তিন গুণের বেশি সম্পত্তি বেড়েছে, ঋণও আছে শামীম ওসমানের

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও এবারের নির্বাচনে নৌকাপ্রার্থী শামীম ওসমান
ছবি: প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের অস্থাবর সম্পত্তি ১০ বছরে ৩ গুণের বেশি বেড়েছে। এ সময়ে শামীম ওসমান সাড়ে ১২ গুণের বেশি কৃষিজমির মালিক হয়েছেন। পূর্বাচলে রাজউক ১০ কাঠার প্লট ও ২টি টয়োটা ল্যান্ডক্রুজার গাড়ির মালিক হয়েছেন। তাঁর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে তাঁর স্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তিও।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শামীম ওসমানের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দাখিল করা হলফনামার তথ্য-উপাত্ত ঘেঁটে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। হলফনামা থেকে জানা যায়, তাঁর টাকাপয়সা এত বাড়লেও ১০ বছর আগে বিদেশি এক বন্ধুর কাছ থেকে ঋণ নেওয়া ২৬ লাখ ৬৯ হাজার টাকা এখনো পরিশোধ করেননি তিনি।

আরও পড়ুন

শামীম ওসমানের ওই বন্ধুর নাম অনুপ কুমার। তাঁর কাছ থেকে সুদবিহীন ঋণ নিয়েছিলেন তিনি। ওই ঋণ এখনো পরিশোধ না করার প্রসঙ্গে শামীম ওসমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রয়োজন হয়নি বলে বন্ধু তাঁর কাছ থেকে টাকাটা নেননি। প্রয়োজন হলে বন্ধুর টাকা ফেরত দেবেন।

বিএ ও এলএলবি পাস করা শামীম ওসমান পেশার বিবরণীতে উল্লেখ করেছেন, তিনি জ্বালানি তেল আমদানি, পরিবহন ও সরবরাহ প্রতিষ্ঠান জেড এন করপোরেশন, পণ্য ও জ্বালানি তেল পরিবহনের প্রতিষ্ঠান জেড এন শিপিং লাইন্স লিমিটেড, মাইশা এন্টারপ্রাইজ, উইজডম নিটিং মিলস লিমিটেড, খান ব্রাদার্স ইনফোটেক লিমিটেডের সঙ্গে জড়িত।

অস্থাবর সম্পত্তি বেড়েছে

২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হলফনামায় শামীম ওসমান নগদ টাকা দেখান ১ কোটি ৬৯ লাখ ৪২ হাজার টাকা। বাড়ি-এপার্টমেন্ট-দোকানভাড়া, ব্যবসা ও ব্যাংকে আমানতের সুদ থেকে বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন ২৭ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। জেড এন করপোরেশনে অংশীদার ৬৩ লাখ ৭৪ হাজার টাকা ও উইজডম নিটিংয়ে আড়াই লাখ টাকার শেয়ার, ১০ তোলা সোনাসহ ২ কোটি ৪১ লাখ টাকার ৭৩ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পত্তি দেখানো হয়েছিল। ১০ বছরে তাঁর অস্থাবর সম্পত্তি তিন গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ কোটি ৯৮ লাখ ৬৩ হাজার টাকা।

আরও পড়ুন

এবার অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে শামীম ওসমান বছরে আয় দেখিয়েছেন ৭৯ লাখ ৭ হাজার টাকা। ১০ বছরে তাঁর আয় বেড়েছে পৌনে তিন গুণ। বাড়ি-এপার্টমেন্ট-দোকানসহ অন্যান্য ভাড়া ও ব্যবসা থেকে ৪১ লাখ ২৫ হাজার টাকা, শেয়ার সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানতের সুদ থেকে ১৫ লাখ ৭ হাজার টাকা। সংসদ সদস্য সম্মানি ও পারিতোষিক থেকে বছরে আয় করেন ২২ লাখ টাকা।

এ ছাড়া অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে শামীম ওসমানের নগদ টাকা ১৭ লাখ ৮৭ হাজার টাকা রয়েছে। ব্যাংকে জমা ৭৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা, জেড এন করপোরেশনের ১০ হাজার শেয়ারের মূল্য ১ কোটি টাকা, মাইশা এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডে ৯৫ হাজার শেয়ারের মূল্য ৯৫ লাখ টাকা, উইজডম নিটিং লিমিটেডে ১ হাজার শেয়ারের মূল্য আড়াই লাখ টাকা, জেড এন করপোরেশনের অংশীদার ১ কোটি ৭৭ লাখ ৫ হাজার টাকা, খান ব্রাদার্স ইনফোটেক লিমিটেডে আড়াই শ শেয়ার, যার মূল্য আড়াই লাখ টাকা।

জায়গাজমি বাড়লেও মূল্য কম

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শামীম ওসমান স্থাবর সম্পত্তি হিসেবে নিজের নামে ১০ শতাংশ কৃষিজমি, ১৬ শতাংশ জমির ওপর ৭৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা মূল্যের দোতলা আবাসিক বাড়ি, উত্তরায় দেড় কোটি টাকা মূল্যের ৯ কাঠা জমি দেখিয়েছিলেন। তাঁর নিজের নামে ১০ তোলা সোনা ছিল।

