যমজ তিন ভাইবোনকে নিজ কার্যালয়ে শুভেচ্ছা জানালেন জেলা প্রশাসক

দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার যমজ তিন ভাইবোনের হাতে ফুল তুলে দেন জেলা প্রশাসক। রোববার বিকেলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে
ছবি: প্রথম আলো।

এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলায় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী সাঁওতাল সম্প্রদায়ের যমজ তিন ভাইবোনকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ। রোববার বিকেলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এ আয়োজন করা হয়। এ সময় জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে তাদের কিছু আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়।

তিন ভাইবোন হলো লাসার সৌরভ মুরমু, মেরি মৌমিতা মুরমু ও মারথা জেনিভা মুরমু। তারা জোহানেশ মুরমু ও মা সোহাগিনী হাঁসদার সন্তান। তাদের বাড়ি উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামে। তিন ভাইবোন বিরামপুর পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাস করেছে।

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জোহানেশ মুরমু বেসরকারি একটি বেসরকারি সংস্থায় স্বল্প বেতনে চাকরি করেন। মা সোহাগিনী গৃহিণী। পরিবারে অভাব-অনটন আছে। দুই বোন জেনিভা ও মেরি মৌমিতা চায় চিকিৎসক হতে। একমাত্র ভাই লাসার সৌরভের ইচ্ছা প্রকৌশলী হওয়ার।

আজ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে লাসার সৌরভ বলে, ‘মাধ্যমিকে এ প্লাস পেয়েছি। এইচএসসিতে এ ফলাফল ধরে রাখার চেষ্টা করব। প্রকৌশলী হয়ে দেশের সেবা করব, বাবা-মায়ের পরিশ্রম সার্থক করব।’

দারিদ্র্যকে জয় করার আনন্দ দুই বোন মেরি মৌমিতা ও মারথা জেনিভার চোখেমুখেও। চিকিৎসক হয়ে এলাকার সাধারণ মানুষের সেবা করতে চায় তারা। তবে বাবার উপার্জনে পড়ালেখা ও অন্যান্য খরচ চালানো কষ্টকর। মৌমিতা বলে, ‘একটু সহযোগিতা পেলে আমরাও ভালো কিছু করতে পারব। মা-বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে পারব।’

জেলা প্রশাসকের সাক্ষাৎ পেয়ে খুশি জোহানেশ ও সোহাগিনী দম্পতি। জোহানেশ বলেন, একসঙ্গে তিন ছেলেমেয়ে পেয়েছেন। ছেলেমেয়েরা প্রত্যেকেই মেধাবী। এ পর্যন্ত তাদের পড়ালেখা শেখাতে কষ্ট করে যাচ্ছেন। মাঝেমধ্যে দুশ্চিন্তা হয়, ছেলেমেয়েদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারবেন তো! বাড়িতে বৃদ্ধ মা আছেন। মোট ছয়জনের সংসার। স্বল্প বেতনে কোনোমতে দিন কাটছে। ভিটামাটিটুকু ছাড়া আর কিছু নেই তাঁর। ছেলেমেয়েদের ভালোমন্দ খাওয়াতেও পারেন না। জেলা প্রশাসক খুশি হয়ে সহযোগিতা করেছেন। ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার খরচ বহন করতে চেয়েছেন।

আরও পড়ুন

জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ বলেন, গত শুক্রবার প্রথম আলোসহ বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ দেখে যমজ তিন ভাইবোনের সাফল্যের কথা জানতে পারেন। নিজের কার্যালয়ে ডেকে তাদের কথা শুনেছেন, শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। জেলা প্রশাসন থেকে কিছু সহায়তা দেওয়া হয়েছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতা ও ব্যবস্থাপনায় তারা যেন তাদের পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারে এ রকম একটি স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সদস্যদের পেছনে রেখে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। সবাইকে নিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হবে।