মুন্সিগঞ্জে ট্রলারডুবিতে নিখোঁজ শিশুর সন্ধান ৪ দিনেও পাওয়া যায়নি

ট্রলারডুবির আগে পিকনিকে গিয়ে তোলা শিশু নাভার শেষ ছবি
ছবি: সংগৃহীত

মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় বাল্কহেডের ধাক্কায় ট্রলারডুবির চার দিন পরও নাভা (৫) নামের নিখোঁজ শিশুটির সন্ধান পাওয়া যায়নি। শেষবারের মতো নাভার সন্ধানে ফায়ার সার্ভিস ও কোস্টগার্ডের পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগে ট্রলার নিয়ে সম্ভাব্য জায়গায় খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছেন শিশুটির স্বজনেরা।

নিখোঁজ নাভা মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার লতব্দি ইউনিয়নের কয়ড়াখোলা এলাকার সিঙ্গাপুরপ্রবাসী আরিফ হোসেনের মেয়ে। ঘটনার দিন মা সমাপ্তি বেগমের সঙ্গে পিকনিকে গিয়েছিল শিশু নাভা ও তার ভাই তুরান (৮)। গত সোমবার সকালে তুরানের ভাসমান লাশ উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।

নিখোঁজ শিশুটির দাদা নুরুল ইসলাম আজ বুধবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘তুরানকে পেয়েছি। জীবিত না পাই, অন্তত লাশ তো পেয়েছি, সেটাই আমাদের বড় সান্ত্বনা। নাভাকে প্রতিদিন খুঁজে যাচ্ছি। ট্রলার নিয়ে দুর্ঘটনাকবলিত এলাকার কয়েক কিলোমিটার এলাকায় খোঁজ করে যাচ্ছি। খালের ঝোপঝাড়েও খুঁজছি, কোথাও পাচ্ছি না।’ তিনি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, ‘জীবিত পাব না, আশাও করি না। অন্ততপক্ষে নাভার লাশটিও যদি পাই, তাহলে আমাদের মনে কিছুটা সান্ত্বনা থাকবে। তুরানের পাশে দাফন করতে পারব।’

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

ট্রলারডুবির ঘটনায় সন্তান নিখোঁজের খবরে রোববার দিবাগত রাত দুইটার দিকে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফেরেন তুরান ও নাভার বাবা আরিফ হোসেন। দুর্ঘটনায় দুই সন্তানকে হারিয়ে পাগলপ্রায় তিনি। আরিফ হোসেন বলেন, ‘প্রবাসে থাকা অবস্থায় ছেলেমেয়েকে দেখার জন্য, আদর করার জন্য ছটফট করতাম। যখন দেশে আসতাম তখন আনন্দে ভাসতাম। ছেলেমেয়েরও খুশির সীমা থাকত না। এখন আর আমার কেউ থাকল না। কেউ বাবা বলে ডাকব না। গলা জড়িয়ে ধরবে না। আমি আমার মেয়ের লাশটা চাই। শেষবারের মতো দেখতে চাই।’

শনিবার সকালে লতাব্দি ইউনিয়নের নারী-শিশুসহ ৪৬ ব্যক্তি ট্রলারে করে পদ্মা নদীতে ভ্রমণে যান। পিকনিক শেষে ট্রলারটি তালতলা-গৌরগঞ্জ খাল দিয়ে লতাব্দির দিকে যাচ্ছিল। রাত আটটার দিকে ট্রলারটি লৌহজংয়ের রসকাঠি এলাকায় পৌঁছালে একটি বাল্কহেড ধাক্কা দেয়। এতে ট্রলারটি তলিয়ে যায়। ঘটনার রাত থেকেই উদ্ধার অভিযান শুরু করে ডুবুরিরা। সোমবার বিকেল পর্যন্ত নয়জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। কেবল নাভা এখনো নিখোঁজ রয়েছে।

আরও পড়ুন

লৌহজং ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের নেতা কয়েছ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনার পর থেকেই নিখোঁজদের সন্ধানে কাজ করে যাচ্ছি। দুর্ঘটনায় নয়জনের লাশ উদ্ধার করেছি। এখনো নাভা নামের এক শিশু নিখোঁজ রয়েছে। এ কারণে আজও ফায়ার সার্ভিস ও কোস্টগার্ড নিখোঁজের সন্ধানে কাজ করে যাচ্ছে।’

ট্রলারডুবিতে হতাহতের ঘটনায় গত রোববার বিকেলে লৌহজং থানায় মামলা হয়েছে। মামলার বাদী ট্রলারডুবিতে সন্তানসহ পাঁচ স্বজন হারানো রুবেল শেখ নামের এক ব্যক্তি। এতে সিরাজদিখান উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জাহিদ শিকদার, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পাপ্পু চোকদার, বাল্কহেডের মালিক, চালকসহ সাতজনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার পর বাল্কহেডের চালকের এক সহকারীকে গ্রেপ্তার করেছে নৌ পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও মাওয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক ফোরকান মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, রোববার মামলা হওয়ার পর রাতে ওই বাল্কহেডের শ্রমিক নওগাঁ জেলার বাসিন্দা আবদুস সালাম (৫৮) নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সোমবার তাঁকে আদালতে তোলা হয়। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালত এক দিনের রিমান্ডের অনুমতি দিয়েছেন।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার আসামির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঘটনার দিন বাল্কহেডটি চালাচ্ছিলেন বিল্লাল হোসেন (৪৫) নামের এক ব্যক্তি। বাল্কহেডে নাঈম হোসেন (২৪) ও অজ্ঞাতনামা আরও একজন ছিলেন। বাল্কহেডটি সিরাজদিখানের তালতলা এলাকায় বালু নামিয়ে আবারও মানিকগঞ্জের দিকে বালু আনতে যাচ্ছিল।