ভাঙ্গায় ৪ ঘণ্টার ব্যবধানে তিন দুর্ঘটনা, বাবা-ছেলেসহ নিহত ৫

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় এই ট্রাকের চাপায় মোটরসাইকেল আরোহী তিনজন নিহত হয়েছেন। আজ দুপুরে উপজেলার হামিরদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে
ছবি: সংগৃহীত

কাশেম শেখ (৪০) মালয়েশিয়াপ্রবাসী। গত ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি দেশে আসেন। তাঁর দুই ছেলের মধ্যে মুরসালিন শেখ (৮) বড়। আজ শনিবার সকালে মুরসালিনকে ফরিদপুর শহরের একটি মাদ্রাসায় ভর্তি করাতে নিয়ে যাচ্ছিলেন। মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন কাশেম শেখের ছোট ভাই নাজমুল শেখ। পথে একটি ট্রাক পেছন দিক থেকে মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দিলে সড়কে ছিটকে পড়ে তিনজনই গুরুতর আহত হন।

তাঁদের ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হলে চিকিৎসক নাজমুল শেখকে মৃত ঘোষণা করেন। মুমূর্ষু অবস্থায় বাবা কাসেম শেখ ও তাঁর ছেলে মুরসালিনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

আজ বেলা ১১টার দিকে ভাঙ্গার হামিরদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তিরা সবাই গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বাটিকামারী ইউনিয়নের কহলদিয়া গ্রামের বাসিন্দা।

ঘটনাস্থল থেকে নিহত শিশু মুরসালিনের মামা আবু বক্কর এসব তথ্য জানিয়ে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এখন ভাঙ্গা হাইওয়ে থানায় আছি। আইনি প্রক্রিয়া শেষে লাশগুলো নিয়ে বাড়িতে যাব।’

ভাঙ্গা হাইওয়ে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল্লাহেল বাকী ঘটনাটি নিশ্চিত করে বলেন, মোটরসাইকেলকে চাপা দেওয়া ট্রাকটি আটক করেছেন তাঁরা। চালক পলাতক। দুর্ঘটনাকবলিত মোটরসাইকেল উদ্ধার করে থানায় এনে রাখা হয়েছে। লাশগুলো পরিবারের সদস্যদের হাতে বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় আজ চার ঘণ্টার ব্যবধানে পৃথক তিনটি সড়ক দুর্ঘটনায় মোট ৫ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে একটি দুর্ঘটনায় ছেলে, বাবা, চাচা নিহত হয়েছেন। অপর দুটি দুর্ঘটনায় এক কলেজছাত্রী ও এক ষাটোর্ধ্ব নারী নিহত হয়েছেন।

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় আজ চার ঘণ্টার ব্যবধানে পৃথক তিনটি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে একই পরিবারের ওই তিনজনসহ মোট পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে এক কলেজছাত্রী ও এক ষাটোর্ধ্ব নারী আছেন। ভাঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সকাল আটটার দিকে ভাঙ্গা পৌরসভার কৈডুবি সদরদী এলাকায় যাত্রীবাহী একটি ইজিবাইককে অজ্ঞাত একটি গাড়ি চাপা দিয়ে চলে যায়। এই দুর্ঘটনাও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে ঘটে। এ ঘটনায় ওই ইজিবাইকের চার যাত্রী আহত হন। আহত ব্যক্তিদের ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর একজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। গুরুতর আহত অপর তিনজনকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হলে সেখানে শাবান্তী আক্তার (১৭) নামের এক কলেহছাত্রীর মৃত্যু হয়।

নিহত শাবান্তী ভাঙ্গার ঘারুয়া ইউনিয়নের খামিনারবাগ গ্রামের শাহাদাত হোসেনের মেয়ে। সে ভাঙ্গা সরকারি কাজী মাহবুবউল্লাহ কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।

এদিকে আজ সকাল সাতটার দিকে ভাঙ্গার পুখুরিয়া-সদরপুর আঞ্চলিক সড়কে একটি মোটরসাইকেলের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে সড়কে পড়ে গিয়ে নিহত হন রিজিয়া বেগম (৬৫) নামের এক নারী। তিনি ভাঙ্গার মানিকদাহ ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের রজব আলী মিয়ার স্ত্রী। বাড়ির সামনে সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় এ দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি।

ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু সাইদ মো. খায়রুল আনাম বলেন, তিনটি দুর্ঘটনায় পৃথক পৃথক মামলার প্রস্তুতি চলছে।