অধ্যক্ষ নেই বছরের পর বছর

কোনোটির অধ্যক্ষ নেই এক যুগ হতে চলেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বাভাবিক শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করছেন।

কেশবপুর ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হাজী আবদুল মোতালেব মহিলা কলেজ
ছবি: প্রথম আলো

যশোরের কেশবপুরে তিনটি কলেজে বছরের পর বছর ধরে অধ্যক্ষের পদ খালি রয়েছে। কোনোটির অধ্যক্ষ নেই এক যুগ হতে চলেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বাভাবিক শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করছেন।

কেশবপুরের হাজি মোতালেব মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৯৩ সালে। কলেজটি ডিগ্রি শ্রেণির। এখানে ২০১৪ সালে জুলফিখার আলী অধ্যক্ষ হিসেবে অবসরে যাওয়ার পরে এখানে কোনো অধ্যক্ষ নিয়োগ হয়নি। এরপর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে উপাধ্যক্ষ আবদুস সাত্তার, সহকারী শিক্ষক রায়হানা সাদেক, ফরিদা আখতার, সর্বশেষ সহকারী শিক্ষক হাবিবুর রহমান গত বছরের ২৪ জুলাই থেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতিষ্ঠানটি আট বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে।

বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান বলেন, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পরে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ নিয়োগের জন্য পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। তার শেষ তারিখ ছিল গত ২৩ আগস্ট। এখানে অধ্যক্ষ হিসেবে কেউই আবেদন করেননি। উপাধ্যক্ষ হিসেবে পাঁচজন আবেদন করেছেন। উপাধ্যক্ষ নিয়োগের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে।

কেশবপুরের হাজি মোতালেব মহিলা কলেজের কয়েকজন শিক্ষক জানান, দীর্ঘদিন প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত অধ্যক্ষ না থাকলে প্রতিষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে চলে না। নানান অসুবিধা তৈরি হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শিক্ষক বলেন, এর আগে ওই চেয়ারে যাঁরা দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁদের কেউ কেউ রাজনৈতিক শক্তির জোরে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে সুবিধা নিয়েছেন।

কেশবপুরের হাজি মোতালেব মহিলা কলেজের পরিচালনা কমিটির সভাপতি আইনজীবী রফিকুল ইসলাম বলেন, দুবার অধ্যক্ষ নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। কেউই এই পদে আবেদন করেননি। তাই নিয়োগ দেওয়া যায়নি।

সাগরদাঁড়ি আবু শারাফ সাদেক কারিগরি বাণিজ্য মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৯৯ সালে। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে অধ্যক্ষ চঞ্চল কুমার বিশ্বাস দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০১২ সালের ৮ মার্চ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার পরে এ প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার অপারেশনের শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ১০ বছর ধরে এ প্রতিষ্ঠান চলছে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে।

এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েকজন শিক্ষক জানান, নিজেদের সমপদের সহকর্মীকে অধ্যক্ষ মানা নিয়ে প্রায়ই সমস্যা তৈরি হয়। শিক্ষক-কর্মচারীরা তাঁর কথা শোনেন না। মতৈক্য না হওয়ায় প্রায়ই প্রতিষ্ঠানে কিছু না কিছু ঝামেলা হয়ে থাকে। যে কারণে এখানে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে।

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শ্যামল কুমার ঘোষ বলেন, ২০১৭ সালে কমিটি নিয়ে আদালতে একটি মামলা চলছে। এই মামলা নিষ্পত্তির দিকে। নিয়মিত কমিটি হলে অধ্যক্ষ নিয়োগের বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে। তিনি বলেন, তিনিও ভারপ্রাপ্ত হিসেবে আর দায়িত্ব পালন করতে চান না। তিনি আরও বলেন, সবাইকে নিয়ে চলার চেষ্টা করেন। কিন্তু সবার মন জোগানো কঠিন হয়। তখন কিছু সমস্যা তৈরি হয়।

কেশবপুর আবু শরাফ সাদেক কারিগরি বাণিজ্য মহাবিদ্যালয়ের সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এম এম আরাফাত হোসেন বলেন, কমিটি নিয়ে আদালতে মামলা থাকায় নিয়মিত কমিটি গঠিত হয়নি। নিয়মিত কমিটি হলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি বলেন, কলেজগুলো বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে পরিচালিত হয়। ফলে তাঁদের তেমন দায়িত্ব নেই।

আইডিয়াল কলেজ, কোমরপোল প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৯৪ সালে। কলেজটি উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির। এখানে অধ্যক্ষ হিসেবে সর্বশেষ দায়িত্ব পালন করেন নন্দী শংকর কুমার। তিনি ২০১১ সালে উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়ার জন্য এক বছরের জন্য ছুটি নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় যান। এরপর তিনি আর ফিরে আসেননি। এরপর থেকে প্রতিষ্ঠানটি ১১ বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে চলছে। বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন সহকারী শিক্ষক ফারুকে আজম।

এই প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন শিক্ষক বলেন, নিয়মিত অধ্যক্ষ না থাকলে সব কাজ সুচারুভাবে হয় না। বিশেষ করে উন্নয়ন ঠিকমতো হয় না। ভারপ্রাপ্ত হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়ে কোনো কাজ করতে চান না। অধ্যক্ষ না থাকলে সেটি হয় না। তাই অধ্যক্ষ থাকাটা খুবই জরুরি।

এ ব্যাপারে যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান আহসান হাবিব বলেন, ‘অধ্যক্ষ নিয়োগ দেয় কলেজ পরিচালনা কমিটি। এখানে আমাদের কিছু করার নেই।’

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফারুকে আজম বলেন, সম্প্রতি নতুন কমিটি হয়েছে। অধ্যক্ষ নিয়োগের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। নতুন কমিটি যদি মনে করে, তারা অধ্যক্ষ নিয়োগ দিতে পারে।

আইডিয়াল কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মফিজুর রহমান বলেন, খুব শিগগির অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে।