পাড়া শুরুর পরদিন বানেশ্বর হাটে এল মাত্র ১ ক্যারেট আম, দামও চড়া

রাজশাহীর বড় আমের বাজার বানেশ্বরে মাত্র এক ক্যারেট গুটি আম এসেছে। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা। বৃহস্পতিবার দুপুরেছবি: শফিকুল ইসলাম

রাজশাহীতে ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ অনুযায়ী গতকাল বুধবার থেকে গুটি আম পাড়া শুরু হয়েছে। কিন্তু জেলার আমের হাটখ্যাত পুঠিয়ার বানেশ্বর হাটে আম নেই। হাটে আসার আগেই বাগান থেকে আম বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা দুইটা পর্যন্ত মাত্র একজন চাষিকে গুটি আম নিয়ে আসতে দেখা গেছে। তফাজ্জল হোসেন নামের এক ফল ব্যবসায়ীর কাছে সেই আম বিক্রি করেন।

বানেশ্বর হাটে গিয়ে দেখা গেল, ফল ব্যবসায়ী তফাজ্জল হোসেন তরমুজ, আনারসের সঙ্গে এক ক্যারেট আম বিক্রির জন্য সাজিয়ে রেখেছেন। ক্যারেটভর্তি আমের মধ্যে কয়েকটি পেকেও গেছে। দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য গাছ পাকা পাখিতে খাওয়া একটি আম ক্যারেটের ওপরে সাজিয়ে রেখেছেন। অনেকে দাম জানতে চাইছেন, কেউ কেউ হাত দিয়ে দেখছেন। সাদিক ইসলাম নামের এক তরুণ আমের দাম জানতে চাইলে ব্যবসায়ী বললেন, ‘এক দাম ৮০ টাকা।’

ফল ব্যবসায়ী তফাজ্জল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার এক আমচাষির কাছ থেকে তিনি আমগুলো কিনেছেন। কেনা দাম বেশি। ৮০ টাকা করে বিক্রি করলে কিছুটা লাভ থাকবে। তিনি বলেন, এবার আমের ফলন কম। দাম একটু বেশিই যাবে। গত বছর গুটি আম শুরুর দিকে ২৫ থেকে ৩০ টাকা করে কিনেছেন। এবার মৌসুমের শুরুতে দ্বিগুণ দামে কিনতে হচ্ছে। আগামী ২০ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যে আমে বানেশ্বর হাট ভরে যাবে।

বানেশ্বর ইউনিয়নের মৌগাছি গ্রামে বেশ কয়েকটি বড় বড় আমবাগান আছে। এবার বাগানগুলোতে আমের ফলন কম হয়েছে। গত বছর যে পরিমাণ আম এসেছিল, এবার তার চেয়ে অর্ধেক কম বলে চাষিরা জানান। মৌগাছি গ্রামের আমচাষি শাহিন আলম বলেন, এবার আমের ফলন অর্ধেক হয়ে গেছে। গাছে মুকুল কম এসেছিল। পরে আম ঝরেও গেছে। তাঁর বাগানের আম ৮-১০ দিন পর পাড়তে পারবেন।

নগরের জিন্নাহ নগর এলাকায় সাত বিঘার আমবাগান আছে ‘রাজ চাঁপাই অ্যাগ্রো ফুড প্রডিউসার’ সংগঠনের সভাপতি আনোয়ারুল হকের। গতকাল তিনি ১ মণ আম বাগান থেকেই ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন। আজ বৃহস্পতিবার আম নামাননি। আনোয়ারুল হক প্রথম আলোকে বলেন, দু-চার দিন পর আম নামাবেন। আরেকটু পরিপক্ব হোক। সব গাছের আম এখনো পরিপক্ব হয়নি। বড় গাছের আম একটু আগে পরিপক্ব হয় বলে তিনি জানালেন।

গত রোববার রাজশাহী জেলার আম পাড়ার সময় নির্ধারণ করে দেয় জেলা প্রশাসন। সেদিন জেলার আম সংগ্রহ, পরিবহন, বিপণন ও বাজারজাত পর্যবেক্ষণ-সংক্রান্ত সভায় কৃষি কর্মকর্তা, আমচাষি, ব্যবসায়ী ও আম পরিবহনে নিয়োজিত সবার সঙ্গে আলোচনা করে আম নামানোর সময় নির্ধারণ করা হয়। ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ অনুযায়ী, ১৫ মে থেকে সব ধরনের গুটি আম নামাতে পারবেন চাষিরা। গত বছর আম পাড়ার শুরুর সময় ছিল ৪ মে। তার আগেরবার ছিল ১৩ মে থেকে। আবহাওয়ার কারণে এবার সময় পিছিয়েছে।

সূচি অনুযায়ী এবার ২৫ মে থেকে গোপালভোগ বা রানিপসন্দ; ৩০ মে থেকে লক্ষ্মণভোগ বা লখনা এবং হিমসাগর বা ক্ষীরশাপাত; ১০ জুন থেকে ল্যাংড়া ও ব্যানানা আম; ১৫ জুন থেকে আম্রপালি ও ফজলি, ৫ জুলাই থেকে বারি-৪ আম, ১০ জুলাই থেকে আশ্বিনা, ১৫ জুলাই থেকে গৌড়মতি ও ২০ আগস্ট থেকে ইলামতি আম নামানো যাবে। এ ছাড়া কাটিমন ও বারি-১১ আম সারা বছর সংগ্রহ করা যাবে।

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, এবার আবহাওয়ার কারণে আমের মুকুল আসতে দেরি হয়েছে। মুকুলও কম হয়েছে। আবার মার্চে বৃষ্টির কারণে মুকুল নষ্ট হয়েছে। পরে দীর্ঘ খরা গেছে। খরায় আম ঝরে পড়েছে। তবে এবার শিলাবৃষ্টি ও ঝড় না হওয়ায় যতটুকু আম ছিল, তা আছে। রাজশাহীতে ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। গত বছর ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমিতে আমবাগান ছিল। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে জেলায় এবার মোট ২ লাখ ৬০ হাজার ৩১৫ মেট্রিক টন আমের উৎপাদন হবে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মোছা. সাবিনা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, আম পাড়া কেবল শুরু হলো। এখনো পুরোদমে শুরু হয়নি। গুটির (নানা জাতের আম) আম নানা ধরনের। কোনোটি একটু আগে আসে, কোনোটি পরে। কোনোটার আকার বড়, কোনোটি আবার ছোট।