ময়মনসিংহ
পড়ে আছে পৌনে ২ কোটি টাকার সরকারি ভবন
ভবনটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। ভবন নির্মাণের পর সেখানে প্রয়োজনীয় আসবাব ও শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র লাগানো হয়েছে।
দুই বছরের বেশি সময় আগে নির্মাণকাজ শেষ হলেও এখনো কোনো কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে না ময়মনসিংহ জেলা ত্রাণ গুদাম কাম দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্যকেন্দ্রটি। ময়মনসিংহ নগরের আকুয়া জুবলী কোর্য়াটার এলাকায় তিনতলা এ ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে। ২০২১ সালের শেষ দিকে ভবনটির নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়।
ভবনটির নির্মাণ ব্যয় ১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। ভবন নির্মাণের পর সেখানে প্রয়োজনীয় আসবাব ও শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র লাগানো হয়েছে। তবে এসব আসবাবের ব্যয় জানা যায়নি।
ময়মনসিংহ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা এবং ময়মনসিংহ সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার সূত্রে জানা যায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর এ ভবনের নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করে। সারা দেশে মোট ৬৬টি ভবন হওয়ার কথা। তবে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে দেশের মোট ৩০টি জেলায় এই ভবন নির্মাণ শুরু হয়।
২০১৯ সালের ৭ ডিসেম্বর তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান ময়মনসিংহের ভবনটির নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। নির্ধারিত এক বছরের মধ্যে ভবন নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ হলেও ছোটখাটো কিছু কাজ বাকি থাকে। পরে সেসব কাজ শেষ হয়। ২০২১ সালের শেষ দিকে পুরোপুরি শেষ হয় নির্মাণকাজ। এরপর তিনতলা ভবনটিতে প্রয়োজন অনুযায়ী আসবাব, দরজা-জানালার পর্দা ও শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র লাগানো হয়েছে। ভবনের নিচতলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের একটি গুদাম এবং বাকি দুটি তলায় এ দপ্তরের কর্মকর্তাদের বসার কথা। তবে সেখানে গুদাম বা কার্যালয় চালু হয়নি।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ভবনটি নির্মাণ করা হয়। নির্মাণকাজ তদারক করেন ময়মনসিংহ সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুল হক। তিনি প্রথম আলোকে জানান, নির্ধারিত এক বছরের মধ্যে ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। তবে নির্ধারিত সময়েই বেশির ভাগ কাজ শেষ হয়। পরে ২০২১ লিখিতভাবে প্রকল্প পরিচালককে ভবনটির নির্মাণকাজ সমাপ্ত হওয়ার কথা জানানো হয়। ময়মনসিংহের এই ভবন নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৭৩ লাখ ২০ হাজার ৯৭৯ টাকা। এ ছাড়া ভবনের আসবাস, পর্দা, টেলিভিশন ও শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র লাগানো বাবাদও ব্যয় হয়েছে। তবে সে ব্যয়ের পরিসংখ্যান তাঁর জানা নেই।
গত মঙ্গলবার ফটকের সামনে তালা ঝোলানো দেখা যায়। ভবনের সীমানাপ্রাচীরের ভেতরে দেখা যায় কয়েকটি ছাগল। সীমানাপ্রাচীরের দেয়ালে কাপড় শুকাতে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, অন্তত তিন বছর ধরেই তাঁরা ভবনটির ফটকে তালা ঝোলানো দেখছেন।
ভবনটির পাহারার কাজে নিয়োজিত আছেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মচারী আবদুল জাব্বার। ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। ভেতরে যেতে চাইলে তিনি ফটক খুলে দিতে অস্বীকৃতি জানান। পরে আবদুল জাব্বার জানান, ভবনটির নির্মাণ শেষ হলেও চালু হয়নি গুদাম বা অফিস। তবে মাঝেমধ্যে ঢাকা থেকে ‘স্যাররা’ আসেন। আবদুল জাব্বার আরও জানান, ভেতরে দুটি কক্ষে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রসহ প্রয়োজনীয় সব আসবাব আরও দুই বছর আগেই বসানো হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা আরও জানান, ভবনটির নির্মাণকাজ যখন শুরু হয়, তখন সামনের সড়কটি বেহাল ছিল। দেড় বছর আগে সড়কটি সংস্কার করা হয়েছে। তারপরও কেন ভবনটিতে কার্যালয় চালু হচ্ছে না, সেটি তাঁদের কাছেও প্রশ্ন।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, তিনতলা ভবনটির প্রথম তলা গুদাম হিসেবে ব্যবহার করা হবে। এতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের ত্রাণসামগ্রী রাখা হবে। দ্বিতীয় তলা শুকনা খাবারের গুদাম ও নিয়ন্ত্রণকক্ষ হিসেবে ব্যবহার করা হবে। তৃতীয় তলা পরির্দশনকক্ষ ও রেস্টহাউস হিসেবে ব্যবহারের কথা রয়েছে।
ময়মনসিংহ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মুহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন বলেন, ‘ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ। আমরা মাঝেমধ্যে সেখানে যাই। গুদামের জন্য একজন ভান্ডাররক্ষক নিয়োগ করা হবে। সে নিয়োগ সম্পন্ন হওয়ার পর গুদাম চালু হবে।’