ উদ্ধার হয় রাউজানের বাগোয়ান ইউনিয়নের কর্ণফুলী নদীর তীর থেকে। এ ঘটনার সাত বছর পর গতকাল সোমবার রাতে নুরুল আলমের স্ত্রী সুমি আকতার নগরের চকবাজার থানায় হত্যা মামলা করেন।
মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে রাউজানের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীকে। অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন রাউজানের নোয়াপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) শেখ মুহামদ জাবেদ (৩৫), নোয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মুহাম্মদ বাবুল মিয়া (৫২)। এ ছাড়া এ হত্যা মামলায় মোট ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়। এ ছাড়া আরও ৩০ থেকে ৪০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।
ওই ছাত্রদল নেতাকে বাসা থেকে তুলে আনার কাজে নেতৃত্ব দেন পুলিশের এসআই মুহামদ জাবেদসহ একাধিক পুলিশ সদস্য, আওয়ামী লীগ, যুবলীগের নেতা–কর্মীরা। এরপর রাতভর অত্যাচারের পর মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয় নুরুল আলমকে।
ঘটনার দুই দিন পর আদালতে নুরুল আলমের স্ত্রী সুমি আকতার আমলা করলেও সেই সময় পুলিশ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে আসামিরা মামলার কার্যক্রম এগিয়ে নিতে দেয়নি। এ কারণে নতুন করে মামলা করেন খুনের শিকার ছাত্রদল নেতার স্ত্রী।
যেভাবে খুন করা হয় নুরুল আলমকে
মামলার এজাহারে বলা হয়, রাউজানের নোয়াপাড়া ইউনিয়নের সাদার পাড়া গ্রামের বাসিন্দা কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের তৎকালীন সহসাধারণ সম্পাদক নুরুল আলমকে ২০১৭ সালের ২৯ মার্চ রাতে নগরের চন্দনপুরার বাসা থেকে সাবেক সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিমের নির্দেশে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। রাউজান থানার এস আই শেখ মুহাম্মদ জাবেদ এই ঘটনায় নেতৃত্ব দেন। এরপর নুরুলকে মাইক্রোবাসে করে নিয়ে যাওয়া হয় নোয়াপাড়া ডিগ্রি কলেজের মাঠে। সেখানে চোখ ও মুখ-হাত বেঁধে সারা রাত চালানো হয় নির্যাতন। পরে তাঁকে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়। হত্যার পর ঘটনাস্থলের ৬ কিলোমিটার দূরের বাগোয়ান ইউনিয়নের খেলারঘাট কর্ণফুলী নদীর তীর রক্ষা বাঁধের ওপর লাশ ফেলে রাখা হয়। পরের দিন ৩০ মার্চ হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়।
নুরুল আলম নুরুর স্ত্রী সুমি আকতার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার সামনে বিছানা থেকে নুরুল আলমকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন তিনি ঘুমাচ্ছিলেন। ঘুম থেকে তুলে নিয়ে তাঁকে যেভাবে হত্যা করা হয়, ভাবতেই বুক ফেটে যাচ্ছে। আমি স্বামী হত্যার বিচার চাই। জড়িত ব্যক্তিদের ফাঁসি চাই।’
হত্যাকাণ্ডের শিকার নুরুলের দুই মেয়ে এবং এক ছেলে সবাই লেখাপড়া করছেন। সাত বছরেও বাবার হত্যাকারীদের বিচার না হওয়ায় তাঁরা হতাশ ছিলেন। এখন সরকার পরিবর্তন হওয়ায় আশায় বুক বেঁধেছেন তাঁরা।
চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়ালী উদ্দিন আকবর গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রদল নেতা নুরুলকে তাঁর থানার এলাকা থেকে ধরে নেওয়া হয়েছিল। যার কারণে মামলা তাঁর থানায় রেকর্ড হয়। তবে লাশ পাওয়া যায় রাউজান থানার এলাকায়। তাঁর থানা মামলা নিয়ে কাজ করবে। তবে রাউজান থানার সহযোগিতাও নেবে।