‘তোমাক কিডা ইরাম করল রে...’

নিহত মাছচাষি আমিরুল ইসলামের স্ত্রী ও মেয়ে আহাজারি করছেন। বৃহস্পতিবার সকালে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের উত্তর চাঁদপুর গ্রামেছবি: তৌহিদী হাসান

মোমেনা খাতুন বিলাপ করছিলেন আর বলছিলেন, ‘ও সোনা তুমি বাড়ি চইলি আসো। তোমার ছেলেমেয়ে কার কাছে দিলে, তোমাক কিডা ইরাম করল রে...।’ মোমেনা খাতুন কুষ্টিয়া কুমারখালী উপজেলার উত্তর চাঁদপুর এলাকার মাছচাষি নিহত আমিরুল ইসলাম ওরফে নান্নুর (৫২) স্ত্রী। গতকাল বুধবার রাত আটটার দিকে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের উত্তর চাঁদপুর গ্রামের একটি কলাবাগানে আমিরুলকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে নিহত আমিরুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় প্রতিবেশী ও স্বজনদের ভিড়। তাঁরা মোমেনা খাতুন ও তাঁর মেয়ে ফারজানা খাতুনকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু কোনোভাবেই তাঁদের কান্না থামছে না। মোমেনার পাশে বসে কান্না করতে করতে গলা বসে গেছে ফারজানার। কান্নাজড়িত কণ্ঠে ফারজানা বলতে থাকেন, ‘আমার জান চইলি গেল, আমার কলিজা কই গেল? আমার বাপ যত রাত বাড়ি আসে না, তত রাত ঘুমাই না, খাই না। এখন আমার কী হবে? ও আমার আব্বু রে...।’

নিহত আমিরুল ইসলামের এক মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়ে ফারজানা খাতুন শারীরিক প্রতিবন্ধী। ছোট ছেলে মিথুন দশম শ্রেণির ছাত্র। আমিরুল মাছ চাষ করতেন। এলাকায় তাঁর মাছের আড়ত ছিল। আহাজারি করে মোমেনা খাতুন বলছিলেন, ‘কত নির্যাতন করে মারা হয়েছে, মারতে কত হাজার টাকা নিইছে রে। কত আজাব দিছে রে। আমার দুনিয়া সব অন্ধকার হয়ে গেল রে।’

নিহত আমিরুলরা সাত ভাই ও এক বোন। আমিরুলের বাড়িতে ছিলেন তাঁর বোন রোজিনা খাতুন। তিনি বলেন, ‘আমার ভাইকে পরিকল্পিতভাবে মারা হইছে। ভাই এলাকায় সবকিছুর প্রতিবাদ করত। অন্যায় মাইনি নিতে পারত না। গিরামের সবাই তার কাছে আসত। আমার ভাইয়ের কাছে সব মানুষ বিচার নিই আসত। যাদের দোষ হতো, তারা ভাইকে সহ্য করতে পারত না। ভাই নৌকার সমর্থক ছিল। যারা মাইরছে, তারা বর্তমান এমপি আবদুর রউফের লোকজন।’

নিহত আমিরুলের চাচাতো ভাই আবদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ভাইসহ আমরা নৌকার ভোট করছি। ভোটের পর থেকে গত তিন মাসে তিনবার আমাদের লোকজনের ওপর হামলা হয়েছে। মারধর করা হয়েছে। আমিরুলকেও একই সূত্রে হত্যা করা হলো।’

গতকাল রাত আটটার দিকে উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের উত্তর চাঁদপুর গ্রামের একটি কলাবাগান থেকে আমিরুলের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত আমিরুল একই গ্রামের মৃত আবদুল জলিলের ছেলে। এ ঘটনার জেরে প্রতিপক্ষের লোকজনের বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

স্বজন ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আমিরুল ইসলাম গতকাল ইফতার শেষে নিজ বাড়ি থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে কেশবপুরে তাঁর ইজারা নেওয়া পুকুরে যাচ্ছিলেন। চাঁদপুর গ্রামে মোটরসাইকেলের গতি রোধ করে জোর করে পাশের একটি কলাবাগানে নিয়ে তাঁকে পিটিয়ে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে।