সিলেটের যে হাটে বিক্রি হয় সব টাটকা সবজি
সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টা—টানা ১৪ ঘণ্টা জমজমাট থাকে টুকেরবাজার। সিলেট শহরতলিতে অবস্থিত গ্রামীণ এই হাট শহরের মানুষের কাছে ‘লোকাল সবজির বাজার’ নামেই বেশি পরিচিত। আশপাশের গ্রামের চাষিরা এই হাটের বিক্রেতা। স্থানীয় লোকজনের পাশাপাশি শহরের মানুষজনই এখানকার তাজা শাকসবজির ক্রেতা। অনেক পাইকারি সবজি বিক্রেতাও এখান থেকে সবজি কেনেন।
গতকাল শনিবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে সরেজমিন দেখা গেছে, সিলেট সদর উপজেলার টুকেরবাজার এলাকায় হাটে কয়েক শ সবজি বিক্রেতা মেঝেতে বসে খেত থেকে তুলে আনা তাজা শাকসবজি বিক্রি করছেন। ক্রেতারা দরদাম করে সবজি কিনছেন। শিম, মুলা, বরবটি, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, গাজর, টমেটো, ওলকপি, পেঁয়াজ ও ধনেপাতা, ব্রুকলি, খিরা, আলু, কাঁচা মরিচ, লেবুসহ বিভিন্ন ধরনের শাক হাটে বিক্রি হচ্ছিল।
হাটের এক কোনায় টমেটো ও বাঁধাকপি বিক্রি করতে বসেছেন ষাটোর্ধ্ব নিজাম উদ্দিন। তাঁর বাড়ি পাশের ঘোপাল গ্রামে। সবজি বিক্রির ফাঁকে তাঁর সমবয়সী আরেকজনের সঙ্গে গল্প করছিলেন তিনি। ৩৫ বছর ধরে নিজের জমির সবজি বিক্রি করছেন জানিয়ে নিজাম বলেন, এখন প্রতিদিন গড়ে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকার বেচাকেনা হয়।
নিজাম উদ্দিন বলেন, তিনি এক একর জমিতে টমেটো এবং আধা একর জমিতে বাঁধাকপি চাষ করেছেন। শীতের মৌসুম শুরু হওয়ার পর সবজির দাম বাড়তি ছিল। তবে আগের তুলনায় এখন দাম কমেছে। প্রতি কেজি টমেটো ১৫ টাকা এবং ২ কেজি ওজনের একেকটি বাঁধাকপি ২০ থেকে ২৫ টাকায় এখন বিক্রি করেন।
শাহপুর দক্ষিণপাড়া গ্রামের আবদুর রহিম (৬২) লালশাক ও মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করছিলেন নিজাম উদ্দিনের ঠিক পাশে বসে। রহিম বলেন, তাঁর গ্রামের প্রায় সবাই সবজি চাষি। তাঁদের কাছ থেকে নানা জাতের সবজি কিনে তিনি হাটে বিক্রি করেন। প্রায় ১৫ বছর ধরে এই ব্যবসায় আছেন। সিলেট শহরের অনেক বাসিন্দা তাঁর সবজির নিয়মিত ক্রেতা। গড়ে তাঁর ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা আয় হয়।
একাধিক সবজি ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টুকেরবাজারের আশপাশের গ্রামের অধিকাংশ মানুষই সবজি চাষের সঙ্গে জড়িত। তাঁদের উৎপাদিত সবজিই টুকেরবাজার হাটে বিক্রি হয়। এর বাইরে সিলেট শহরের বিভিন্ন সবজিহাটের খুচরা ব্যবসায়ীরা এখান থেকে পাইকারি দরে কিনে নিয়ে যান। কান্দিগাঁও, মোল্লারগাঁও, তিলকপুর, ফুলকুচি, ঘোপাল ও কাজিরগাঁওসহ বিভিন্ন গ্রামের মানুষ সবজি উৎপাদন করে থাকেন বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
সবজি ব্যবসায়ী গফুর আলী (৬০) বলেন, এখানে বাসি শাকসবজি বিক্রি হয় না। একদিনের অবিক্রীত সবজি সাধারণত পরের দিন বিক্রি খুব কমই হয়। কারণ, এখানে তাজা সবজির অভাব নেই। তাই বাসি সবজি কোনো ব্যবসায়ী নিয়ে বসলেও ক্রেতারা তা কিনতে আগ্রহ দেখান না। ফলে ব্যবসায়ীরাও চাহিদা অনুযায়ী হাটে তাজা সবজি নিয়ে বসেন। সবজি শেষ হলে দ্রুত বাগান থেকে সবজি কিনে এনে ফের বিক্রি করতে বসেন।
এক ঘণ্টা টুকেরবাজারে অবস্থানকালে অন্তত ১২ জন সবজি ক্রেতার সঙ্গে কথা হয়। তাদের অধিকাংশই ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল কিংবা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে সিলেট শহর থেকে এখানে শাকসবজি কিনতে এসেছেন।
আহমেদুর রব (৪৬) নামের একজন বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, ‘আমার বাসা সিলেট নগরের সুবিদবাজার এলাকায়। অপেক্ষাকৃত সস্তায় তাজা শাকসবজি কিনতে এখানে আসি। শীতের মৌসুমে প্রায় নিয়মিত এখানে আসি। আমার অনেক সহকর্মী ও পরিচিতজনেরাও এখানে সবজি কিনতে আসেন।’