তিন মাসে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১৫ শতাংশ ধান সংগ্রহ

  • জেলায় কৃষকের কাছ থেকে ২০ হাজার ৭২৮ মেট্রিক টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

  • চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ২৬ হাজার ৫৯২ মেট্রিক টন।

  • ২৮ এপ্রিল থেকে ধান এবং ১২ মে থেকে চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু। চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত।

যশোরে সরকারিভাবে গত ২৮ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে বোরো মৌসুমের ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান। ওই দিন থেকে যশোরের আট উপজেলায় শুরু হয় শুধু ধান সংগ্রহ। এর ১৫ দিন পর শুরু হয় চাল কেনা। গত তিন মাসে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৬৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ চাল কেনা হয়েছে। তবে ধান কেনা হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার ১৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ। চলতি মাসে এ সংগ্রহ অভিযান শেষ হবে।

জেলা খাদ্য বিভাগ সূত্র জানায়, জেলার আটটি উপজেলার মধ্যে সদর, চৌগাছা, ঝিকরগাছা, শার্শা ও কেশবপুর উপজেলায় কৃষি অ্যাপের মাধ্যমে এবং অভয়নগর, মনিরামপুর ও বাঘারপাড়া উপজেলায় ‘আগে আসলে আগে পাবেন’ ভিত্তিতে ধান কেনা হচ্ছে। এ সময়ে জেলার হাটবাজারে মোটা ধান ৯৯০ থেকে ১ হাজার টাকা এবং চিকন ধান ১ হাজার ১৮০ থেকে ১ হাজার ২৫০ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে। গুদামে ধানের নির্ধারিত দাম ১ হাজার ৮০ টাকা মণ। গুদামে ধান বিক্রি করা বেশ ঝামেলার। তা ছাড়া ধানের বাজার দর ও সরকার নির্ধারিত দাম প্রায় কাছাকাছি। চিকন ধানের দাম বেশি। গুদামে ধান পৌঁছে দিতে কৃষকের পরিবহন খরচ বেশি পড়ে, শ্রমও ব্যয় হয় বেশি। এ জন্য কৃষকেরা গুদামে ধান বিক্রি করতে চান না।

২ আগস্ট পর্যন্ত চাল কেনা হয়েছে ১৮ হাজার ৬০৭ মেট্রিক টন যা লক্ষ্যমাত্রার ৬৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয় সূত্র জানায়, কৃষকদের একটি করে কৃষি কার্ড আছে। ওই কার্ডে কৃষকের নাম, পরিচয় ও তাঁর চাষ করা জমির পরিমাণ উল্লেখ রয়েছে। জেলায় কার্ডধারী কৃষকের ব্যাংকে ১০ টাকার হিসাব রয়েছে। ধান কেনার পর কৃষকের ব্যাংক হিসাবে টাকা দেওয়া হয়। কৃষক ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা তোলেন।

যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার আগড়া গ্রামের কৃষক আবদুল মজিদ এবার ১০ বিঘা (৫২ শতকে বিঘা) জমিতে জিরা মিনিকেট এবং রড-৩ ধান চাষ করে ৩০০ মণ ধান পেয়েছেন। নিজেদের খাওয়ার ৫০ মণ ধান রেখে অবশিষ্ট ২৫০ মণ ধান তিনি ১ হাজার ২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, ‘এবার সরকারি দামের চেয়ে বাজারে ধানের দাম বেশি। সরকারি গুদামে ধান দেওয়া বেশ ঝামেলার। আর্দ্রতার কথা বলে অনেক সময় ধান ফেরত দেওয়া হয়। এতে সমস্যায় পড়তে হয়। কিন্তু স্থানীয় বাজারে এসব ঝামেলা নেই। নগদ দামও পাওয়া যায়। এ জন্য সব ধান স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে দিয়েছি।’

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তর সূত্র জানায়, চলতি বোরো সংগ্রহ মৌসুমে যশোর জেলায় কৃষকের কাছ থেকে ২০ হাজার ৭২৮ মেট্রিক টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া জেলায় ২৬ হাজার ৫৯২ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত ২৮ এপ্রিল থেকে ধান এবং গত ১২ মে থেকে চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে এবং তা ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চলবে। চাল সরবরাহের জন্য ২৫৭ জন চালকলের মালিক চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। চাল ৪০ টাকা ও ধান ২৭ টাকা কেজি দরে কেনা হচ্ছে।

২ আগস্ট পর্যন্ত জেলায় মাত্র ৩ হাজার ৭৮ মেট্রিক টন ধান কেনা হয়েছে, যা মোট লক্ষ্যমাত্রার ১৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ। আর চাল কেনা হয়েছে ১৮ হাজার ৬০৭ মেট্রিক টন। চাল কেনা হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার ৬৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ।

যশোর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নিত্যানন্দ কুন্ডু বলেন, কৃষক স্থানীয় বাজারে ধান বিক্রি করছেন। এতে তাঁর পরিবহন ব্যয়, শ্রম ও সময় কম লাগে। তবে চুক্তিবদ্ধ চালকলের মালিকেরা ঠিকমতো চাল সরবরাহ করেছেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শতভাগ চাল সংগৃহীত হবে।