এবার স্থাবর সম্পত্তি হিসেবে শামীম ওসমান তাঁর নিজের নামে ১৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের ১২৩ শতাংশ কৃষিজমি, ১০ শতাংশ অকৃষিজমি, যার মূল্য ৫ হাজার ৭৫০ টাকা, ৩৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যের পূর্বাচল রাজউক নিউ টাউনে ১০ কাঠার প্লট ও ১৬ শতাংশ জমির ওপর ৭৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা মূল্যের দোতলা আবাসিক বাড়ি দেখানো হয়েছে। এ সময় পর্যন্ত তাঁর সোয়া ১২ গুণের বেশি কৃষিজমির মালিক হয়েছেন। তবে এসব স্থাবর সম্পত্তির মূল্য ২০১৪ সাল থেকে ২ শতাংশ কম দেখিয়েছেন।

স্থাবর সম্পত্তি অনেক বাড়লেও মূল্য কম দেখানোর বিষয়ে শামীম ওসমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘কৃষিজমির পরিমাণ বাড়লেও সেটির মূল্য কম। এ ছাড়া পূর্বাচলের প্লট সরকারিভাবে পেয়েছি।’

১০ বছর আগে শামীম ওসমানের নামে কোনো গাড়ি ছিল না। এবার নিজের নামে দুটি গাড়ি দেখিয়েছেন তিনবারের এই সংসদ সদস্য। একটি ৫৬ লাখ ৯৩ হাজার টাকা মূল্যের টয়োটা ল্যান্ডক্রুজার ভি-৮ গাড়ি, অপরটি ৮১ লাখ ৭৬ হাজার টাকা দামের টয়োটা ল্যান্ডক্রুজার। এ ছাড়া তাঁর একটি পিস্তল ও একটি রাইফেল দেখিয়েছেন। নিজের নামে ৩৮ তোলা সোনাসহ ২ কোটি ৪৯ লাখ টাকার এফডিআরসহ ৭ কোটি ৯৮ লাখ ৩ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পত্তি দেখিয়েছেন।
বেড়েছে ঋণ

এবারের হলফনামায় বিদেশি বন্ধুর কাছ থেকে ঋণসহ আওয়ামী লীগদলীয় এই প্রার্থী মোট ২২ কোটি ৬ লাখ টাকার ঋণ দেখিয়েছেন। এর মধ্যে ক্রস চেকে ১ কোটি টাকা ও ব্যাংক ঋণ দেখানো হয়েছে ৭৩ লাখ টাকা।

ব্যাংকঋণ প্রসঙ্গে শামীম ওসমান বলেন, ‘দুটি গাড়ি ব্যাংকের লোন নিয়ে কেনা হয়েছে। ব্যাংকের লোন নিয়ে জাহাজের ব্যবসা শুরু করি। সেই লোন পরিশোধ করলেও কোভিড-১৯ ও রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে শিপিং ব্যবসায় লোকসান হয়। ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে জাহাজের সঙ্গে বাড়িও বন্ধক রেখে ব্যাংক থেকে ২০ কোটি টাকা ঋণ করতে হয়েছে। এ কারণে ঋণের পরিমাণও বেড়েছে।’

মামলা থেকে মুক্তি

মামলার চাপও কমেছে শামীম ওসমানের। তাঁর বিরুদ্ধে অতীতে ফৌজদারি ১৭টি মামলা করা হয়েছিল। এর মধ্যে উচ্চ আদালত থেকে স্থগিত তিনটি মামলা, রাষ্ট্র কর্তৃক প্রত্যাহার চারটি, অব্যাহতি দুটি, খালাস তিনটি, উচ্চ আদালত থেকে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে অব্যাহতি একটি ও দুর্নীতির মামলায় খালাস দুটি এবং অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতি দুটি মামলা।

স্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তিও বেড়েছে

শামীম ওসমানের স্ত্রী সালমা ওসমান (লিপি) মহিলা সংস্থা নারায়ণগঞ্জ জেলার চেয়ারম্যান। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় তাঁর নামে ২৫ লাখ টাকার এফডিআরসহ ১ কোটি ৮৬ লাখ ১০ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পত্তি দেখানো হয়েছিল। স্ত্রীর নামে স্থাবর সম্পত্তি হিসেবে ৮১ হাজার টাকা মূল্যের ৯ শতাংশ কৃষিজমি ও ৪০ তোলা সোনা দেখানো হয়েছিল।

স্বামীর মতো সালমা ওসমানেরও অস্থাবর সম্পত্তি বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে তিন গুণ। বর্তমানে তাঁর নামে অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে নগদ ১০ হাজার ৩৪৪ টাকা আছে। আইএফআইসি ব্যাংকে জমা আছে ৩৯ লাখ ৯৪ হাজার টাকা।

এ ছাড়া সালমা ওসমানের নামে জেড এন শিপিং লাইন্স লিমিটেডের কোম্পানির ৪ হাজার ২০০ শেয়ারের মূল্য ৪২ লাখ টাকা, খান ব্রাদার্স ইনফোটেক লিমিটেডে আড়াই শ শেয়ারের মূল্য আড়াই লাখ টাকা এবং জেড এন করপোরেশনে অংশীদার হিসেবে ১৫ লাখ ৮৭ হাজার টাকা, আইএফআইসি ব্যাংকে দুটি হিসাব নম্বরে ৩ কোটি ৯৪ লাখ ১০ হাজার টাকা ও ৪৫ লাখ টাকার এফডিআর, সঞ্চয়পত্র ৪৫ লাখ টাকাসহ মোট ৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পত্তি দেখানো হয়েছে। তাঁদের ওপর নিভরর্শীল কন্যার নামে দেখানো হয়েছে সাড়ে ৪৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র। সালমা ওসমানের স্থাবর সম্পত্তির তালিকায় বলা হয়েছে, তিনি বাবার থেকে হেবাসূত্রে প্রাপ্ত ১৫ শতাংশ কৃষিজমির মালিক।