আওয়ামী লীগের কোন্দলের কারণেই উপজেলা পরিষদের সভায় হামলা 

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পারভেজ হোসেন সরকার ও যুবলীগের সাবেক নেতা মো. সারওয়ার হোসেনের বিরোধ দীর্ঘদিনের।

কুমিল্লা জেলার মানচিত্র

অভ্যন্তরীণ বিরোধ ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরোধিতার কারণে কুমিল্লার তিতাস উপজেলা পরিষদের মাসিক সাধারণ সভায় হামলা চালিয়েছেন যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক পারভেজ হোসেন সরকার ও তাঁর অনুসারীদের হটাতে পরিকল্পিতভাবে ওই ঘটনা ঘটান। 

গত বুধবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত তিতাস উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য পাওয়া গেছে। তিতাসে এ নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তিতাস উপজেলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বিরোধ অন্তত ২০ বছর ধরে। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক পারভেজ হোসেন সরকার ও কুমিল্লা উত্তর জেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সারওয়ার হোসেন ওরফে বাবুর মধ্যে বিরোধ রয়েছে। গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-১ (দাউদকান্দি ও তিতাস) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক মো. আবদুস সবুরের পক্ষে ছিলেন সারওয়ারসহ উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও জেলা পরিষদের সদস্য দেলোয়ার হোসেন। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক নাঈম হাসানের পক্ষে ছিলেন পারভেজ ও দুজন ইউপি চেয়ারম্যান। সংসদ নির্বাচনে নৌকার বিরোধিতা করায় সারওয়ার ও তাঁর অনুসারীরা ক্ষুব্ধ। তার ওপর সারওয়ার আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে চান। উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এ কে এম কামরুল হাসান ওরফে তুষার ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রত্যাশী।

উপজেলা প্রশাসনের অন্তত তিনজন কর্মকর্তা বলেন, ২৯ জানুয়ারি বেলা ১১টায় তিতাস উপজেলা কমপ্লেক্সের সম্মেলনকক্ষে পরিষদের মাসিক সাধারণ সভায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও সাতজন ইউপি চেয়ারম্যান অনুপস্থিত ছিলেন। তাঁরা নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য মো. আবদুস সবুরের অনুসারী। বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে সভা চলাকালে উত্তর জেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সারওয়ার হোসেন বাবু ও উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এ কে এম কামরুল হাসান ওরফে তুষারের নেতৃত্বে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ঢুকে পড়েন। এরপর চিত্কার-চেঁচামেচি, গালাগাল করেন। একপর্যায়ে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ আহমেদ ফকিরের জামা ছিঁড়ে ফেলেন। বলরামপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক নুরুন্নবী ও সাতানী ইউপির চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুল হক সরকারকে কিলঘুষি মারেন। পরে সভা পণ্ড হয়ে যায়। হামলার সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাজমুল হাসান মঞ্চে বসা ছিলেন। 

তিতাস উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পারভেজ হোসেন সরকার বলেন, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এই ঘটনা ঘটে। এর আগেও সারওয়ার মাসিক সভায় হামলা করেছিলেন। ওই ঘটনার বিচার না হওয়ায় তাঁরা এই আশকারা পেয়েছেন। সারওয়ার উপজেলা চেয়ারম্যান হতে চান। তুষার ভাইস চেয়ারম্যান হতে চান। এ জন্য শক্তি দেখাতে এই কাজ করেন। 

কুমিল্লা উত্তর জেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সারওয়ার হোসেন ওরফে বাবু বলেন, ‘যাঁরা সভা করেছেন, তাঁরা নৌকার বিপক্ষে ছিলেন। আমি উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করতে চাই।’ অতীতের হামলা নিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।’

ইউএনও মো. নাজমুল হাসান গত বুধবার বিকেলে তাঁর দপ্তরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাতটি অ্যাজেন্ডা নিয়ে সভা শুরু হয়। শুরুর ৪০ মিনিটের মধ্যে আকস্মিক এই ঘটনা। সভায় বর্তমান সংসদ সদস্যের অনুসারী আটজন অনুপস্থিত ছিলেন। তাঁদের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এ ঘটনা ঘটে। আমি আমার প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দিয়েছি। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে।’ 

জানতে চাইলে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য মো. আবদুস সবুর বুধবার রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা ঠিক হামলা না। অভ্যন্তরীণ গন্ডগোল হয়েছে। দুই পক্ষকে শান্ত থাকার জন্য বলা হয়েছে। সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ করব। সারওয়ার আমার লোক।’

এদিকে হামলার ঘটনায় সোমবার রাতে ইউএনও কার্যালয়ের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মো. নেছার উদ্দিন বাদী হয়ে তিনজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৩০-৪০ জনের নামে মামলা করেন। মামলার এজাহারনামীয় আসামিরা হলেন মো. সারওয়ার হোসেন বাবু, এ কে এম কামরুল হাসান তুষার ও একলারামপুর গ্রামের সেরাজ ভূঁইয়ার ছেলে আবদুর রহিম।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তিতাস থানার উপপরিদর্শক (এসআই) খালেকুজ্জামান বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। এ ঘটনায় তদন্তে তিতাস উপজেলার রামভদ্রা গ্রামের প্রয়াত দুলাল মিয়ার ছেলে ইয়াকুব আলী ওরফে ইফাতকে (২০) গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়। অপর আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।