রাজশাহী আইএইচটির ছাত্রলীগ সভাপতিকে একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বহিষ্কার
রাজশাহী ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজিতে (আইএইচটি) সিট-বাণিজ্য ও এক ছাত্রকে মারধরের অভিযোগে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি মো. আল আমিন হোসেনকে এক বছরের জন্য একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ সময়ে তিনি ক্যাম্পাসে প্রবেশ ও ছাত্রাবাসে অবস্থান করতে পারবেন না। তাঁর সব একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
এর পাশাপাশি আরও পাঁচ ছাত্রলীগ কর্মীকে ছয় মাসের শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দুজনকে তিরস্কার করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে এই শাস্তি ১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষ আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে নোটিশ আকারে বিষয়টি প্রকাশ করেছে।
মো. আল আমিন হোসেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ডেন্টাল বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তাঁকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার হয়েছেন ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ডেন্টাল বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মাসুদ পারভেজ, মো. ফারহান হোসেন, একই শিক্ষাবর্ষের ল্যাবরেটরি মেডিসিন বিভাগের শাহরিয়ার নাফিজ, পারভেজ মোশারফ ও একই শিক্ষাবর্ষের রেডিওলজি বিভাগের শিক্ষার্থী নিলয় কুমার। তাঁদের ছয় মাসের জন্য ক্যাম্পাসে প্রবেশ ও ছাত্রাবাসে অবস্থান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া আরেক ছাত্রলীগ কর্মী ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সিফাতকে তিরস্কার করা হয়েছে। তাঁকে ভবিষ্যতে এ ধরনের কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকার জন্য সতর্ক করা হয়েছে।
মো. হাসান নামের ওই শিক্ষার্থী ছাত্রাবাসের সিটের জন্য আইএইচটি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আল আমিনকে ১৬ হাজার টাকা দেন। এরপরও তিনি ছাত্রাবাসে সিটের ব্যবস্থা করেননি। ঘটনার দুই দিন আগে তিনি সভাপতির কাছে টাকা ফেরত চান। এর জেরে পাঁচ-সাতজন ছেলে এসে তাঁকে ডেকে নিয়ে বেধড়ক পেটান।
এর বাইরে ওই ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের মারধরের শিকার মো. হাসানকেও তিরস্কার করা হয়েছে। প্রশাসনকে না জানিয়ে শাখা ছাত্রলীগ সভাপতির সঙ্গে টাকা লেনদেনের জন্য তাঁকে তিরস্কারের পাশাপাশি সতর্ক করা হয়েছে। মো. হাসান ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী।
ওই শিক্ষার্থীদের শাস্তির নোটিশে বলা হয়েছে, শাস্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে তালিকার ১ নম্বর শিক্ষার্থী (ছাত্রলীগ সভাপতি) প্রথম বর্ষের ছাত্র মো. হাসানের কাছ থেকে ছাত্রাবাসে সিট দেওয়ার নাম করে টাকা নেন। ২ থেকে ৬ নম্বর পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা (ছাত্রলীগ কর্মী) মো. হাসানকে মারধর করেন। এই মর্মে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গত ৬ জুন একাডেমিক সভায় শাস্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই আদেশ কার্যকর হবে ১ জুলাই। তবে নোটিশটি ১২ জুন স্বাক্ষর করেছেন অধ্যক্ষ।
এর আগে গত ২৯ এপ্রিল আইএইচটির ফার্মেসি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মো. হাসানকে মারধর করা হয়। পরে আহত অবস্থায় তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় গত ১ মে থেকে আইএইচটি ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করে ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়। অভিযোগ ছিল, মো. হাসান নামের ওই শিক্ষার্থী ছাত্রাবাসের সিটের জন্য আইএইচটি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আল আমিনকে ১৬ হাজার টাকা দেন। এরপরও তিনি ছাত্রাবাসে সিটের ব্যবস্থা করেননি। ঘটনার দুই দিন আগে তিনি সভাপতির কাছে টাকা ফেরত চান। টাকা না দিয়ে সভাপতি তাঁকে উল্টো হুমকি দেন। পরে ২৯ এপ্রিল হাসান শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করছিলেন। ক্লাস শেষে হলে পাঁচ-সাতজন ছেলে এসে তাঁকে ডেকে নিয়ে বেধড়ক পেটান। হাসানের মতো আরও বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী সে সময় ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ করেন।
শাস্তির ব্যাপারে রাজশাহী আইএইচটি ছাত্রলীগের সভাপতি মো. আল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, আজ ক্যাম্পাস ছুটির কিছুক্ষণ আগে এটি প্রকাশ হলে তিনি জানতে পারেন। তিনি এখনো ক্যাম্পাসে ও ছাত্রাবাসে অবস্থান করছেন। শাস্তির কোনো চিঠি পাননি। আল আমিন আরও বলেন, ওই ঘটনার বিষয়টি মিটমাট হয়ে গিয়েছিল তখনই। তাঁর কাছে মনে হয়েছে, তাঁরা বিভিন্ন সময়ে কলেজ প্রশাসনের বিরুদ্ধে নানা দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন করেছেন। এই ক্ষোভ থেকেই তাঁদের শাস্তি দেওয়া হয়েছে। তাঁরা আগামী রোববার অধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করবেন।
আইএইচটির অধ্যক্ষ ফারহানা হক প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে একাডেমিক কাউন্সিল সভায় শাস্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শাস্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে থাকতে পারবেন না। নোটিশ প্রকাশে বিলম্বের বিষয়ে অধ্যক্ষ বলেন, তাঁরা কয়েক দিন ধরে বেশ কিছু কাজে ব্যস্ত ছিলেন। এ কারণে নোটিশটি প্রকাশ করতে পারেননি।