পুলিশের পোশাক পরে গরু লুট, দিশাহারা দুই পরিবার
কক্সবাজারের রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের মধ্যম মেরংলোয়া গ্রামে গৃহবধূ আশরাফ জাহানের বাড়ি। বাড়ির পাশে খোলা জায়গায় রাখা হতো গৃহপালিত দুটি গরু। সঙ্গে একটি বাছুরও।
রোববার গভীর রাতে পুলিশের পোশাক পরা কয়েক ব্যক্তি বাছুরসহ গরু দুটি নিয়ে গেছে বলে এলাকার লোকজন অভিযোগ করছেন। একই সময় পাশের আরেকটি গ্রামের কৃষক নুর আহমদের বাড়ি থেকেও লুট করা হয় দুটি গরু। পাঁচটি গরু হারিয়ে দিশাহারা দুই পরিবার।
আশরাফ জাহানের স্বামী শফিউল আকবর বিদেশে থাকেন। স্বামীর পাঠানো টাকায় বছরখানেক আগে একটি গাভি কেনেন সন্তানদের দুধের চাহিদা মেটাতে। মাসখানেক আগে গাভিটি একটি বাছুর জন্ম দেয়। সম্প্রতি কেনেন আরও একটি গরু।
বাছুরসহ তিনটি গরু রাখার জন্য ঘরের পাশে খামার তৈরি করা হয় জানিয়ে আশরাফ জাহান বলেন, গতকাল গভীর রাতে কে বা কারা বাছুরসহ তাঁর তিনটি গরু লুট করে নিয়ে গেছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে তিনি গরুগুলো দেখতে পাননি। আজ সোমবার বিকেল পর্যন্ত গরুর সন্ধান পাননি তিনি। তিনটি গরুর দাম প্রায় দেড় লাখ টাকা।
আশরাফ জাহানের ভাই ও রামু প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আল মাহমুদ বলেন, তাঁর বড় বোন কষ্ট করে গরুগুলো লালন–পালন করছিলেন। গভীর রাতে পুলিশের পোশাক পরা একদল দুর্বৃত্ত গরুগুলো লুট করে বলে প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন। পোশাক পরা লোকগুলো এলাকায় ইয়াবা উদ্ধার অভিযানে নামেন বলে প্রচার করেন। গরু লুটের ঘটনায় থানায় অভিযোগের প্রস্তুতি চলছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও মেরংলোয়া গ্রামের বাসিন্দা নুরুল হাকিম বলেন, ভোরে তিনি নামাজ পড়তে মসজিদের দিকে যাচ্ছিলেন। তখন পুকুরের পাশে পুলিশের পোশাক পরা কয়েকজনকে গরু নিয়ে যেতে দেখেন। পরিচয় জানতে চাইলে উল্টো ধমক দিয়ে পোশাক পরা লোকজন তাঁকে বলেন, তাঁরা ইয়াবা উদ্ধার অভিযানে নেমেছেন। এ সময় একজন তাঁর দিকে বন্দুক উঁচিয়ে ধরে ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে নির্দেশ দেন। ভয়ে তিনি বাড়িতে চলে যান।
একই সময় পাশের চাকমারকুল গ্রামের কৃষক নুর আহমদের (৪৫) বাড়ি থেকেও আড়াই লাখ টাকা দামের দুটি গরু লুট করা হয়েছে। নুর আহমদ বলেন, কয়েক বছরের জমানো টাকায় তিনি গরু দুটি কিনে লালন–পালন করছিলেন সামনের কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্য। এর আগেই গরু দুটি নিয়ে গেল দুর্বৃত্তরা। ঘটনার পর থেকে তিনিও এলাকায় হন্যে হয়ে গরু খুঁজছেন। কিন্তু কোথাও সন্ধান পাচ্ছেন না। দুর্বৃত্তদের পরিচয় শনাক্ত করে থানায় মামলা করবেন তিনি।
স্থানীয় খামারি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমদ বলেন, প্রতিদিন উপজেলার কোথাও না কোথাও গরু চুরি অথবা লুটের ঘটনা ঘটছে। এতে উদ্বিগ্ন ক্ষুদ্র খামারি ও দরিদ্র কৃষকেরা।
স্থানীয় কৃষকেরা বলেন, সম্প্রতি রাতের বেলায় উপজেলার কলঘর থেকে পাঁচটি, খরুলিয়া বিন্যাপাড়া থেকে তিনটি, জোয়ারিয়ানালা থেকে সাতটি গরু চুরি ও লুটের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় কিছু ব্যক্তির সহযোগিতায় চকরিয়া এলাকার গরুচোর সিন্ডিকেট রামুতে এসে কৃষক ও খামারিদের গরু লুট করে নিয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আনোয়ারুল হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, গরু চুরির খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। কিন্তু দুর্বৃত্তদের গায়ে পুলিশের পোশাক পরা ছিল, তেমন কথা শোনা যায়নি। গরু চুরি কিংবা লুটের অভিযোগে আজ বিকেল পর্যন্ত কেউ থানায় অভিযোগ দেননি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, মিয়ানমারের চোরাই গরু নিয়ে এলাকায় অনেক সময় ঝামেলা বাধে। তখন গরু লুটের অভিযোগ ওঠে। গরু লুট কিংবা চুরির সময় ৯৯৯ নম্বরে কল দিয়ে যে কেউ পুলিশের সহযোগিতা নিতে পারেন।