রিকশাচালক শিশু রাব্বীর পরিবারের পাশে দাঁড়াল গোয়ালন্দ বন্ধুসভা

আজ শনিবার দুপুরে শিশু রাব্বী ও তাঁর পরিবারকে নগদ পাঁচ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে
ছবি: প্রথম আলো

চতুর্থ শ্রেণি থেকে এ বছর পঞ্চম শ্রেণিতে উঠেছিল শিশু রাব্বী। কিছুদিন পঞ্চম শ্রেণির ক্লাসও করেছিল সে। কিন্তু এখন আর স্কুলে যেতে পারছে না রাব্বী। স্কুলের বই-খাতা ছেড়ে এখন সে পরিবারের দায়িত্ব বহন করছে। অসুস্থ বাবার চিকিৎসা আর সংসারের খরচ জোগাতে তাকে প্রতিদিন নামতে হয় বাবার পুরোনো রিকশা নিয়ে। এ নিয়ে গত ২৪ মার্চ প্রথম আলো অনলাইনে ‘সংসার চালাতে বই-খাতা ছেড়ে বাবার রিকশার হাতল ধরেছে শিশু রাব্বী’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

আরও পড়ুন

প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর প্রবাসী ইয়াকুব হোসেনসহ গোয়ালন্দ বন্ধুসভার অনেক সদস্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। সেই সুবাদে আজ শনিবার দুপুরে শিশু রাব্বী ও তাঁর পরিবারকে নগদ পাঁচ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। গোয়ালন্দ বাজারের প্রধান সড়ক সংলগ্ন বন্ধুসভার অস্থায়ী কার্যালয়ে শিশু রাব্বী, তার বাবা মিন্টু শেখ, মা জোসনা খাতুনের কাছে টাকা হস্তান্তর করা হয়। এ সময় প্রথম আলোর গোয়ালন্দ প্রতিনিধি এম রাশেদুল হক, বন্ধুসভার উপদেষ্টা ও গোয়ালন্দ বাজার ব্যবসায়ী পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিক মিয়া, বন্ধুসভার সভাপতি মো. লুৎফর রহমান, সাধারণ সম্পাদক শফিক মণ্ডল, ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক ফিরোজ আহম্মেদ, বন্ধু রাকিবুল হক, আবদুল আজিজ মুন্সী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানখানাপুর ইউনিয়নের ফকীর ডাঙ্গা গ্রামের মিন্টু শেখের ছেলে রাব্বী। মিন্টু শেখ অসুস্থতার কারণে এক মাসের বেশি সময় ধরে রিকশা চালাতে পারছেন না। এতে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির আয় বন্ধ হয়ে গেছে। পরিবারের পাঁচ সদস্যের খরচ, পাশাপাশি বাবার চিকিৎসার টাকা—সব মিলিয়ে বাধ্য হয়ে রাব্বী পড়াশোনা ছেড়ে রিকশা চালানো শুরু করেছে। নিজের শক্তি-সামর্থ্য অনুযায়ী প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কখনো বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যাত্রী বহন করছে। তবে বয়স কম দেখে অনেকে রাব্বীর রিকশায় উঠতে চান না।

রাব্বীর বড় বোন মিথিলা আক্তার স্থানীয় একটি স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে আর ছোট ভাই রিপন শেখ প্রথম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। ভাই-বোনের মতো রাব্বীও নিয়মিত স্কুলে যেত। কিন্তু দরিদ্র রিকশাচালক বাবা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ হওয়ায় আর রিকশা চালাতে পারছেন না। তাই বাধ্য হয়ে বাবার ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে বের হচ্ছে রাব্বী।

আজ বন্ধুসভার পক্ষ থেকে সহায়তা পেয়ে রাব্বীর বাবা মিন্টু শেখ বলেন, ‘তোমরা আমার ছেলেকে রাস্তায় দেখে নিজেরা সাহায্য করতে আসছ। আমি তোমাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। তোমাদের মতো আরও অন্যদের সাহায্য-সহযোগিতা পেলে চিকিৎসা করে আমি সুস্থ হয়ে চলতে পারতাম।’

বন্ধুসভার সভাপতি মো. লুৎফর রহমান বলেন, প্রথম আলো অনলাইনে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখে রাব্বীর বাবার চিকিৎসার জন্য নগদ পাঁচ হাজার টাকার আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে। বন্ধুসভা সব ভালো কাজের সঙ্গে আছে, থাকবে। আগামীতেও বন্ধুসভা রাব্বীর পরিবারের পাশে থাকার চেষ্টা করবে।